অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ঐতিহাসিক বন্দি-বিনিময়


যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দেয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে আমেরিকান সাংবাদিক এভান গেরশকোভিচ (বাঁয়ে), আমেরিকান-রুশ সাংবাদিক আলসু কুরমাশেভা (সর্ব ডানে) এবং যুক্তরাষ্ট্র মারিন বাহিনীর প্রাক্তন সদস্য পল উইলান (ডান থেকে দ্বিতীয়) রাশিয়া থেকে মুক্তি পাবার পর একটি বিমানে। ফটোঃ ১ অগাস্ট, ২০২৪।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দেয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে আমেরিকান সাংবাদিক এভান গেরশকোভিচ (বাঁয়ে), আমেরিকান-রুশ সাংবাদিক আলসু কুরমাশেভা (সর্ব ডানে) এবং যুক্তরাষ্ট্র মারিন বাহিনীর প্রাক্তন সদস্য পল উইলান (ডান থেকে দ্বিতীয়) রাশিয়া থেকে মুক্তি পাবার পর একটি বিমানে। ফটোঃ ১ অগাস্ট, ২০২৪।

যুক্তরাষ্ট্র বৃহস্পতিবার রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক বন্দি-বিনিময়ের বিষয়টিকে নিশ্চিত করেছে। এই বিনিময়ে মুক্তি পান আমেরিকান সাংবাদিক ইভান গের্শকোভিচ, আলসু কুর্মাশেভা, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক নৌ-সেনা পল উইলান ও স্থায়ী বাসিন্দা ভ্লাদিমির কারা-মুর্জা।

যুক্তরাষ্ট্র সর্বমোট ১৬ জনের মুক্তিকে নিশ্চিত করেছে। এই ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ভুলবশত আটক হওয়া পাঁচজন জার্মান ও সাতজন রুশ নাগরিক। আমেরিকা, জার্মানি, পোল্যান্ড, নরওয়ে ও স্লোভেনিয়ায় আটক থাকা আটজনের বিনিময়ে এদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।

ঠাণ্ডা যুদ্ধের পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে এটাই বৃহত্তম বন্দি-বিনিময়।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভ্যান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আজকের (বন্দি-)বিনিময় হবে ঐতিহাসিক। ঠাণ্ডা যুদ্ধের পর থেকে এভাবে এত সংখ্যক ব্যক্তিকে বিনিময় করা হয়নি। অনেক, অনেক মাসের জটিল ও শ্রমসাধ্য কয়েক দফা সমঝোতার চূড়ান্ত ফল এটি।”

সালিভ্যান বলেন, ভুলবশত আটক করা ব্যক্তিদের মুক্তিকে নিশ্চিত করতে এতগুলি দেশ ও মিত্র এই প্রথম সম্মিলিতভাবে কাজ করেছে।

আমেরিকানদের পাশাপাশি এই চুক্তি জার্মান নাগরিক ও রুশ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তিকেও নিশ্চিত করেছে। যারা মুক্তি পাচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ডিয়েটার ভরোনিন, কেভিন লিক, রিকো ক্রিগার, প্যাট্রিক শুয়েবেল, হেরমান মোয়েস, ইলিয়া ইয়াসিন, লিলিয়া চেনিশেভা, কেসনিয়া ফাদেয়েভা, ভাদিম ওস্তানিন, আন্দ্রেই পিভোভারভ, ওলেগ ওরলভ ও সাশা স্কোচিলেঙ্কো।

রাশিয়ার একটি বিমান তুরস্কের আঙ্কারা বিমান বন্দর ছেড়ে যাচ্ছে। ধারনা করা হয় মুক্তি প্রাপ্ত রুশ বন্দিরা এই বিমানে রাশিয়ায় ফেরত গেছেন। ফটোঃ ১ অগাস্ট, ২০২৪।
রাশিয়ার একটি বিমান তুরস্কের আঙ্কারা বিমান বন্দর ছেড়ে যাচ্ছে। ধারনা করা হয় মুক্তি প্রাপ্ত রুশ বন্দিরা এই বিমানে রাশিয়ায় ফেরত গেছেন। ফটোঃ ১ অগাস্ট, ২০২৪।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এই নারী ও পুরুষদের কয়েকজনকে অন্যায়ভাবে বছরের পর বছর আটকে রাখা হয়েছে। তারা সকলে অকল্পনীয় যন্ত্রণা ও অনিশ্চয়তা সহ্য করেছেন। আজ তাদের যন্ত্রণা শেষ। তাদের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করেছে যে চুক্তি তা কূটনীতির কৃতিত্ব।”

আমেরিকানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দিন আটক ছিলেন সে দেশের সাবেক মেরিন পল উইলান। ২০১৮ সালে তাকে মস্কোতে গ্রেফতার করা হয়েছিল। গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগে ২০২০ সালে তাকে ১৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সংবাদদাতা গের্শকোভিচ এবং রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টির সাংবাদিক কুর্মাশেভা উভয়কে ২০২৩ সালে আটক করা হয়েছিল। ১৯ জুলাই পৃথক রুদ্ধদ্বার বিচারে উভয়কেই সাজা দেওয়া হয়েছিল। এই বিচার প্রক্রিয়াকে প্রহসন বলে ব্যাপকভাবে নিন্দা করা হয়েছিল।

ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম-লেখক ও সক্রিয় সমাজকর্মী কারা-মুর্জাকে ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে আটকে রাখা হয়েছিল। তাকেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে। জেল থেকে লেখা তার চিঠিগুচ্ছের জন্য এই রাজনীতিক ও ইতিহাসবিদকে পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছিল।

রাশিয়ার পক্ষে ক্রেমলিন ভাদিম ক্রাসিকভের মুক্তির জন্য বোঝাপড়া করেছে। এই রুশ জার্মানিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন।

সালিভ্যান সংবাদদাতাদের বলেন, “এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, ভাদিম ক্রাসিকভ-সহ বাকিদের বিনিময় ছাড়া এই সকল ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে রাজি হবেন না রুশরা।”

রাশিয়াতে যে সকল ব্যক্তি ফিরছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন স্লোভেনিয়া থেকে আর্তেম ভিক্টোরোভিচ দালসেভ ও অ্যানা ভ্যালেরেভনা দালসেভ; নরওয়ে থেকে মিখাইল ভ্যালেরিভিচ মিকুশিন; পোল্যান্ড থেকে পাভেল আলেকেসেয়েভিচ রুবসভ এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে রোমান সেলেজনেভ, ভ্লাদিস্লাভ ক্লিউশিন ও ভাদিম কনোশেচেনক।

XS
SM
MD
LG