অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের দখলদারত্বকে অবৈধ ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) সাম্প্রতিক পরামর্শক মতামতকে সমর্থন করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চলমান দশম বিশেষ জরুরি অধিবেশনে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
ফিলিস্তিনের উত্থাপিত এই প্রস্তাবটিতে বাংলাদেশসহ ৫৩টি দেশ কো-স্পন্সর হয়।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে সমর্থন নেওয়া হয়। ১২৪টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ও ১৪টি দেশ বিপক্ষে এবং ৪৩টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল। কো-স্পন্সর হওয়ায় বাংলাদেশের ভোট ফিলিস্তিনের পক্ষে যায়।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের সাম্প্রতিক পরামর্শমূলক মতামতের আলোকে, রেজ্যুলেশনটিতে ইসরাইলকে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে বেআইনি উপস্থিতি বন্ধ করা এবং এর প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ ছাড়াও, প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরাইলের অন্যায় কাজের কারণে যেসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা পূরণে একটি আন্তর্জাতিক মেকানিজম প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
এই রেজ্যুলেশন বাস্তবায়নের ওপর প্রতিবেদন দিতে জাতিসংঘ মহাসচিবকে অনুরোধ জানানো হয়।
প্রস্তাবটিতে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষাবিষয়ক চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের আলোকে ইসরাইল কর্তৃক সংঘটিত নৃশংস অপরাধের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বানও জানানো হয়।
রেজ্যুলেশনটির মাধ্যমে আগামী এক বছরের মধ্যে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উপায় খুঁজে বের করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
মূলত, দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান বাস্তবায়নের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিরসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে রেজ্যুলেশনটি।
এই প্রস্তাবটি নিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বিশেষ জরুরি অধিবেশন চলাকালে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবদুল মুহিত বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে বক্তব্য দেন।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের এই সিদ্ধান্তকে ঐতিহাসিক বর্ণনা করে এটিকে স্বাগত জানান আব্দুল মুহিত। সব সদস্য রাষ্ট্রকে এটি মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।
গাজায় চলমান নৃশংসতা এবং হাজার হাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনির মৃত্যু নিয়ে বাংলাদেশের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আব্দুল মুহিত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত রেজ্যুলেশন ২৭২৮-এর আলোকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।
১৯৬৭ সালের পূর্বের সীমানা অনুযায়ী দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি অর্জনের একমাত্র পথ বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মুহিত।
এ ছাড়াও, অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরাইলের অবৈধ দখলদারত্ব এবং গণহত্যার মতো অপরাধের জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ভূমিকার প্রশংসা করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।
গাজায় গুরুতর মানবিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিব ও জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের প্রদত্ত বিবৃতিরও প্রশংসা করেন রাষ্ট্রদূত মুহিত।
