অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

শেখ হাসিনার পতনের পর হিন্দুদের উপর আক্রমণের খবরে উদ্বেগ বাড়ছে


শেখ হাসিনার পতনের পর ঢাকা সহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ফটোঃ ৬ অগাস্ট, ২০২৪।
শেখ হাসিনার পতনের পর ঢাকা সহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ফটোঃ ৬ অগাস্ট, ২০২৪।

বাংলাদেশে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার একদিন পর মঙ্গলবার মানবাধিকার প্রবক্তা এবং কূটনীতিকরা হিন্দু সম্প্রদায়সহ সংখ্যালঘুদের উপর হামলার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ ক্রিস্টিয়ান ঐক্য পরিষদ বলেছে, ২০০ থেকে ৩০০ মূলত হিন্দুদের বাড়ি-ঘর এবং ব্যবসা সোমবার থেকে ভাংচুর করা হয়েছে। একই সময়ে, ১৫-২০টি হিন্দু মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্ত বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, প্রায় ৪০জন লোক আহত হয়েছে তবে মারাত্মকভাবে না।

“সোমবার এবং মঙ্গলবার অন্তত ৯৭ জায়গায় সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর ও দোকানপাট ভাংচুর এবং লুটপাট করা হয়েছে,” রানা দাসগুপ্তকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়।

এফপি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন হাসপাতাল কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানায়, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় বাগেরহাট জেলায় একজন হিন্দুকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

“সংখ্যালঘুদের উপর এ’ধরনের আক্রমণ বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মৌলিক আদর্শের পরিপন্থী,” এএফপি-কে বলেন ট্র্যান্সপ্যারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।

'ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি'

“পরিস্থিতি খুবই ভয়ঙ্কর,” মানিন্দ্র কুমার নাথ, একজন হিন্দু কমিউনিটি নেতা রয়টার্সকে বলেন। “এমনকি আজকেও মানুষজন তাদের বাঁচানোর জন্য আবেদন করে আমাদের কল করছে, কিন্তু আমরা কোন জায়গা থেকে সাহায্য পাচ্ছি না।”

রয়টার্স জানাচ্ছে, বাংলাদেশের ১৭ কোটি জনসংখ্যার আট শতাংশ হিন্দু, যারা ঐতিহাসিকভাবে মূলত হাসিনার আওয়ামী লীগ সমর্থন করে আসছে। লীগ নিজেদের মূলত ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসেবে গণ্য করে; অন্যদিকে বিরোধী জোটে ইসলামপন্থী দল রয়েছে।

প্রতিবেশী ভারত, শেখ হাসিনা সোমবার ঢাকা থেকে পালিয়ে যেখানে বর্তমানে নিরাপদে আছেন, বলেছে, “উদ্বেগের সবচেয়ে বড় জায়গা হচ্ছে, সংখ্যালঘুরা, তাদের ব্যবসা এবং মন্দির একাধিক দিক থেকে আক্রান্ত হয়েছে।”

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মঙ্গলবার বলেন, “সংখ্যালঘুদের বিষয় দিল্লি পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি বলেন আইন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা “গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন থাকবেন।”

যুক্তরাষ্ট্র আর ইইউ উদ্বিগ্ন

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ দেয়া এক পোস্টে ‘শান্তির’ আহ্বান জানায়।

“বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং ধর্মীয় স্থাপনায় হামলার খবরে আমরা উদ্বিগ্ন,” দূতাবাস এক বার্তা জানায়, যেটার প্রতিধ্বনি করেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কূটনীতিকরা।

বাংলাদেশে ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি এক্স-এ দেয়া এক পোস্টে বলেন, ইইউ মিশনের প্রধানরা “বাংলাদেশে ধর্মীয়, জাতিগত এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর এবং তাদের প্রার্থনার জায়গায় একাধিক হামলার খবরে খুবই উদ্বিগ্ন।”

এএফপির হিসেব মতে, জুলাই মাসে আন্দোলন শুরু হবার পর থেকে সোমবার ৫ অগাস্ট ছিল সবচেয়ে মারাত্মক দিন, যেদিন ১২২জন নিহত হন।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী সোমবার আহমাদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়িতেও অগ্নি সংযোগ করা হয়।

বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর মিডিয়া অফিস বলেছে, সারা দেশে নিরাপত্তা বাহিনী আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করছে,তবে তিনি কোন নির্দিষ্ট ঘটনার কথা উল্লেখ করেন নাই।

XS
SM
MD
LG