অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

কমালা হ্যারিসের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীতা, তার মায়ের জন্মভূমি ভারতে প্রতিক্রিয়া


চিত্রকলার শিক্ষক পৃথ্বি রাজ কাম্বলি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিসের ছবি আঁকার সময়ে পথচারিরা তা দেখছেন। মুম্বাই, ভারত, জুলাই ২২, ২০২৪।
চিত্রকলার শিক্ষক পৃথ্বি রাজ কাম্বলি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিসের ছবি আঁকার সময়ে পথচারিরা তা দেখছেন। মুম্বাই, ভারত, জুলাই ২২, ২০২৪।

কামালা হ্যাারিস যখন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে শপথ গ্রহণ করেন, তখন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে তার মায়ের পূর্বসূরিদের গ্রামে আতশবাজি জ্বালিয়ে, তাঁর ছবি তুলে ধরে এবং তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করে সরাসরি আনন্দ প্রকাশ করা হয়। তবে চার বছর পরে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর যখন তিনি ডেমক্র্যাটিক দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হবার মনোনয়ন পাবার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তখন ভারতজুড়েই প্রতিক্রিয়া কিছুটা নীরব। এ সপ্তাহে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞেষ করা হলে রাজধানী নতুন দিল্লির কিছু অধিবাসী গর্ব অনুভব করেন তবে কিছু লোক জানতে চান, তিনি কে।

এতে অন্তত অংশত এ রকম প্রতিফলন পাওয়া যায় যে হ্যারিস তাঁর আদি পরিচয়কে কি ভাবে দেখেন। হ্যারিস নিজে কৃষ্ণাঙ্গিনী, তাঁর বাবার জন্ম জামাইকায়।

উইলসন সেন্টারে সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলে, “ হ্যারিস কিন্তু তাঁর ভারতীয় শেকড়টাকে প্রধান্য দেন না বরঞ্চ প্রাধান্য দেন তাঁর জামাইকার ঐতিহ্যের উপর”।

ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্তগুলিতে তিনি ভারতের সঙ্গে তাঁর বন্ধনের কাহিনী তুলে ধরেছেন – কখনও বা খুব হাল্কা ভাবে- কিন্তু তাঁর নীতিগত পরিচিতিটা অভ্যন্তরীন বিষয় নিয়েই এবং তিনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উপর তেমন আলোকপাত করেননি।

গত বছর জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন রাষ্ট্রীয় সফরে ওয়াশিংটনে এসেছিলেন, তখন তিনি তাঁর প্রয়াত মা শ্যামলা গোপালানের জন্মভূমির কথা আবেগের সঙ্গে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তামিল নাড়ুর এক সমুদ্র সৈকতে তাঁর মাতামহ পিভি গোপালাম হাতে হাত রেখে হাঁটার সময়ে তাঁকে বলেছিলেন গণতন্ত্র কি , সে কথাও স্মরণ করেন এবং নিজের মাতামহকে এর জন্য কৃতিত্ব দেন।

তিনি বলেন এই সব শিক্ষা, “জন পরিষেবায় সর্ব প্রথম আমার আগ্রহের জন্ম দেয় .... আর সেই থেকে সেটিই আমাকে দিকনির্দেশনা দিয়েছে। তিনি তাঁর মায়ের প্রভাবের কথাও বলেন এবং কি ভাবে “ ইদলির জন্য ভালোবাসা” তাঁর মনে জন্মায় সে কথাও বলেন আর তাতে দক্ষিণ ভারতের এই প্রধান খাদ্য নিয়ে তাঁর কথা শুনে শ্রোতারা হাসিতে ফেটে পড়েন। তামিল নাড়ুর একজন রাজনৈতিক ভাষ্যকার সুমান্থ রামান বলেন, তিনি যখন ভাইস প্রেসিডেন্টের পদপ্রার্থী হয়েছিলেন তখন উত্তেজনা ছিল কিন্তু “তারপর কোন বড় রকমের উৎসাহ নেই”।

ফাইল-যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কামালা হ্যারিসের শপথ অনুষ্ঠানের আগে শিশুরা তাঁর ছবি ধরে আছে থুলাসেন্দ্রাপুরামের এক হিন্দু মন্দিরে। তামিল নাড়ু রাজ্য, ভারত, জানুয়ারি ২০,২০২১।
ফাইল-যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কামালা হ্যারিসের শপথ অনুষ্ঠানের আগে শিশুরা তাঁর ছবি ধরে আছে থুলাসেন্দ্রাপুরামের এক হিন্দু মন্দিরে। তামিল নাড়ু রাজ্য, ভারত, জানুয়ারি ২০,২০২১।

তিনি বলেন, গত রবিবার বাইডেন এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর পর এবং হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী পদে সমর্থন করার পর তিনি ভারতের ঐ রাজ্যের সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে তেমন ভাবে উঠে আসেননি।

রামান বলেন, “এখানে খবরে জো বাইডেনের সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি শিরোনাম হয়ে ওঠে । কিছু ছিঁটেফোটা প্রসঙ্গ ছাড়া হ্যারিস তাঁর ভারতীয় পরিচিতিতে তেমন গুরুত্ব পাচ্ছেন না”।

আজকের দিনে, তাঁর বৃহৎ পরিবারের তেমন কোন সদস্যও ভারতে নেই। ছোট বেলার সফর ছাড়া, হ্যারিস সে দেশে তেমন একটা যাননি এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তো নয়ই। সেটা একটা কারণ হতে পারে কেন প্রেসিডেন্ট পদের জন্য তার প্রার্থিতা ভারতে তেমন আলোড়ন সৃষ্টি করেনি।

কুগেলম্যান বলেন, তারপরও হ্যারিস যদি ডেমক্র্যাটিক দলের মনোনয়ন পান, তিনিই হবেন এই পদে মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রথম দক্ষিণ এশীয় আমেরিকান এবং সেটাই প্রমাণ করে যে প্রবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে কতখানি এগিয়ে আসছেন।

তিনি আরও বলেন, হ্যারিস এবং ভারতে শেকড় আছে এমন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা- নিকি হ্যালি থেকে শুরু করে বিবেক রামস্বামী কিংবা ঊষা ভ্যান্স – এঁরা সকলের নাম ঘরে ঘরে পরিচিত এবং বলিউডের ছবি ও ভারতীয় খাদ্যের বাইরে, তাঁদের নাম তাঁদের দেশকে তুলে ধরে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট হলে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের চাইতে আমেরিকান রাজনীতি এবং ভারতীয় আমেরিকান সমাজে তার প্রভাব পড়বে প্রচুর।

জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের কূটনীতি ও নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক অধ্যাপক হ্যাপিমন জ্যাকব বলেন, “ ভারতীয়রা যখন কামালা হ্যারিসকে দেখেন, তখন তারা ভারতের বংশজাত বলে নয় একজন আমেরিকান কর্মকর্তা হিসেবেই তাঁকে দেখেন”। জ্যাকব বলেন, তিনি যে ভাইস প্রেসিডেন্ট তার কোন উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েনি ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে। সেই সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে আশা করা যায় চীনকে নিয়ে উদ্বেগের কারণে, তা নভেম্বরের নির্বাচনে যিনিই জয়ী হন না কেন।

ফাইল- ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ওয়াশিংটন সফরের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস পানীয়পূর্ণ পাত্র তুলে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ওয়াশিংটন, জুন ২৩, ২০২৩।
ফাইল- ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ওয়াশিংটন সফরের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস পানীয়পূর্ণ পাত্র তুলে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ওয়াশিংটন, জুন ২৩, ২০২৩।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় গত বছর বাইডেনের আমন্ত্রণে জাঁজমকপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সফরে এসে মোদি মুগ্ধ হয়েছিলেন যেখানে উভয় নেতাই বলেন যে দু দেশের মধ্যকার বন্ধন দৃঢ় হচ্ছে । কিন্তু এই ভারতীয় নেতা প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পেরও কাছের লোকই ছিলেন, যখন ট্রাম্প ২০২০ সালে ভারত সফরে যান তখন তাঁকে দেখার জন্য একটি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে লক্ষাধিক লোক সমবেত হন।

জ্যাকব আরও বলেন , “ সুতরাং আমার মনে হয়, ভারতে একটা বাস্তবতা হচ্ছে দিনের শেষে এই বিষয়গুলোতে কিছু আসে-যায় না”।

হিন্দি সাহিত্যের অধ্যাপক শিবাজি শিন্দে বলেন, হ্যারিস প্রেসিডেন্ট হলে যদি ভারতের প্রতি নীতির কোন পরিবর্তন নাও হয় কিংবা এর ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব নাও পড়ে, তবু তা জাতির জন্য হবে ঐতিহাসিক এবং অর্থবহ একটি মূহুর্ত। মঙ্গলবার নতুন দিল্লিতে শিন্দে বলেন, “ যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বিশ্বের সব চেয়ে শক্তিশালী একটি দেশ। তারা যদি ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজনকে তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে সেটা হবে ভারতের জন্য বিশাল এক ঘটনা এবং প্রতিটি ভারতীয় এর জন্য গর্ব বোধ করবেন”।

হ্যারিসের মায়ের পরিবার এক সময়ে যে গ্রামে থাকতেন সেই থুলাসেন্দ্রাপুরাম গ্রামেও এই খবর পৌঁছে গেছে। সেখানকার এক অধিবাসী সুধাকর জয়রামান বলেন, “আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে এমন একজন যার পূর্ব পুরুষ আমাদের গ্রামের লোক, তিনি ‍যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন”।

তিনি বলেন গ্রামবাসীরা এই সংবাদ শোনার পর স্থানীয় মন্দিরে প্রার্থনা করেন। এই মন্দিরটি হ্যারিস ও তাঁর মাতামহের দান করা।

জয়রামান আরও বলেন, “ ভারতীয় বংশোদ্ভূত যার শেকড় রয়েছে তামিলে এমন এক ব্যক্তির এতো উঁচু পদে যাবার জন্য আমরা সকলেই গর্বিত”।

XS
SM
MD
LG