পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের পর বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে দেশে ফিরছে বাংলাদেশ দল। তবে দলের সঙ্গে দেশে না ফিরে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
ক্রিকেটারদের দেশে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
বিসিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ক্রিকেটারদের একাংশ রাত ১১টায় দেশে পৌঁছাবে, অন্য অংশ আসবে রাত ২টার দিকে।
সাকিবের ঘনিষ্ঠ সূত্র নিশ্চিত করেছে, পরিবারের কাছে ফিরতে যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন তিনি। তবে আসন্ন ভারত সিরিজে তাঁকে দলে রাখা হলে সেখান থেকেই ভারত সফরে যাবেন তিনি।
দুটি টেস্ট ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে চলতি মাসেই ভারত সফর করবে বাংলাদেশ। তাই দেশে ফিরলেও বেশি দিন বিশ্রাম পাচ্ছেন না ক্রিকেটাররা।
আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি অনুশীলন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। টেস্ট দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে ৮ সেপ্টেম্বর থেকে অনুশীলন শুরু হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ১৯ সেপ্টেম্বর চেন্নাই টেস্ট দিয়ে ভারত সিরিজ শুরু করবে বাংলাদেশ। ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে কানপুরে হবে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটিটি। এরপর ৬, ৯ ও ১২ অক্টোবর যথাক্রমে গোয়ালিওর, দিল্লি ও হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত হবে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।
সাকিবের বিরুদ্ধে মামলা ও ক্রিকেট থেকে সরাতে আইনি নোটিশ
উল্লেখ্য, পোশাকশ্রমিক রুবেল হত্যা মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের ও সাকিব আল হাসানসহ ১৫৬ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা করা হয়।
২২ অগাস্ট ঢাকা মহানগর পুলিশের আদাবর থানায় করা মামলায় আরও ৪০০-৫০০ জনকে অজ্ঞাত অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এ সময় দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে পাকিস্তানে ছিলেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এরপর তাঁকে ক্রিকেট থেকে সরিয়ে দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনতে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন এক আইনজীবী।
মামলার আইনি কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে সাকিবকে দেশে ফেরাতে ২৪ অগাস্ট বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সজীব মাহমুদ আলম।
নোটিশে বলা হয়, যেহেতু সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে, তাই আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী তিনি জাতীয় ক্রিকেট দলে থাকতে পারবেন না। তাঁকে অবিলম্বে ক্রিকেট দল থেকে সরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন।
এ বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন সাকিব। এরপর জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ক্রিকেটও খেলছিলেন তিনি।
তবে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। এর ফলে সংসদ সদস্য পদ হারান সাকিব।
সাকিবের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে মুশফিক ও মুমিনুলের প্রতিক্রিয়া
২৬ অগাস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের টেস্ট দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সাকিবের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদ জানিয়ে এক পোস্টে লিখেছেন, “সাকিবকে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে সর্বাধিক উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়ার জন্য অভিনন্দন। আমি অনেকবার বলেছি এবং আবার বলছি যে সাকিবের মতো একজন চ্যাম্পিয়নের সঙ্গে খেলতে পেরে আমি গর্বিত।”
তিনি আরও লিখেছেন, “একজন টিমমেট এবং ভাই হিসেবে, আমি সাকিবের কঠিন সময়গুলোর সঙ্গী এবং আমি তার বিরুদ্ধে তোলা মিথ্যা অভিযোগের সমর্থন করি না; কারণ, আমি জানি সে কখনোই অমানবিক কাজে লিপ্ত হবে না। আমরা সব সময় তোমার পাশে আছি, বন্ধু।”
এ ছাড়া, বাংলাদেশের টেস্ট দলের আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুমিনুল হকও ২৫ অগাস্ট সাকিবকে সমর্থন জানিয়ে নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছেন, “প্রায় ১৮ বছর দেশের ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করছেন সাকিব আল হাসান। দেশের ক্রিকেটে তাঁর হাত ধরে এসেছে কত জয়! সেই মানুষটা এখন মিথ্যা মামলার আসামি!”
মুমিনুল আরও লিখেছেন, “গার্মেন্টস কর্মী হত্যার দায়ে অভিযুক্ত সাকিব ভাই তখন কানাডায় খেলছিলেন। দেশেও ছিলেন না লম্বা সময়। সাকিব ভাইয়ের নামে এমন মামলা অপ্রত্যাশিত। এমন ঘটনা দেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে। যে ছাত্র-জনতার রক্তে নতুন বাংলাদেশ দেখলাম, সেই বাংলাদেশে প্রশ্নবিদ্ধ মামলা করে হয়রানি অপ্রত্যাশিত। আমরা চাই নতুন বাংলাদেশে সবাই ন্যায়বিচার পাবে। ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের প্রতি সব সময়ই সমর্থন ছিল, আছে এবং থাকবে। সংকট কাটিয়ে নিশ্চয়ই ভক্তদের ভালোবাসায় আগের মতোই সিক্ত হবে সাকিব ভাই।"