তিন বছরের তালিবান শাসনের কষ্ট ও মোহভঙ্গ স্কুলছাত্রী পারওয়ানা মালিকের উজ্জ্বল বাদামী চোখে প্রতিফলিত হচ্ছে। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য প্রত্যাহারের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, ওয়াশিংটনের উচিত অগণিত তরুণীর দুর্দশার দিকে আরও কঠোর নজর দেওয়া যারা কট্টর শাসনে ভোগান্তির শিকার হয়েছে।
আফগানিস্তানে দুই দশক দায়িত্ব পালনের পর ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যবাহিনী সে দেশ ত্যাগ করে। সেসময় মালিকের বাবা এক বয়স্ক ব্যক্তির কাছে বিয়ের জন্য তাকে বিক্রি করে দেন।
তার বয়স ছিল মাত্র ৯ বছর। স্থানীয় মানদণ্ড অনুযায়ী অনেক আফগান মেয়েকে কিশোরী বয়সে বিয়ে দেয়া হয়, অর্থাৎ সেই হিসেবেও তার বয়স ছিল কম।
২০২১ সালে জাতিসংঘের শিশু তহবিল সতর্ক করেছিল যে পশ্চিমা বাহিনী ও ত্রাণ সংগঠনগুলির প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে শিশুবিবাহ প্রবল হারে বৃদ্ধি পেতে পারে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ৭ বছর বয়সী মেয়েদের সঙ্গেও তালিবান কমান্ডারদের বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অলাভজনক সংস্থা ‘টু ইয়াং টু ওয়েড’এর প্রতিষ্ঠাতা ও আলোকচিত্রী স্টেফানি সিনক্লেয়ার বলেন, “নারী ও মেয়েদের সঙ্গে তালিবান যা করছে তা প্রকৃতই মানবতাবিরোধী অপরাধ। আফগান মেয়ে ও নারীরা দেশের মধ্যে সত্যিই ভুগছে। বিশ্বের কোথাও এমনটা হয় না।”
চলতি মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য প্রত্যাহারের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে এক তালিবান কর্মকর্তা বিদেশী হস্তক্ষেপকে সমালোচনা করে প্রতিবাদী ভাষণ দিয়েছেন।
উপ-প্রধানমন্ত্রী মৌলভি আব্দুল কবির বলেছেন, নতুন নেতৃত্ব “অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্য দূরীভূত করেছে এবং দেশে ঐক্য ও সহযোগিতার পরিসরের বিস্তার ঘটিয়েছে। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপকে করতে কাউকে অনুমতি দেওয়া হবে না এবং কোনও দেশের বিরুদ্ধে আফগান মাটিকে ব্যবহার করা যাবে না।”
দৈনন্দিন জীবনে বেসামরিক নাগরিকদের দুর্দশা নিয়ে এই অনুষ্ঠানে উপ-প্রধানমন্ত্রী বা অন্যান্য বক্তারা বাক্যব্যয় করেননি। নারী সাংবাদিকসহ সকল নারীদের এই অনুষ্ঠান থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। উল্লেখ্য, চলতি মাসে তালিবান শাসক নারীদের চলাচলের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে নতুন আইন প্রণয়ন করেছে। সেই সঙ্গে এই আইনে বলা হয়েছে, জনপরিসরে নারীদের শরীর ও মুখ ঢেকে রাখতে হবে এবং তাদের কণ্ঠস্বর যেন শোনা না যায়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার শাখা এই আইনকে “জঘন্য” বলে নিন্দা করেছে এবং এই আইন বাতিলের দাবি তুলেছে।
এবং এখন, এইসব হতাশাময় আলোচনার মধ্যে গল্পে নতুন একটা মোড় দেখা গেছে।
‘টু ইয়াং টু ওয়েড’ সংস্থাটি পারওয়ানার বয়স্ক স্বামীকে বুঝিয়ে রাজি করেছে যাতে তিনি পারওয়ানাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেন। তিনি সম্মতও হয়েছেন।
সিনক্লেয়ার বলেন, পারওয়ানা তার নিজস্ব জায়গায় ফিরে এসেছে—স্কুলে। তবে আফগানিস্তানে নারী শিক্ষার ব্যাপারে তালিবানের নীতি পরিবর্তন না হলে কিছুদিন পর তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে।