অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

নেতানিয়াহুকে মার-এ-লাগোতে স্বাগত জানালেন ট্রাম্প, মতপার্থক্য দূর করার প্রয়াস



রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর আবাস মার-এ-লাগোতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতেনিয়াহুর বৈঠক। পাম বীচ, ফ্লোরিডা, ২৬ জুলাই ২০২৪।
রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর আবাস মার-এ-লাগোতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতেনিয়াহুর বৈঠক। পাম বীচ, ফ্লোরিডা, ২৬ জুলাই ২০২৪।

প্রায় চার বছর পর শুক্রবার এই প্রথম সরাসরি সাক্ষাতে উচ্ছসিত ট্রাম্প উষ্ণ করমর্দন করে স্বাগত জানালেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে। তাঁরা তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মৈত্রিকে আবার ঝালাই করে নেয়ার চেষ্টা করছেন। এই সম্পর্কে ফাটল ধরে যখন ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়ে ট্রাম্পকে পরাস্ত করে জো বাইডেন জয়লাভ করলে নেতেনিয়াহু বাইডেনকে অভিনন্দন জানান।

ফ্লোরিডার পাম বীচে তাঁর নিজস্ব সম্পত্তি মার-এ-লাগোর সামনে পাথরে তৈরি সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ইসরায়েলি নেতাকে স্বাগত জানাতে ট্রাম্প অপেক্ষা করছিলেন। সপ্তাহব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র সফরের এই পঞ্চম দিনে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করলেন। তাঁর এই সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের নয় মাস ব্যাপী যুদ্ধের প্রতি সমর্থন আদায় এবং নিজ দেশে তাঁর কমে আসা জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করা।

দুজনই আলোচনার জন্য সংবাদদাতাদের সামনে মার-এ- লাগোর দেয়ালচিত্রে সাজানো একটি ঘরে বসেন। নেতেনিয়াহু ট্রাম্পকে একটি বাঁধানো ছবি দেন যাতে একটি শিশুকে দেখানো হয়েছে যাকে হামাসের নেতৃত্বাধীন জঙ্গিরা যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পণবন্দি করে। ট্রাম্প তাঁকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, “ আমরা এগুলি দেখবো”।

এই দু’জন তাঁদের আলোচনা শুরুর পর এক বিবৃতিতে, ট্রাম্পের সহকারীরা বলেন আমেরিকান ভোটদাতারা তাঁকে যদি নভেম্বেরে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত করেন তা হলে তিনি “মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনার জন্য সব ধরণের প্রচেষ্টা চালানোর” এবং কলেজ ক্যাম্পসগুলিতে ইহুদিবাদ বিরোধীতাকে মোকাবিলা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

নেতানিয়াহুর ফ্লোরিডা সফরের আগে বুধবার কংগ্রেসর যৌথ বৈঠকে জ্বালাময়ী ভাষণ দেন যেখানে তিনি তার উগ্র ডানপন্থি দল যে ভাবে যুদ্ধ চালাচ্ছে তাকে সমর্থন করেন এবং এই সংঘর্ষে যে ৩৯,০০০ ‘এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন সে সম্পর্কে আমেরিকান বিক্ষোভকারীদের নিন্দা করেন। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে বাইডেন এবং প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ট্রাম্পের ডেমক্র্যটিক প্রতিদ্বন্দ্বি, বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস উভয়ই অস্ত্রবিরতি এবং পণবন্দিদের মুক্তির জন্য আলোচনা সম্পন্ন করতে তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে নেতেনিয়াহুকে চাপ দেন।

ট্রাম্প ও নেতেনিয়াহু উভয়েরই রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে তাঁদের মধ্যকার অতীতের মতপার্থক্য দৈর করার। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নেতানিয়াহুকে প্রধান কিছু সুবিধা প্রদানের বিষয়ে তাঁর পূর্বসুরিদের ছাড়িয়ে গেছেন।

রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ট্রাম্পের জন্য এই বৈঠক তাঁকে একজন মিত্র ও রাষ্ট্রনায়কের পরিচিতি দিতে পারে আর সেই সঙ্গে রিপাবলিকানদের ইসরায়েলের প্রতি সব চেয়ে অনুগত দল হিসেবে নিজেদের তুলে ধরার প্রচেষ্টাকে সফল করতে পারে।

নেতেনিয়াহুর জন্য ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করাটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কারণ এ রকম সম্ভাবনাতো আছেই যে ট্রাম্প আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন । আর যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে ইসরায়েলের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র সরবরাহকারী এবং রক্ষাকারী।

শুক্রবারের এই বৈঠকটি উভয়ের জন্যই তাদের স্বদেশীদের কাছে তাদেরকে শক্ত নেতা হিসেব তুলে ধরার বিষয়ে আলোকপাত করছে । এমন নেতা যারা বিশ্বমঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন এবং আবার করতে পারবেন। তবে গাজার যুদ্ধ দ্রুতই শেষ করার জন্য ট্রাম্পের প্রকাশ্য বিবৃতি কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।

আরব-ইসরায়েলি আলোচনার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাবেক কুটনীতিক যিনি এখন কার্নেগি এন্ডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস ‘এর একজন সিনিয়র ফেলো আরন ডেভিড মিলার বলেন, “ গত দুই দশকে বেনিয়ামিন নেতেনিয়াহু তাঁর কর্মজীবনের বেশির ভাগই রিপাবলিক পার্টির সঙ্গে সংযুক্ত করে রেখেছেন”। আর তার মানে হচ্ছে আগামি ছয় মাস তাঁকে “এই খিটখিটে মেজাজের রাগি প্রেসিডেন্টর সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করতে হবে”। তিনি অবশ্য ট্রাম্পের কথাই বলছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ২০২০ সালে জয়ী জো বাইডেনকে সর্বপ্রথম অভিনন্দন জানানোর কারণে নেতেনিয়াহু ট্রাম্পের কোপানলে পড়েন। ট্রাম্প এর আগে অন্যান্য বিষয় নিয়েও নেতানিয়াহুর সমালোচনা করেন, যেমন ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জন্য “ প্রস্তুত না থাকার “ জন্য তিনি তাকে দোষারোপ করেন।

বুধবার কংগ্রেসে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভাষণে নেতেনিয়াহু বাইডেনর অবদানকে স্বীকৃতি দেন, যিনি তাঁর ডেমক্র্যাটিক পার্টির ভেতর থেকই বিরোধীতা সত্ত্বেও গাজায় ইসরায়েলে আক্রমণের জন্য সামরিক ও কুটনৈতিক সমর্থন চালিয়ে গেছেন।

XS
SM
MD
LG