রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের অতর্কিত অনুপ্রবেশ সত্ত্বেও রুশ সেনা বাহিনী দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর পকরোভস্কের দিকে। বেসামরিক নাগরিকরা কোলে শিশু ও ভারী স্যুটকেস টানতে টানতে সোমবার এই শহর ত্যাগ করছেন।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, রুশ বাহিনী এত দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে যে, পরিবারগুলিকে এই শহর, অন্যান্য পার্শ্ববর্তী শহর ও গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যা মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হচ্ছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রায় ৫৩ হাজার মানুষ এখনও পকরোভস্কে রয়েছেন এবং এদের কেউ কেউ অবিলম্বে অন্যত্র যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সব বয়সের মানুষ যেটুকু জিনিসপত্র বহন করতে পারেন তা নিয়ে ট্রেন ও বাসে উঠে পড়েছেন। কেউ কেউ চলে যাওয়ার অপেক্ষা করতে করতে কাঁদছিলেন। বয়স্ক ব্যক্তিদের ব্যাগ সামলাতে সাহায্য করেছে সৈন্যরা এবং প্রতিবন্ধিদের সাহায্য করেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। রেলকর্মীরা বুলেট-প্রুফ পোশাক পরেছিলেন।
নাতালায়া ইভানিয়ুক বলেন, তিনি ও তার ৭ ও ৯ বছর বয়সী দুই মেয়ে যখন পাশের মিরনোহরাদ গ্রামের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসছিলেন তখন রুশ বাহিনীর বোমাবর্ষণের আওয়াজে বাতাস ভারী হয়ে হয়ে উঠেছিল। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে মিরনোহরাদ গ্রামের দূরত্ব ১০ কিলোমিটারেরও (৬ মাইল) কম।
তিনি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, “এটা ছিল মারাত্মক ভয়ের। আমরা কোনও রকমে বেরিয়ে এসেছি।”
দনেৎস্ক জুড়ে রুশ অভিযান
পকরোভস্ক হল ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান প্রতিরক্ষা-ঘাঁটি এবং দনেৎস্ক অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিক কেন্দ্র। এটি দখল হয়ে গেলে ইউক্রেনের প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষাগত সক্ষমতা এবং সরবরাহের পথগুলি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে, গোটা দনেৎস্ক অঞ্চল দখলের রাশিয়ার যে ঘোষিত লক্ষ্য তা পূরণে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে মস্কো।
আভদিভকা দখলের পর ইউক্রেনের দনেৎস্ক অঞ্চলজুড়ে ছয় মাস ধরে লাগাতার আক্রমণের ফলে রাশিয়াকে ব্যাপক মূল্য দিতে হয়েছে। তাদের সৈন্য ও অস্ত্রের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে, রুশ কামান, ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমায় ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাওয়া ঘাঁটিগুলি থেকে পিছু হটা ছাড়া ইউক্রেনের সৈন্যদের বিকল্প পথ না থাকায় ওই আক্রমণ রাশিয়াকে লাভবান করেছে।
রাশিয়া দনেৎস্ক ও প্রতিবেশী লুহানস্কের সমস্ত অংশের উপর নিয়ন্ত্রণ চায়। এই দুই অঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠেছে দনবাস শিল্পাঞ্চল।
কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে সতর্ক করেছিলেন, রুশ বাহিনী দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে এবং পকরোভস্কের উপকণ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার (৬ মাইল) দূরে রয়েছে তারা।
ইউক্রেনের সেনা বাহিনী প্রধান ওলেকসান্দার সাইরস্কি সোমবার বলেছেন, পকরোভস্ক এলাকায় “ব্যাপক যুদ্ধ” হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পাশের শহর তরেৎস্কও মারাত্মক চাপে রয়েছে। এই শহরটি দখল হয়ে গেলে গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি চাসিভ ইয়ারে দক্ষিণ দিক থেকে ঢুকে পড়তে পারবে রাশিয়া।