অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

এখন নির্বাচন হলে বিএনপি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেঃ জাহেদ উর রহমান


জাহেদ উর রহমান
জাহেদ উর রহমান

দেশের বর্তমান অবস্থায় নির্বাচন হলে বিএনপি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান। তিনি বলেন, কারণ প্রশাসনের সর্বস্তরে এখনও আওয়ামী লীগের লোকজন রয়েছে। নির্বাচন হলে সেখানে আওয়ামী লীগ অংশ নিলে, সেটার ফলাফল ম্যানিপুলেট করে তাদের পক্ষে নিয়ে যাবে। ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আদিত্য রিমন।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান তিনটি অগ্রাধিকার কী হওয়া উচিত?

জাহেদ উর রহমানঃ প্রথমত, অগ্রাধিকার হওয়া উচিত, আইনের শাসন ফিরিয়ে আনা। এক দিকে আমাদের অত্যন্ত আনন্দের দিন, অন্যদিকে এই সময়ে যা ঘটে গেছে তা অনেক কষ্টেরও হয়ে গেলো। তাই খুব দ্রুত আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা।

দ্বিতীয় হচ্ছে, আওয়ামী লীগের দুর্নীতি-দু:শাসনে মানুষ অনেক বেশি অতিষ্ঠ ছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত হবে দুর্নীতি নিয়ে একটি কমিশন গঠন করে দুর্নীতিবাজদের খুজেঁ বের করা, তাদেরকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা। তাদের সম্পতি বাজেআপ্ত করে রাষ্ট্রের করে নেওয়া। এটা শুধু অর্থনৈতিক দুর্নীতি না। যেমন ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের রাতে ভোট করে, সরকারের কথা শুনে কোনও বিচারপতি কাউকে জামিন দিয়েছে, অথবা কাউকে জামিন দেয়নি, টাকা নিয়ে কাউকে জামিন দিয়েছে কোনও বিচারপতি এসবগুলো কিন্তু দুর্নীতি। এছাড়া ঋণ খেলাপি আছে। তাই অর্থনৈতিক দুর্নীতি থেকে যে কোনও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে হবে। এরমধ্যে সরকারের রাজনৈতিক লোক, প্রশাসন, আমলা ও ব্যবসায়ী যারাই নানা রকম অন্যায় করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তৃতীয় হচ্ছে, নির্বাচনের দিকে তো অবশ্যই যেতে হবে তাদেরকে। কিন্তু, এখন বাংলাদেশে একটা ভালো নির্বাচন করা ঝুঁকি রয়েছে। আগে একটা ভালো নির্বাচন কমিশন গঠন করে সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যেতো। তখন আমাদের প্রশাসন ও পুলিশ খুব বেশি নষ্ট ছিলো না। এখন চ্যালেঞ্জ হলো ভালো নির্বাচন কমিশন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলেও দিনশেষে নির্বাচনটা মাঠ পর্যায়ে করে প্রশাসন ও পুলিশ। এই প্রশাসনে এখন বীভৎস দলীয়করণ, অযোগ্য লোকেরা বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে। সেটাও এই সরকারকে ঠিক করতে হবে। যাতে তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে যেতে পারে।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ সর্বোচ্চ কতদিনের মধ্যে একটি অবাধ নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হওয়া দরকার?

জাহেদ উর রহমানঃ একটি ভালো নির্বাচনের ওপর আমাদের ভবিষ্যত নির্ভর করছে। এটা নিয়ে তাড়াহুড়া করা যাবে না। আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষটি আসলেই ৩ মাসের একটা আলোচনা হতো। দেশের বিদ্যমান ব্যবস্থায় কোনোভাবেই মনে হয় না, ৩ মাসের মধ্যে ভালো নির্বাচন সম্ভব। তাই এটা করতে এখন আরও বেশি সময় লাগবে, তবে কতদিন লাগবে সেটা নিশ্চিত নয়। তাই আমি মনে করি, একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের কাঠামো তৈরি না করে সেটা করা ঠিক হবে না। হয়তো কোনও বড় দলের চাপ দিতে পারে, এরমধ্যে দেখলাম বিএনপির পক্ষ থেকে ৩ মাসের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। আমি মনে করি, ৩ মাসের মধ্যে নির্বাচন হলে বিএনপি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ নির্বাচন হলে সেখানে আওয়ামী লীগ অংশ নিলে তাদের লোকজন এখনো সব জায়ঘায়, তারা সেটা ম্যানিপুলেট করে তাদের পক্ষে নিয়ে যাবে। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই সরকার যতটা সময় দরকার মনে করে দেওয়া উচিত। তারপরও খেয়াল রাখতে হবে অপ্রয়োজনীয় ও অন্যায়ভাবে তারা ক্ষমতায় বসে আছে কিনা সেটাও।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ এমন একটি নির্বাচন নিশ্চিত করতে সংবিধান পরিবর্তন করে দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের বিধান কি সংবিধানে স্থায়ী ভাবে সংযোজন যথেষ্ট বলে মনে করেন? নাকি প্রথমে একটি সংবিধান সভা নির্বাচন করে সেখানকার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়ে একটি নতুন সংবিধান তৈরী করে তার আলোকে নতুন নির্বাচন দেয়া উচিত?

জাহেদ উর রহমানঃ এখানে আসলে দুটো মতই আছে আমার। এখন যেভাবে অন্তবর্তীকালীন সরকার হচ্ছে সেটাও আমাদের সংবিধানে নেই। এই বিষয়গুলো পরবর্তী সংসদ এসে তার বৈধতা দিবে। এরশাদের পতনের পর বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের ক্ষেত্রে একাদশ সংশোধনী করে আমরা সেটা করেছি। সুতরাং এখনও যেটা হচ্ছে সেটাও সংবিধানের বাইরে হচ্ছে। আলাপ হচ্ছে-সংবিধান সভা নির্বাচন করে নতুন সংবিধান করে…তার আলোকে নির্বাচন- এটা করা গেলে আমি পজিটিভ ভাবে দেখবো। কিন্তু এটা এই মুহুর্তে করা না যায়, আমাদের সংবিধানের মৌলিক কিছু বিষয় তো পরিবর্তন করতেই হবে, সেখানে নির্বাচনী ব্যবস্থার পরিবর্তন তো লাগবেই। সেটা তো সংসদ ছাড়া করা যাবে না। নির্বাচন পরবর্তী সেটা করতে হবে। সংবিধান সভা মানে সেকেন্ড রিপাবলিক কথা বলছি, সেটা বাংলাদেশে হওয়া উচিত বলে আমি বিশ্বাস করি।

XS
SM
MD
LG