অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

নেতানিয়াহু কংগ্রেস ভাষণে গাজায় 'বিজয়ের' অঙ্গিকার এবং প্রতিবাদকারীদের তিরস্কার করলেন


ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ কংগ্রেসের দুই কক্ষের যৌথ সভায় ভাষণ দিচ্ছেন। ফটোঃ ৪২ জুলাই, ২০২৪।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ কংগ্রেসের দুই কক্ষের যৌথ সভায় ভাষণ দিচ্ছেন। ফটোঃ ৪২ জুলাই, ২০২৪।

যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ কংগ্রেসের দুই কক্ষের যৌথ সভায় বুধবার এক জোরাল ভাষণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধকে সমর্থন এবং আমেরিকান বিক্ষোভকারীদের নিন্দা করেছেন।

তাঁর ভাষণ ডেমোক্র্যাট দলের অনেক শীর্ষ আইন প্রণেতা বর্জন করেন এবং হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ক্যাপিটল ভবনের চার পাশে সমবেত হয়ে যুদ্ধ এবং তার সৃষ্ট মানবিক সঙ্কটের নিন্দা করেন।

নেতানিয়াহু তাঁর ভাষণে “সম্পূর্ণ বিজয়” না অর্জন করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গিকার করেন। যারা আশা করছিলেন যে ইসরায়েলি নেতার যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় যুদ্ধ বিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তি সংক্রান্ত আলোচনায় অগ্রগতি হবে, তাঁরা নেতানিয়াহুর ভাষণে হতাশ হয়েছেন।

প্রায় এক ঘণ্টা-ব্যাপী ভাষণের মাঝে আইন প্রণেতারা যেমন হাততালিতে ফেটে পড়েছেন, তেমনি অনেক শীর্ষ ডেমোক্র্যাটিক নেতা চুপ করে বসে ছিলেন।

নেতানিয়াহু বলেন, হামাস এবং অন্যান্য ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের অভিন্ন স্বার্থ জড়িত আছে।

“আমেরিকা এবং ইসরায়েলকে এক সাথে থাকতে হবে। আমরা যখন এক সাথে থাকি, তখন খুব সহজ একটা জিনিস ঘটেঃ আমরা জিতি, তারা হারে, ” নেতানিয়াহু বলেন। হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের সাথে সংহতি প্রকাশের জন্য তিনি তার জ্যাকেটে একটি হলুদ পিন পরেছিলেন।

অর্থোডক্স ইহুদিরা ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ওয়াশিংটনের বিক্ষোভে যোগ দেয়। ফটোঃ ২৪ জুলাই, ২০২৪।
অর্থোডক্স ইহুদিরা ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ওয়াশিংটনের বিক্ষোভে যোগ দেয়। ফটোঃ ২৪ জুলাই, ২০২৪।

বিক্ষোভ নিয়ে উপহাস

কিন্তু ইসরায়েলি নেতা খুব শীঘ্রই তার স্বরভঙ্গি বদলে ফেলেন। কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলের বাইরে চলমান বিক্ষোভের উদ্দেশ্যে হাত নাড়িয়ে তিনি যারা যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ক্যাম্পাসে এবং অন্যত্র বিক্ষোভ করছে, তাদের লক্ষ্য করে উপহাস করেন। তিনি তাদের ইসরায়েলের শত্রুদের পক্ষের “বোকা” বলে অভিহিত করেন।

হামাসের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া প্রাক্তন জিম্মি এবং তাদের পরিবার হাউস চেম্বারে ভাষণ শুনছিলেন। নিরাপত্তা কর্মীরা পাবলিক গ্যালারি থেকে কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে সরিয়ে দেয়, যারা দাঁড়িয়ে যুদ্ধ থামিয়ে জিম্মিদের মুক্তির দাবী লেখা টি-শার্ট প্রদর্শন করছিলেন।

হাউস অফ রেপ্রেসেন্টেটিভস-এর একজন সদস্য, রাশিদা তলাইব যিনি কংগ্রেসের একমাত্র ফিলিস্তিনি-আমেরিকান, আরেক ধাপ এগিয়ে একটি সাইন তুলে ধরেন, যার একদিকে লেখা ছিল “যুদ্ধাপরাধী” আর অন্য দিকে “গণহত্যার অপরাধে অপরাধী।”

কংগ্রেসে নেতানিয়াহুর সমালোচকদের মধ্যে তলাইব অন্যতম। গত বছর গাজা যুদ্ধ নিয়ে মন্তব্যর কারণে তাঁর বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাস করা হয়। গাজা যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৩৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

অধিকৃত পশ্চিম তীরে তলাইবের আত্মীয়-স্বজন আছে এবং তিনি মিশিগানের যে এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেন সেখানে অনেক ফিলিস্তিনি-আমেরিকান বাস করেন।

কংগ্রেস সদস্য রাশিদা তলাইব ভাষণের সময় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর উদ্দেশ্যে "গনহত্যার অপরাধে অপরাধী" লেখা সাইন তুলে ধরেন। ফটোঃ ২৪ জুলাই, ২০২৪।
কংগ্রেস সদস্য রাশিদা তলাইব ভাষণের সময় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর উদ্দেশ্যে "গনহত্যার অপরাধে অপরাধী" লেখা সাইন তুলে ধরেন। ফটোঃ ২৪ জুলাই, ২০২৪।

যুদ্ধ বন্ধ এবং বাকি জীবিত জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং মিত্র আরব দেশগুলো যে চেষ্টা করছে, নেতানিয়াহু তার কোন উল্লেখ করেন নি। গত বছর ৭ অক্টোবর হামাস দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে জিম্মিদের ধরে নিয়ে যায়, যার ফলে যুদ্ধের শুরু হয়।

নেতানিয়াহু অভিযোগ করেন যে, আমেরিকায় যুদ্ধ-বিরোধী প্রতিবাদকারীরা জঙ্গিদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, যে জঙ্গিরা তার ভাষায় ৭ অক্টোবরের হামলার সময় শিশুদের হত্যা করে।

“যে বিক্ষোভকারীরা তাদের সমর্থন করে, তাদের লজ্জা পাওয়া উচিত,” তিনি বলেন।

রিপাবলিকান সমর্থন

নেতানিয়াহু, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়ে যে তিনি প্রায়ই রিপাবলিকান এবং রক্ষণশীলদের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নাক গলান, তার বক্তব্য শুরু করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে প্রশংসা করে। কিন্তু তিনি এরপরই প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট পদ প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের উপর “ইসরায়েলের জন্য যতকিছু করার জন্য” প্রশংসার বন্যা বইয়ে দেন।

নেতানিয়াহুর বৃহস্পতিবার বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসের সাথে বৈঠক করার কথা আছে। তারপর শুক্রবার ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে ট্রাম্পের সাথে দেখা করবেন।

মেরিল্যান্ড থেকে ডেমোক্র্যাট হাউস সদস্য জেমি রাস্কিন বলেন নেতানিয়াহুর ভাষণ ট্রাম্পের রিপাবলিকান দলের জন্য লেখা হয়েছিল।

“আমরা জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধ বিরতি নিয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কোন কথা শুনলাম না। আমরা শান্তি নিয়ে কিছু শুনলাম না। আমরা দুই রাষ্ট্র সমাধান, যেটা দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি, সেটা নিয়ে কিছু শুনলাম না,” তিনি বলেন।

ওয়াশিংটনে বিক্ষোভের সময় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। ফটোঃ ২৪ জুলাই, ২০২৪।
ওয়াশিংটনে বিক্ষোভের সময় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। ফটোঃ ২৪ জুলাই, ২০২৪।

ইসরায়েলি সময় সন্ধ্যায় দেয়া ভাষণে নেতানিয়াহু নিজ দেশের দর্শকদের কথাও মাথায় রেখেছিলেন। নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা যুদ্ধের আগের তুলনায় অনেক কমে গিয়েছে। তিনি নিজেকে একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন, যাকে ইসরায়েলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র সম্মান করে এবং ওয়াশিংটনের ক্ষমতার করিডোরে যিনি স্বাগত।

সেই কাজ এখন অনেক জটিল হয়ে গেছে, কারণ ইসরায়েল এবং গাজা যুদ্ধ নিয়ে আমেরিকানরা এখন ক্রমশ বিভক্ত। গাজা যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় ইস্যু হিসেবে উঠে এসেছে।

কংগ্রেসের অনেকে তার বক্তব্য হাততালি দিয়ে, এবং হর্ষধ্বনি করে সমর্থন করে। কিন্তু শীর্ষ স্থানীয় ডেমোক্র্যাটদের অনেকে চুপ করে থাকেন এবং দাঁড়াতে অস্বীকার করেন।

বুধবার কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল স্টিলের তৈরি উঁচু বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। ক্যাপিটলের কাছে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করলে পুলিশ পেপার স্প্রে ব্যবহার করে। বিক্ষোভকারীরা নেতানিয়াহুকে “যুদ্ধাপরাধী” বলে অভিহিত করে এবং গাজায় যুদ্ধ বিরতির আহবান জানায়।

ওয়াশিংটনে ফিলিস্তিন সমর্থকদের বিক্ষোভ। ফটোঃ ২৪ জুলাই, ২০২৪।
ওয়াশিংটনে ফিলিস্তিন সমর্থকদের বিক্ষোভ। ফটোঃ ২৪ জুলাই, ২০২৪।

ডেমোক্র্যাট সমর্থনে ভাটা

ক্যাপিটলের ভেতরে হাউস স্পিকার মাইক জনসন এবং রিপাবলিকান দলের অন্যান্য আইন প্রণেতারা নেতানিয়াহুকে স্বাগত জানায়, যারা হাউস চেম্বারে নেতানিয়াহুর ভাষণের আয়োজন করেন।

“আজকে এবং প্রতিদিন আমেরিকার উচিত ইসরায়েলের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো,” জনসন বলেন। নেতানিয়াহুকে কংগ্রেসের দু’দল একযোগে দাঁড়িয়ে তুমুল হাততালি দিয়ে স্বাগত জানায়।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু নেতানিয়াহুর সফরের সময় সাধারণত যে উষ্ণতা থাকে, এবার রাজনৈতিক ঘটনাবলীর কারণে অনেক কম, যার মধ্যে রয়েছে ট্রাম্পকে হত্যার প্রচেষ্টা এবং দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সরে দাঁড়াবার সিদ্ধান্ত।

অনেক ডেমোক্র্যাট ইসরায়েলকে সমর্থন করে, কিন্তু নেতানিয়াহুর সমালোচক। তারা নেতানিয়াহুর ভাষণকে রিপাবলিকান দলের একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে, যেখানে তারা নিজদের ইসরায়েলের সব চেয়ে অনুগত সমর্থক হিসেবে উপস্থাপন করছে।

অনুপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস, যিনি সেনেটেরও সভাপতি। হ্যারিস বলেন যে তাকে পূর্ব-নির্ধারিত একটি সভায় যেতে হয়েছে। রিপাবলিকান দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সেনেটর জে ডি ভ্যান্সও নির্বাচনী প্রচারণার ব্যস্ততার কথা বলে কংগ্রেসের সভায় আসেন নি।

XS
SM
MD
LG