ইসরায়েল রবিবার জানিয়েছে, তারা গাজায় ছয়জন জিম্মির মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। উদ্ধারকৃতদের মৃতদেহের মধ্যে একজন বহুল পরিচিত ইসরায়েলি-আমেরিকান যুবকও রয়েছেন। তার মুক্তির বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করতে তার বাবা-মা বিশ্ব নেতাদের সাথে দেখা করেছিলেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের বাহিনী পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগেই ছয়জন নিহত হয়। তাদের মৃতদেহ পুনরুদ্ধারের পর প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গণ বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়।
দশ মাস ধরে চলা যুদ্ধ অবসানে হামাসের সঙ্গে চুক্তি করেতাদের জীবিত ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য অনেক ইসরায়েলি তাকে দায়ী মনে করে।এরকম একটি চুক্তি করার লক্ষ্যে দরকষাকষি মাসের পর মাস ধরে চলছে।
নেতানিয়াহু বলেন, “ঠান্ডা মাথায়’’ জিম্মিদের হত্যার জন্য হামাসকে জবাবদিহি করতে হবে। তিনি স্থগিত হওয়া আলোচনা নিয়ে হামাসকে দোষারোপ করে বলেন, “যারা জিম্মিদের হত্যা করে তারা আসলে চুক্তি চায় না।”
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার সময় হামাস ২৩-বছর বয়স্ক হার্শ গোল্ডবার্গ-পোলিন এবং অন্য চার জিম্মিকে দক্ষিণ ইসরায়েলের একটি সংগীত উৎসব থেকে আটক করে জিম্মি হিসেবে রাখে।
জো বাইডেনের প্রতিক্রিয়া
গোল্ডবার্গ-পোলিন ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলের বাসিন্দা। জীবিত থাকলেও গ্রেনেডের আঘাতে তার বাম হাতের কিছু অংশ হারিয়েছেন বলে এপ্রিলে হামাসের জারি করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়। এরপরই জিম্মিদের মুক্তির জন্য সরকারকে আরও বেশি কিছু করার আহ্বান জানিয়ে ইসরায়েলে নতুন করে বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যার সাথে গোল্ডবার্গ-পোলিনের বাবা-মার অতীতে দেখা হয়েছে, বলেন যে তিনি “মর্মাহত এবং বিক্ষুব্ধ।”
“এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অতটাই ঘৃণ্য,” তিনি বলেন। “হামাস নেতারা তাদের অপরাধের জন্য মূল্য দেবে। এবং আমরা বাকি জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য দিনরাত কাজ করে যাবো।”
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের একটি সুড়ঙ্গের প্রায় এক কিলোমিটার ভেতর থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। গত সপ্তাহে আরেক জিম্মি কাইদ ফারহান আলকাদিকে (৫২) এখান থেকেই জীবিত উদ্ধার করা হয়।
হামাসের প্রস্তাব
হামাস যুদ্ধের সমাপ্তি, গাজা থেকে ইসরায়েলি সৈন্যে প্রত্যাহার এবং ইসরায়েলি কারাগার থেকে অনেক ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তির বিনিময়ে জিম্মিদের মুক্তি দেয়ার প্রস্তাব করেছে।
একজন সিনিয়র হামাস কর্মকর্তা ইজ্জাত আল-রিশক বলেন, জিম্মিরা এখনো জীবিত থাকতো, যদি ইসরায়েল জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্ততায় করা যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নিতো, যা হামাস মেনে নিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস না করা পর্যন্ত তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন। তিনি বলেছেন জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য সামরিক চাপের প্রয়োজন আছে।
হামাসের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনি জঙ্গিরা গত বছর ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে সামরিক ঘাঁটি এবং কয়েকটি বসতিতে হামলা চালিয়ে প্রায় ১,২০০ মানুষ হত্যা করে এবং ২৫০জন কে জিম্মি করে কইয়ে যায়।
ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় গাজায় ৪০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, জায়ের বেশির ভাগ নারী ও শিশু বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। গাজার ২৩ লক্ষ বাসিন্দার বেশির ভাগ কয়েক দফায় বাস্তচ্যুত হয়েছেন এবং এই অবরুদ্ধ ভূখন এখন মানবিক বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, নিহত অপর জিম্মিদের নাম ওরি দানিনো (২৫), ডেন ইয়েরুশালমি, (২৪), আলমগ সরুসি (২৭), মো. এবং আলেকজান্ডার লোবানভ, 33; যাঁদের সবাইকেই মিউজিক ফেস্টিভ্যাল থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। ষষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন ৪০ বছর বয়সী কারমেল, যাকে গাটকের নিকটবর্তী বিয়েরির কৃষক সম্প্রদায় থেকে অপহরণ করা হয়েছিল।