অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

'কমপ্লিট শাটডাউন': বাড্ডায় সংঘর্ষে ১ শিক্ষার্থী নিহত, আহত ২ শতাধিক


কোটা সংস্কারের দাবিতে সংঘর্ষে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এএফপি, ১৮ জুলাই, ২০২৪।
কোটা সংস্কারের দাবিতে সংঘর্ষে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এএফপি, ১৮ জুলাই, ২০২৪।

বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলাকালে রাজধানী ঢাকার বাড্ডায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া, সংঘর্ষে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বাড্ডার এএমজেড হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. আরমান জানিয়েছেন, ওই শিক্ষার্থীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর বুকে একাধিক গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে জানান তিনি।

এ ছাড়া, সকাল থেকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি) ও কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ২০০ জনের বেশি শিক্ষার্থী হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিয়েছেন।

মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়া একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ডা. আরমান। এ ছাড়া, পাঁচজন এখনো তাদের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানান তিনি।

বাড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে পড়া পুলিশ সদস্যদের হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার

এদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলাকালে বাড্ডায় কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভেতরে আটকে পড়া ৬০ পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যরা।

বৃহস্পতিবার তাদের উদ্ধার করে র‌্যাব।

‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলাকালে ঢাকার বাড্ডায় কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভেতরে আটকে পড়া ৬০ পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করেছে র‍্যাব।
‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলাকালে ঢাকার বাড্ডায় কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভেতরে আটকে পড়া ৬০ পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করেছে র‍্যাব।

র‌্যাবের সদর দপ্তরের মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ইমরান খান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় (কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি) ভবন থেকে হেলিকপ্টারে করে প্রায় ৬০ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে হেলিকপ্টারে করে আনা হয়েছে।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে ওই এলাকায় কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।

এক পর্যায়ে কোটা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া খেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ঢুকে পড়েন। এরপর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সেখানে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন।

অচল রাজধানী ঢাকা, বিভিন্ন স্থানে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলাকালে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দাঙ্গা পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকার বাড্ডা, মেরুল, উত্তরা, ধানমন্ডি, মতিঝিল ও আরামবাগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষকালে পুলিশকে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে দেখা গেছে।

পুলিশ ও বিজিবির সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি উপেক্ষা করে বাড্ডা ও এর আশপাশের এলাকায় রাস্তায় নেমে আসে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও এর কাছাকাছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা।

উত্তরায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে শুরু করলে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন আবাসিক এলাকাগুলোর অলি-গলিতে ছড়িয়ে যেতে থাকে। অলি-গলিতে সংঘর্ষে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাসিন্দারা।

শাটডাউনের সকালে রাজধানীর চিরচেনা যান চলাচল ছিল না। প্রায় ফাঁকা রাস্তায় কয়েকটি বিআরটিসির দ্বিতল বাস চলতে দেখা যায়। গণপরিবহনের অনুপস্থিতিতে রাজপথ ছিল রিকশার দখলে। কোনো গণপরিবহন না থাকায় হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে অনেককে।

এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ভাষণে কোটা প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের রায় না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে আন্দোলনকারীদের প্রতি আহ্বান জানান। রায় নিয়ে তারা হতাশ হবে না বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া, আন্দোলন চলাকালে হত্যাকাণ্ডের অপরাধীদের চিহ্নিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও নির্দেশ দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পরপরই শাটডাউনের ডাক দেয় শিক্ষার্থীরা।

কুমিল্লায় পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউনে কুমিল্লার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কুমিল্লার কোটবাড়িতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

এক পর্যায়ে পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ ও বিজিবি শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে।

এর আগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মহাসড়কে এসে ব্যারিকেড দেয়।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সাকিব জানান, পুলিশের ছোড়া গুলিতে অন্তত ১০০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

আহতদেরকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও সদর মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র‌্যাব

২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দফতর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়।

ওই কর্মকর্তারা হলেন র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খান। তাঁদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।

এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র‍্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত।

বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র‍্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র‍্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছেন বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।

XS
SM
MD
LG