বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারকে অগ্রাধিকার দিয়ে আন্দোলনে শহীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে হবে বলে মনে করছেন সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল। তিনি বলেন, একইসঙ্গে দেশে এমন একটা ব্যবস্থা তৈরি করতে যাতে কেউ চাইলেও স্বৈরাচার ও দানব হতে না পারে।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আদিত্য রিমন।
ভয়েস অফ আমেরিকাঃ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান তিনটি অগ্রাধিকার কী হওয়া উচিত?
মাসুদ কামালঃ তাদের অগ্রাধিকারের বিষয়টিকে আমি দুই ভাগে ভাগ করতে চাই। একটি হচ্ছে স্বল্পমেয়াদী, আরেকটি দীর্ঘমেয়াদী।
স্বল্পমেয়াদী হলো- যত লোক শহীদ হয়েছে তাদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা। শুনেছি কিছু গণ-কবর হয়েছে। সেটা যদি হয়ে থাকে তাহলে ডিএনএ করে তার পরিচয় নিশ্চিত করে পরিবারকে জানাতে হবে। শহীদের জাতীয় বীর হিসেবে সম্মান দেওয়া। তাদের পরিবারকে সারাজীবনের জন্য ভাতা দেওয়া। আর যারা আহত হয়েছেন, তাদেরকে আহত হওয়ার গুরুত্ব অনুযায়ী একটা ক্ষতিপূরণ বা ভাতা দেওয়া। আরেকটা বিষয় হচ্ছে যারা শহীদ ও আহত হয়েছে, তাদেরকে কারা গুলি করেছে, অথবা কার নির্দেশে হয়েছে, তার পেছনে নীল-নকশা করা করেছে, কার সিদ্ধান্তে হয়েছে- এদের সবাইকে বিচারের সম্মুখীন করা। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা।
দীর্ঘমেয়াদী বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বলছি- বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন করেছি। ফলে,দেশের মানুষ গত ১৫ বছরে যেসব অধিকার হারিয়েছে, সেইগুলো পনরুদ্ধার করা। তার একটি হলো ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। নির্বাচন কমিশন ও ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ঢেলে সাজানো। তার জন্য সংবিধান সংশোধনের দরকার হলেও করতে হবে। অর্থাৎ এমন একটা ব্যবস্থা তৈরি করা, যে ব্যবস্থায় একটা মানুষ চাইলেও যেন স্বৈরাচারী ও দানব হয়ে উঠতে না পারে।
আবার এইগুলো করতে হবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে। তার জন্য যদি অনন্তকাল সময় নিতে থাকেন সেটাও গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল পরিচয়টা হচ্ছে জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত একটা সরকার থাকবে। এই অন্তবর্তীকালীন সরকারকে মনে রাখতে হবে, তারা জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত নয়।
ভয়েস অফ আমেরিকাঃ সর্বোচ্চ কতদিনের মধ্যে একটি অবাধ নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হওয়া দরকার?
মাসুদ কামালঃ আমি মনে করি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। এই যত তাড়াতাড়ি একেক জনের কাছে, একেক রকম অর্থ। এখন তারা কতুটুক পারবে, তাদের সামর্থ্য কতটুকু তার ওপর নির্ভর করবে এই তাড়াতাড়ির অর্থ। আমরা ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, এই অন্তরবর্তীকালীন সরকারের যেসব নাম ও চেহারা দেখেছি, তাতে তারা দ্রুত করতে পারবে বলে মনে হয় না। আমরা এই অভিমত ভুল প্রমাণ হোক এটা চাই। তারপর কেন যেনি মনে হয়, তারা দ্রুত করতে চাইবে না। সেইক্ষেত্রে তাদেরকে এসব মূল কাজগুলো করতে গেলে একটু সময়ও দিতে হবে। এখন কেউ যদি ভাবে, তিন কিংবা ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন হয়ে যাবে, আমি মনে করি সেটা সম্ভব না।
তাদেরকে কমপক্ষে এক-দুই বছর সময় দিতে হবে। এছাড়া এই সরকার যত দেরি করবে সাধারণ মানুষের কাছে ততই সমলোচিত হতে থাকবে। কারণ মানুষ তো ভোট চাই। সেটা যত দ্রুত করতে পারবে ততই প্রশংসিত হবে।
ভয়েস অফ আমেরিকাঃ এমন একটি নির্বাচন নিশ্চিত করতে সংবিধান পরিবর্তন করে দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের বিধান কি সংবিধানে স্থায়ী ভাবে সংযোজন যথেষ্ট বলে মনে করেন? নাকি প্রথমে একটি সংবিধান সভা নির্বাচন করে সেখানকার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়ে একটি নতুন সংবিধান তৈরী করে তার আলোকে নতুন নির্বাচন দেয়া উচিত?
মাসুদ কামালঃ এটা আসলে জটিল প্রশ্ন। কিভাবে? সংবিধান পরিবর্তন করতে হলে সংসদ সদস্যদের দিয়ে করা উচিত, এটাই নিয়ম। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পরবর্তীতে যারা নতুন সংসদে আসবে, তারা সংবিধান পরিবর্তন করতে চাইবে কিনা? তারা যদি শেষ মুহুর্তে বলে আমরা জনগণের রায় নিয়ে এসেছি, সংবিধান পরিবর্তন করতে চায় না। তাহলে আপনি কি করবেন। তাই এই মুহুর্তে জনরায় হচ্ছে- শুধু তত্ত্বাবধায় বা অন্য যেটা ভালো হয় সেটাই নয়, নির্বাচনী ব্যবস্থাসহ অন্যান্য বিষয়গুলো সংবিধানে অন্তরর্ভুক্ত করতে হবে। আমি মনে করি, এসব বিষয়গুলো আগে পরিবর্তন করে করে পরবর্তীতে যে সরকার আসবে তাদেরকে দিয়ে অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে।