রবিবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধীদলের প্রতিদ্বন্দ্বী এডমান্ডো গনজালেজ ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে পরাজিত করেছে বলে দাবী করেছে তার দল। দেশটির বিরোধী জোট বলছে, তাদের কাছে এর প্রমাণ রয়েছে।
গনজালেজ এবং বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া করিনা মাচাদো সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, তারা হিসেবে দেখেছেন মোট ভোটের প্রায় ৭০ শতাংশেরও বেশি ভোট তাদের, গনজালেজ ৬ মিলিয়নের বেশি ভোট পেয়েছেন এবং মাদুরো ২ মিলিয়নের কিছু বেশি ভোট পান।
মাদুরো নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনী পরিষদ রায় ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই গনজালেজ ও মাচাদো তাদের দাবি প্রকাশ করেন। রায়ে বলা হয় প্রেসিডেন্ট ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তবে কাউন্সিলের ফলাফলে বড় ধরনের অসামঞ্জস্য দেখা যায়। ভোটারদের এক্সিটপোলের হিসেবে গনজালেজ বড় ব্যবধানে জয়ী হতে যাচ্ছেন বলে ধারণা করা হয়।
নির্বাচনী ফলাফলে পৃথক ভোট কেন্দ্রের ভোটের হিসাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মতে যদিও তা ভোট গণনার যথার্থতা নির্ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
সোমবার মধ্যরাতে মাদুরোর বিজয়ের ঘোষণা রাজধানী কারাকাস এবং ভেনিজুয়েলা জুড়ে ব্যাপক নৈরাজ্য ডেকে আনে। ক্ষুদ্ধ মানুষ মাদুরোর প্রয়াত পূর্বসূরি ও রাজনৈতিক গুরু হুগো শ্যাভেজের ভাস্কর্য ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। ফলে তাদের মুখোমুখি সংঘর্ষে উত্তর-মধ্যাঞ্চলীয় ইয়ারাকুই রাজ্যে অন্তত একজন নিহত হবার খবর জানা যায়।
নির্বাচনের আগে মাদুরো সরকার কয়েক ডজন বিরোধী প্রচার কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। এমনকি ভোটারদের উপস্থিতি ঠেকাতে ভেনেজুয়েলার প্রায় ৫০ লাখ প্রবাসী ভোটারের মধ্যে মাত্র ৬৯ হাজার ভোটারকে ভোট দেওয়ার অনুমতি দেয় দেশটির সরকার।
সমালোচনার জবাবে আর্জেন্টিনা, কোস্টারিকা, পানামা ও পেরুর পাশাপাশি চিলি, ডোমিনিকান রিপাবলিক ও উরুগুয়েতে নিয়োজিত ভেনেজুয়েলান কূটনীতিকদের ডেকে পাঠান ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন তার উদ্বেগের কথা জানিয়ে বলেছেন, ঘোষিত ফলাফলে ভেনেজুয়েলার জনগণের ইচ্ছা বা ভোটের প্রতিফলন নেই।
তবে কিউবা, নিকারাগুয়া, রাশিয়া, বলিভিয়া এবং হন্ডুরাসের বামপন্থী নেতারা মাদুরোর বিজয়কে স্বাগত জানিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাদুরো দ্বিতীয় মেয়াদের পর রবিবারের ভোট তার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৩ সালে শ্যাভেজের মৃত্যুর পর তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এর পর থেকে তেল সমৃদ্ধ দেশটি তার স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অধীনে বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত রয়েছে। ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্যের অভাব এবং অনাহারের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ পালিয়ে যাচ্ছে।
অপরদিকে, নির্বাচনে বিরোধীদলীয় নেতা মাচাদোকে এপ্রিলে ভেনেজুয়েলার সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কারণে ৭৪ বছর অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক গনজালেজ তার বদলে ভোটে দাঁড়ান।
এপি, এএফপি এবং রয়টার্স থেকে এই প্রতিবেদনের জন্য তথ্য নেওয়া হয়েছে।