ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, রবিবার সকালের দিকে ইয়েমেন থেকে নিক্ষেপ করা একটি ক্ষেপণাস্ত্র তারা ভূপাতিত করেছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলাটি আসলো ইয়েমেনের হোদেইদাহ বন্দরে ইসরায়েলি বিমান হামলার কয়েক ঘণ্টা পরেই।
তেল আভিভে শুক্রবার হুথি ড্রোন হামলায় একজন নিহত হবার পর জবাবে ইসরায়েল এই বিমান হামলা চালায়। গাজায় নয় মাস-ব্যাপী যুদ্ধের মাঝে হুথিদের নিয়মিত আক্রমণের পর এই প্রথম ইসরায়েলি জবাব।
একে অপর থেকে দূরে অবস্থিত এই দুই শত্রুর মধ্যে সহিংসতা গোটা অঞ্চলে ইরান-সমর্থিত বিভিন্ন বাহিনীর সাথে ইসরায়েলের লড়াই-এ নতুন রণাঙ্গন খোলার হুমকি সৃষ্টি করছে।
শনিবার হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের হোদেইদাহ বন্দরে ইসরায়েলি যুদ্ধ বিমানের হামলায় ৩জন নিহত ও ৮০ জনেরও বেশি আহত হয়। রবিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে হুথি পরিচালিত সাবা নিউজ এজেন্সি এই পরিসংখ্যান জানায়।
ইরান সমর্থিত হুত্থি বিদ্রোহীদের ড্রোন হামলায় তেল আবিবে এক বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার একদিন পর ইসরায়েল এ হামলা চালালো বলে দুই পক্ষ থেকেই জানা যায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরে আরব উপদ্বীপের দরিদ্রতম দেশ ইয়েমেনে ইসরায়েল এই প্রথম হামলার দায় স্বীকার করেছে।
“ইসরায়েলি নাগরিকদের রক্তের মূল্য আছে,” ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গালান্ট বলেন। তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলি নাগরিকদের উপর হুথিরা “যদি হামলা করার দুঃসাহস দেখায়” তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আবারও অভিযান চালানো হবে।
হামলায় এফ-১৫ জঙ্গিবিমান
গালান্ট বলেন, হোদেইদা হামলা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরান সমর্থিত অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা গাজা যুদ্ধের সময় ইসরায়েলের ওপর হামলার দায় স্বীকার করেছে, তাদের জন্যও একটি সতর্কবার্তা।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, “যেই আমাদের ক্ষতি করুক, তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে।”
এর আগে, তেল আবিবে শুক্রবারের হামলার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই গালান্ট হুথিদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবার অঙ্গীকার করেছিলেন। হুথি বাহিনী ইয়েমেনের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে, যার মধ্যে রয়েছে দেশটির লোহিত সাগর উপকূলের বেশির ভাগ।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি জানিয়েছেন, হামলাতে এফ-১৫ জঙ্গিবিমান ব্যবহার করা হয়েছে এবং সকলে নিরাপদে ঘাঁটিতে ফিরে এসেছে।
সামাজিক মাধ্যমে এক বিবৃতিতে হুথির শীর্ষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুলসালাম “ইয়েমেনের বিরুদ্ধে ইসরাইলের নৃশংস আগ্রাসনের” কথা জানিয়েছেন।
তিন আরও বলেন, গাজা যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বাধা সৃষ্টি করতেই “জ্বালানি সংরক্ষণাগার ও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র” লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে।
এএফপির এক সংবাদদাতা হোদেইদায় বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন এবং ধোঁয়া দেখার কথা জানিয়েছেন।
এর আগে লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা বন্ধের লক্ষ্যে ব্রিটেনের সঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্র হুথিদের বিরুদ্ধে কয়েক দফা বিমান হামলা চালিয়েছে। তবে শনিবারের হামলায় তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না বলে জানিয়েছে তারা।
জাতিসংঘের প্রধান অ্যান্তোনিও গুতেরেস তেল আবিবে ড্রোন হামলার পর এই অঞ্চলে উত্তেজনা এড়াতে “সর্বোচ্চ সংযম” প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকার জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য এবং অন্যান্য আমদানির জন্য হোদেইদা একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। হুথি বাহিনী এবং সৌদি আরব-সমর্থিত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরাকারের মধ্যে এক দশক ধরে চলা যুদ্ধের সময় এই বন্দর মোটামুটি অক্ষত ছিল।