ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকায় রাস্তায় লাখ-লাখ মানুষের বিজয় মিছিল নামে।
এসব বিজয় মিছিল থেকে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমন্ডি ৩/এ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়, দলের সম্পাদকমণ্ডলীর নেতাদের কার্যালয় এবং তেজগাঁও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। শুধু তাই নয়, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, গণভবন, সুধাসদনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
নেতাকর্মীবিহীন এসব পোড়া ভবন এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে; যা ভাসমান মাদকসেবী ও অন্য অরাজনৈতিক সংগঠন দখলে নিয়েছে। আবার কোনটি তালাবদ্ধ রয়েছে।
কেন্দ্রীয় কার্যালয়
ঢাকার গুলিস্তান এলাকায় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ১০ তলাবিশিষ্ট একটি ভবনে ছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ২০১৮ সালের ২৩ জুন এই ভবনটি উদ্বোধন করেন দলের সভাপতি ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওই সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, দশ কোটি টাকা ব্যয়ে আট কাঠা জমির ওপর নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এই ভবনটিই এখন থেকে আওয়ামী লীগের স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
কার্যালয়ের জায়গাটি ৯৯ বছরের জন্য সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
২০১৮-২০২২ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের এই কার্যালয়ে সংবাদ সংগ্রহের কাজে বিভিন্ন সময় গিয়ে এই প্রতিবেদক দেখেছেন, ১০ তলা এই ভবনের নবম তলায় ছিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর অফিস আর অষ্টম তলায় সাধারণ সম্পাদকের। টপ ফ্লোরে অর্থাৎ দশম তলা সব সময় তালাবদ্ধ থাকত। যদিও ভবনটি উদ্বোধনের সময় বলা হয়েছিল দশম তলা ডরমিটরি হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
সপ্তম তলা আওয়ামী লীগের দপ্তর হিসেবে ব্যবহার করা হতো। আর ষষ্ঠ ও পঞ্চম তলা আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন যুবলীগ ও মহিলা লীগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
তৃতীয় তলা থেকে পরিচালিত হতো আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের কার্যক্রম।
এ ছাড়া দ্বিতীয় তলা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের জন্য বরাদ্দ ছিল। তবে সেটি অধিকাংশ সময় আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলন কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
নিচতলায় ছিল আগত নেতাকর্মীদের অভ্যর্থনা কক্ষ। আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিল দলের প্রকাশনা দপ্তর।
আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনের অংশের দেয়ালের একপাশে স্টিলের বড় অক্ষরে লেখা ছিল—‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’। তার পাশে দলীয় প্রতীক নৌকা। তার নিচে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’। উপরের অংশ দুটি ম্যুরালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ, ৭ মার্চের ভাষণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দৃশ্য। আর ভবনের নিচে বাম পাশে ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি।
৩০ আগস্ট বেলা ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তখনও ভবনটির ভেতর থেকে বিভিন্ন ধরনের মালপত্র খুলে নিয়ে যাচ্ছে কয়েকজন যুবক ও মধ্যবয়স্ক দুই ব্যক্তি।
হাতুড়ি দিয়ে খোলা হচ্ছে লোহা, স্টেইনলেস স্টিল। কার্যালয়টির বিভিন্ন ফ্লোরের কক্ষে থাকা স্টিলের আলমারি, দরজাসহ অন্যান্য মালপত্র নিয়ে যেতে দেখা যায়।
পাঁচজন যুবককে হাতুড়ি দিয়ে কার্যালয়ের নিচতলার রড খুলতে দেখা যায়। তাদের পরিচয় জানতে চাইলে একজন নিজেকে ছাত্র বলে পরিচয় দেয়। কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র—জানতে চাইলে পালিয়ে যায় ওই যুবক। বাকি চারজনের পরিচয় জানতে চাইলে পোড়া কাঠ খুঁজতে এসেছেন বলে কার্যালয়ের ভেতরের দিকে চলে যায়।
ভবনটির নিচতলায় দেখা যায় আগুনে পোড়া ছাই, ভাঙা কাঁচ, পোড়া কাঠ ও পানি। সবকিছু মিলিয়ে স্যাঁতসেঁতে অবস্থা হয়ে আছে। এর মধ্যে ভাঙা-পোড়া বিভিন্ন জিনিসপত্র বস্তায় ভরতে দেখা যায় পথশিশুদের।
দ্বিতীয় তলায় ফ্লোরে পানির সঙ্গে মিশে আছে আগুনে পোড়া কাগজপত্র ও বিভিন্ন আসবাবের অংশবিশেষ। বিভিন্ন মাদকের বোতল দেখা গেছে একই অবস্থায় তৃতীয় তলায়। আগুনে পুড়ে যাওয়া কাগজপত্র এবং ভাঙা কাচ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।
এভাবে প্রতিটি ফ্লোরে আগুনে পোড়া কাগজপত্র ও ভাঙা কাচ এবং পানি দেখা গেছে। তবে এসব ফ্লোরের মালপত্রের পাশাপাশি কক্ষের দরজা এবং জানালার গ্রিলের পাশাপাশি অফিসের নিচের বড় কাঠের দরজাটিও খুলে নিয়ে গেছে লুটপাটকারীরা।
ভবনটির সামনের অংশের স্টিলের অক্ষরে লেখা ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ ও জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালও নাই হয়ে গেছে। তবে ভাঙা অবস্থায় দলীয় প্রতীক নৌকা ঝুলতে দেখা গেছে। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নামফলক।
দলীয় নেতাকর্মীশূন্য আওয়ামী লীগের স্থায়ী কার্যালয়টি এখন অনেকটা পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে; যা এখন ভাসমান মাদকসেবী ও পথশিশুদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে।
কার্যালয়ের আশপাশের দোকানিরা বলছেন, ৫ আগস্ট বেলা ১২টা পর্যন্ত নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সরগরম ছিল আওয়ামী লীগের এই কার্যালয়। বেলা ১টায় পরিস্থিতি অনুমান করতে পেরে কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে চলে যায় নেতাকর্মীরা।
এরপর দুর্বৃত্তরা তিন দিক থেকে কার্যালয়ে আগুন দেয়। এর পরের দু’দিনে কার্যালয়ের ভেতর-বাইরের মালপত্র ব্যাপক লুটপাট হয়। এ সময় যেহেতু দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ ছিল, তাই কেউ কাউকে কিছু বলেনি। যে যেভাবে পেরেছে লুটপাট করেছে।
শুধু তাই নয়, এখনও প্রতিদিন অনেকে এসে ছোটখাটো লোহার জিনিস খুলে নিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের এই কার্যালয় থেকে। আর রাত হলে সেখানে ভিড় জমায় পথশিশু ও ভাসমান মাদকসেবীরা।
আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনের সড়কে ভ্যানে চা বিক্রেতা আলাউদ্দিন ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “গত ৮ বছর ধরে এখানে আমি চা বিক্রি করি। এই দীর্ঘ সময়ে কখনও নেতাকর্মীশূন্য দেখিনি আওয়ামী লীগের অফিস। রাত-দিন সব এখানে বিভিন্ন বয়সের নেতাকর্মী থাকত। আর যে কোনও প্রোগ্রাম থাকলে তো এখানে দিনরাত আনন্দ-উৎসব চলত।”
তিনি আরও বলেন, “ওবায়দুল কাদের, বিপ্লব বড়ুয়াসহ সিনিয়র কয়েকজন নেতা প্রায়ই এই অফিসে আসতেন। আর মহানগরের নেতারা তো সব এখানে থাকতেন। ৫ আগস্ট সকালেও তারা এখানে মিছিল করেছে। দুপুর পর্যন্ত নেতারা ছিল। এরপর থেকে নেতাকর্মীর উপস্থিতি কমতে থাকে। এক পর্যায়ে অফিসের নিচে তালা মেরে সবাই চলে যায়।”
ধানমন্ডি আ.লীগ সভাপতি ও দলের নেতাদের অফিস ‘ট্রিপল এস’-এর দখলে
ধানমন্ডি ৩/এ-র একটি ভবন আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তার পাশে আরও দুটি ভবনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকমণ্ডলীর নেতারা ও তাদের উপ-কমিটির সদস্যরা বসতেন।
৩০ আগস্ট বেলা ১টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তিনটি ভবনই আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। ভবন তিনটি বর্তমানে ‘ট্রিপল এস’ নামে একটি সংগঠনের দখলে রয়েছে। সেখান থেকে সংগঠনটিকে বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত ৩ তলা ভবনের প্রায় সবকিছু পুড়ে গেছে। অবশিষ্ট বলতে কিছুই নেই।
ভবনটির নিচ থেকে তৃতীয় তলা, প্রতিটি ফ্লোরে দেখা গেছে আগুন নেভানোর জন্য ব্যবহৃত পানির অনেকটা এখনও জমে আছে। তার মধ্যে কাগজপত্রের পোড়া ছাই, ভাঙা কাঁচ এবং পানি—এই তিন মিলে কাদা হয়ে আছে।
এই ভবনের প্রবেশমুখে ইস্পাতের তৈরি গেটটি ভেঙে গুঁড়িয়ে ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনভাবে ধ্বংস করা হয়েছে দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয় ছিল।
সরেজমিন দেখা গেছে, এই ভবনগুলো অধিকাংশ ফ্লোরের দরজা ও জানালার কাঁচ ভেঙে, গ্রিল খুলে নিয়ে গেছে লুটপাটকারীরা।
আর ভেতরের ওয়াশরুম ও রান্নাঘরের আসবাবপত্র ভেঙে ফেলা হয়েছে।
আগুনে পোড়া ভবনগুলোর কয়েকটি কক্ষ পরিষ্কার করে সেখানে ত্রাণের বিভিন্ন জিনিসপত্র রেখেছে ‘স্টুডেন্ট সিকিউরিটি সার্ভিস’ (ট্রিপল এস) নামের একটি সংগঠন।
ট্রিপল এস সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন অ্যাডভোকেট নাদিম। ৩০ আগস্ট দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ের ভেতরে তার সঙ্গে কথা হয় ভয়েস অফ আমেরিকার।
তিনি দাবি করেন, “৫ আগস্ট বেলা ৩টা পর্যন্ত এখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিল। শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর তারা...পালিয়ে গেছে।”
নাদিম বলেন, “এরপর এই তিনটি ভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে। ওই দিন সন্ধ্যা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আমরা এখানে অবস্থান করছি, পাহারা দিচ্ছি। কয়েকটি রুম পরিষ্কার করে ত্রাণসামগ্রী রেখেছি।”
“এখানে আসলে কারা কারা আগুন দিয়েছে তা বোঝা মুশকিল। কারণ এখানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট ছিল। আমাদের টিমের একজন সেই রকম একটি ডকুমেন্ট পেয়েছে। যেখানে দলের কোন নেতাকে কী আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে তার তালিকা ছিল” বলে উল্লেখ করেন নাদিম।
২০০০ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সংক্রান্ত সংবাদ সংগ্রহে যুক্ত থাকা একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের সঙ্গে কথা হয় ভয়েস অফ আমেরিকার।
নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে পরিচয় গোপন রেখে তিনি জানান, “২০০২ সাল থেকে ৩/এ ভবনটি আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রথমে এটি ভাড়া কার্যালয় ছিল। পরে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে ভবনটি দলের নামে ক্রয় করে নেওয়া হয়।”
পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভয়েস অফ আমেরিকার এই প্রতিবেদকের নিয়মিত যাতায়াত ছিল আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে।
তখন দেখা গিয়েছিল, তিন তলাবিশিষ্ট এই ভবনের নিচতলার একটি কক্ষ সংবাদ সম্মেলনের জন্য ব্যবহার করা হতো। আরেকটি কক্ষ ব্যবহার করতেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও অন্য নেতারা। আর ছোট একটি রুম ব্যবহার করতেন দলের দপ্তর ও উপ-দপ্তর সম্পাদক। দ্বিতীয় তলা ব্যবহার হতো দলের মুখপাত্র উত্তরণ পত্রিকার অফিস হিসেবে।
এ ছাড়া তৃতীয় তলা আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগের পতনের দিন অর্থাৎ ৫ আগস্ট বেলা ২টা পর্যন্ত এই কার্যালয়ে ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম মহাসচিব বাহাউদ্দিন নাছিমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
আর ৪ আগস্ট এই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা।
আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ের পাশে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর নেতাদের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত চার তলাবিশিষ্ট দুটি ভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে।
একসঙ্গে লাগোয়া এই ভবন দুটির নিচতলায় ছিল আওয়ামী লীগ দলীয় প্রচারসামগ্রী বিক্রয়কেন্দ্র। ভবন দুটি আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের নামে ক্রয় করা হয়ে বলে তৎকালীন সময়ে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।
কঙ্কালসার ঢাকা জেলা আ.লীগের কার্যালয়
২০২৩ সালের শেষের দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় অবস্থিত ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্মিত কার্যালয় উদ্বোধন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দ্বিতলবিশিষ্ট এই কার্যালয় থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা হতো।
দ্বিতল এই ভবনের নিচতলার একটি অংশ ব্যবহার করত ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ, আরেকটি অংশ ব্যবহার করত ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ। আর দ্বিতীয় তলায় ছিল অডিটোরিয়াম।
সেখানে আওয়ামী লীগের দিবসভিত্তিক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হতো। এসব সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে থাকতেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ ছাড়া সর্বশেষ নির্বাচনের সময় এই কার্যালয়ে নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিং করতেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
৩১ আগস্ট সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, স্টিলের অবকাঠামো এবং কাচ দিয়ে নির্মিত আওয়ামী লীগের এই কার্যালয়টিতে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। আর ভেতরের মালপত্র লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বর্তমানে শুধু স্টিলের অবকাঠামোটি কঙ্কালসার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর বাইরের গেট তালাবদ্ধ রয়েছে।
আ.লীগ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, তবে সময় লাগবে
আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থার জন্য তাদের কৃতকর্মই দায়ী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন রয়েছে, তাদের সুবিধাভোগী রয়েছে। এখন তারা যদি পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিকে নেতৃত্বে নিয়ে আসে তাহলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “আওয়ামী লীগের আজকের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তাদের অরাজকতার কারণে। তারা একটা অপরাধের সাম্রাজ্য তৈরি করেছিল। বিভিন্নভাবে মানুষকে নির্যাতন-নিপীড়ন করেছে, খুন, গুম করেছে। তারা পুরো দেশকে কারাগারে পরিণত করেছিল। তারা মানবতাবিরোধী ও ফৌজদারি দুই ধরনের অপরাধ করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “এর প্রেক্ষিতে মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া ও প্রতিশোধের মনোভাব তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। কারণ মানুষ তো অতিমানব না। তবে মানুষ যেটা করেছে সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না, এটা হওয়া উচিত ছিল না।”
“ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা তা নির্ভর করেছে তারা কী করবে, তার ওপর। তারা যদি পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব সামনে নিয়ে আসে, আবার সেটা তাদের দলে আছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে তাদের প্রচুর সমর্থক ও সুবিধাভোগী রয়েছে। প্রচুর সময় লাগবে হয়তো, কিন্তু ঘুরে দাঁড়াতে পারবে আওয়ামী লীগ।”