ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকির সঙ্গে বৈঠক করতে শুক্রবার কিয়েভে পৌঁছেছেন। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে কিয়েভ স্বাধীনতা অর্জনের পর এটাই কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম ইউক্রেন সফর।
বৈঠকের আগে এক যৌথ বিবৃতিতে মোদী বলেন, তিনি কিয়েভে এসেছেন শান্তির বার্তা নিয়ে এবং তিনি যথাশীঘ্র রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনা চান।
ইউক্রেনে যুদ্ধের এক ভঙ্গুর ও অস্থির সন্ধিক্ষণে মোদির এই সফর। ৬ আগস্টে অতর্কিত অনুপ্রবেশের পর ইউক্রেনের বাহিনী এখনও রাশিয়ার পশ্চিম কুরস্ক অঞ্চলে রয়েছে এবং রাশিয়ার সৈন্যরা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে ধীরে তবে দৃঢ়ভাবে অগ্রসর হচ্ছে।
চলতি বছরের জুলাই মাসে মোদির মস্কো-যাত্রার পর এই সফর পশ্চিমা সাহায্যপুষ্ট কিয়েভের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বৈশ্বিক দক্ষিণে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে কিয়েভ। তাদের প্রচেষ্টা ও লক্ষ্য হল, এই যুদ্ধ থামাতে একটা ন্যায্য রফা-নিষ্পত্তিতে পৌঁছানো ও তা সুনিশ্চিত করা।
মোদি এক্স (সাবেক ট্যুইটার) হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “আজ ভোরবেলা কিয়েভে পৌঁছেছি। ভারতীয় জনগোষ্ঠী উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে।” ইউক্রেনের রেলওয়ে সংস্থার ফুটেজে দেখা গেছে, মোদি ট্রেনের বগি থেকে নামছেন এবং ইউক্রেনের কর্মকর্তারা তাঁকে সাদর সম্ভাষণ জানাচ্ছেন।
এই সফর সম্পর্কে তিনি বলেছেন, “ইউক্রেনে চলমান সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান নিয়ে মত” বিনিময়ের জন্য তিনি উন্মুখ।
গত মাসে মোদির মস্কো সফরকালে ইউক্রেনে শিশুদের এক হাসপাতালে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল রাশিয়া। সেই হামলার ফলে মোদিকে তড়িঘড়ি আবেগপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করে পুতিনকে তিরস্কার করতে হয়েছিল।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দফতরের উপদেষ্টা মিখাইলো পোডোলিয়াক রয়টার্সকে বলেন, মোদির কিয়েভ সফর গুরুত্বপূর্ণ কারণ মস্কোর উপর নয়াদিল্লির “সত্যিই নির্দিষ্ট কিছু প্রভাব রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের দেশগুলির সঙ্গে কার্যকরী সম্পর্ক গড়ে তোলা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি, যুদ্ধের সঠিক সমাপ্তি কী তা তাদেরকে ব্যাখ্যা করা গুরুত্বপূর্ণ এবং এটা তাদের স্বার্থেও।”
ভারতের সঙ্গে মস্কোর চিরকালই ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষাগত সম্পর্ক রয়েছে। তবে এই যুদ্ধে নিরাপরাধ ও নিরীহ মানুষের মৃত্যুকে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছে নয়াদিল্লি।
তবে, আগ্রাসনের কারণে পশ্চিমা দেশগুলি রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পর ভারত মস্কোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করেছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (পশ্চিমা বিষয়ক) সচিব তন্ময় লাল সংবাদদাতাদের বলেছেন, “উভয় পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য বিকল্পের মাধ্যমেই কেবলমাত্র দীর্ঘস্থায়ী শান্তি অর্জন করা যেতে পারে এবং এটা শুধুমাত্র আপস-রফাই হতে পারে।”