বাংলাদেশের নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, “বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের কারণ আপনারা সবাই জানেন। এছাড়া, এই মুহূর্তে আমরা এক ধ্বংসস্তূপের ওপরে দাঁড়িয়ে আছি। এই ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়েই আমাদের নতুন যাত্রা শুরু করতে হবে।”
সোমবার (১২ আগস্ট) আপিল বিভাগের এক নম্বর বিচারকক্ষে (প্রধান বিচারপতির এজলাস) অনুষ্ঠিত সংবর্ধনায় তিনি এ কথা বলেন।
“বিগত বছরগুলোতে বিচার প্রক্রিয়ায় আমাদের বিচারবোধ, ন্যায়বিচারের মূল্যবোধকে বিনষ্ট করা হয়েছে। এছাড়া সততার বদলে শঠতা, অধিকারের বদলে বঞ্চনা, বিচারের বদলে নিপীড়ন, আশ্রয়ের বদলে নির্যাতনকে স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত করা হয়েছে। অথচ, এ রকম সমাজ ও রাষ্ট্র আমরা চাইনি;” যোগ করেন প্রধান বিচারপতি।
তিনি আরো বলেন, শিষ্টের লালন ও অন্যায়ের দমন হলো বিচার বিভাগের শাশ্বত দায়িত্ব। বিচারক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে যে কেউ অন্যায় বা শিষ্টাচার লঙ্ঘন করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে কেউ ভালো কাজ করলে তাকে পুরস্কৃত করা হবে। কোনো ধরনের বিচ্যুতিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না বলে উল্লেখ কনে তিনি।
“আমি কৃতজ্ঞতা ও গভীর শ্রদ্ধা জানাই গণজাগরণে আত্মদানকারী প্রত্যেক শহীদের স্মৃতির প্রতি। আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। ছাত্র-জনতার এই অভুত্থানের সময় অসংখ্য শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের অনেকেই এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমি তাদের সবার দ্রুত নিরাময় ও সুস্থতা কামনা করছি;” আরো বলেন প্রধান বিচারপতি।
তিনি বলেন, “আমি সারা দেশের সব ছাত্র-জনতা–শিক্ষার্থীকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি আরো অভিনন্দন জানাই বাংলাদেশের সব স্তরের জনগণকে, যারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন।”
সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, “আজ থেকে প্রতিটি শ্রেয়, শুভ ও কল্যাণকর কর্মে সবাই বিচার বিভাগকে আপনাদের পাশে পাবেন। আমি সচেতন আছি, আমাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।”
“সুপ্রিম কোর্টের ছাড়াও, জেলা জুডিশিয়ারি হলো বিচার বিভাগের সবচেয়ে বড় ও বিস্তৃত ক্ষেত্র। অধস্তন জুডিশিয়ারিতে কর্মরত বিচারক সহকর্মীরা আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। দেশের সাধারণ মানুষ বিচার বিভাগ বলতে মূলত ডিস্ট্রিক্ট জুডিশিয়ারিকে বোঝেন;” তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, “জুডিশিয়াল সার্ভিসে কর্মরত সহকর্মীদের বলছি, আমি আপনাদের পাশে আছি। আপনারা কোনো ধরনের অন্যায়, চাপ ও ভয়ভীতির আশঙ্কা করবেন না। নির্ভয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে বিচারিক কাজ পরিচালনা করুন।”
তিনি বলেন, “আমরা জানি, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে ভগ্নদশা থেকে বিচার বিভাগও মুক্ত নয়। কিন্তু ছাত্র–জনতার বিজয়ের ঐতিহাসিক মুহূর্ত নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ আমাদের সামনে এনে দিয়েছে। আমরা যেন এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারি, সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।”
এর আগে, (১০ আগস্ট) বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তাকে দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন।
এ বিষয়ে, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। শপথের তারিখ থেকে তার নিয়োগ কার্যকর হবে।
উল্লেখ্য, শনিবার প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন ওবায়দুল হাসান। তার পদত্যাগের পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আরো পাঁচ বিচারপতি পদত্যাগ করেন।
পদত্যাগকারী বিচারপতিরা হলেন; বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম, বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন।
আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।