অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একদল শিক্ষার্থীর পিটুনিতে আহত সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু


ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা।
ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একদল শিক্ষার্থীর পিটুনিতে আহত সাবেক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা মারা গেছেন।

সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক সেলিমুজ্জামান সুজন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, “রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়। আমরা পরীক্ষা করে দেখি তিনি মৃত। ময়নাতদন্তের পর তাঁর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।”

শামীমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শামীম মোল্লাকে মারধর করেন একদল শিক্ষার্থী। পরে তাঁকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি এবং পরে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের এলাকায় থাকতেন শামীম মোল্লা। ১৫ জুলাই রাতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে উপাচার্যের বাসভবনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রলীগ ও বহিরাগতরা ওই হামলা চালিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা গেটের কাছে একটি দোকান থেকে শামীম মোল্লাকে আটক করা হয়। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সেখানে গিয়ে তাঁকে মারধর শুরু করে।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এক পর্যায়ে নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় তাঁকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়। এরপর প্রক্টরিয়াল টিমের তথ্যের ভিত্তিতে আশুলিয়া থানা পুলিশের একটি দল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কার্যালয়ে আসে।

এদিকে ১৫ জুলাই রাতে উপাচার্যের বাসভবনে হামলার বিষয়ে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল টিম শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

পরে আগের দায়ের করা মামলায় তাঁকে আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়।

শামীম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি সাভারের আশুলিয়া ইউনিয়নের কাঠগড়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।

শামীম আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদে বিক্ষোভ

এদিকে শামীম আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ করেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মহুয়া মঞ্চ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘ক্যাম্পাসে খুন কেন? প্রশাসন জবাব চাই’, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা মানি না, মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম বক্তব্য দেন।

তিনি বলেন, “একটি গোষ্ঠী খুবই পরিকল্পিতভাবে মব জাস্টিসের মাধ্যমে শামীম মোল্লাকে প্রহার (মারধর) করে এবং পরবর্তী সময়ে পুলিশের হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়।”

তিনি এই ঘটনার ভিডিও, ছবি এবং সিসিটিভি ফুটেজসহ যত প্রমাণ আছে, সবকিছুকে আমলে নিয়ে প্রকৃত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বাদী হয়ে মামলা করার দাবি জানান।

এর আগে বুধবার রাত ২টার দিকে শামীম আহমেদের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ উল্লেখ করে বিক্ষোভ করেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসানের বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মন্তব্য

মব জাস্টিসের বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, “আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। কেউ অন্যায় করলে তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করুন, অন্যথায় নয়।”

বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ডিএমপির বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

XS
SM
MD
LG