সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের প্রতিবাদে, আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে দেশবাসীসহ সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার(১৬ জুলাই) ঢাকায় আয়োজিত এক আলোচনা সভায়, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলাকে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ‘জঘন্যতম’ ঘটনা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “হাসপাতালের বেডে শুয়ে রক্তাক্ত শিক্ষার্থীরা তাদের রক্ষা করতে, তাদের পাশে দাঁড়াতে এবং তাদের আন্দোলনের সঙ্গে থাকার জন্য আমাদের আহবান জানাচ্ছে। এটা বাংলাদেশের আবেদন... আমি মনে করি পুরো জাতির এই আহবানে সাড়া দেয়া উচিত। সব রাজনৈতিক দলের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো।”
“আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী ও ভয়ানক শাসন থেকে মুক্তি পেতে দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষকে আন্দোলনে অংশ নিতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে হবে;” যোগ করেন মির্জা ফখরুল।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার তীব্র নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, “গতকাল (১৫ জুলাই) এই সরকার যা করেছে, বাংলাদেশে এর আগে তা কখনো দেখিনি। ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের কখনো হাসপাতালে ঢুকে আহতদের ওপর হামলা করতে দেখিনি। এটা আমরা কখনো ভাবতে পারি না, এমনকি পাকিস্তান আমলেও না।”
ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতার কথা জাতিকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি আরো বলেন, সরকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমনের জন্য তার সশস্ত্র ক্যাডারদের নামিয়েছে। “তারা (সরকার) ভয়াবহ দমন-পীড়ন চালিয়ে শিক্ষার্থীদের দমন করার চেষ্টা করছে;” বলেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আওয়ামী লীগ ঐতিহ্য হারিয়ে এখন দেউলিয়া রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে তাদের তথাকথিত শক্তি এবং আমলা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে; যারা বাংলাদেশকে একটি সম্পূর্ণ ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।”
হামলার নিন্দায় ওবায়দুল কাদের
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের ওপর হামলা হয়েছে উল্লেখ করে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) আওয়ামী রীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই নিন্দা জানান।ওবায়দুল কাদের বলেন, “এই বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ রাজাকারদের পক্ষে কথা বলছে। এর পেছনে বিএনপি-জামায়াতের হাত আছে এটা স্পষ্ট।”
“দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে টার্গেট করে যে কোনো আন্দোলনকে প্রতিহত করা হবে। ধৈর্য মানে নীরবতা নয়;” বলেন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোটা আন্দোলনের পেছনে ষড়যন্ত্রকারী চক্র রয়েছে। অতীতে বিএনপি রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছে। তারা অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। কিন্তু তাদের আন্দোলনে সাড়া মেলেনি। জনগণের শক্ত অবস্থানের কাছে তারা পরাজিত হয়েছে।
তারেক রহমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছেন বলে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, “তার দল বিএনপি প্রকাশ্যে এতে সমর্থন দিয়েছে। তারা একটি অরাজনৈতিক ইস্যুকে রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করছে।”
“বিএনপি জনগণকে বিভ্রান্ত করতে কোটা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করছে। কোটা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতদের প্রধানমন্ত্রী রাজাকার বলেননি;” যোগ করেন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনে যোগ দিতে বাধ্য করছে। গতকাল (১৫ জুলাই) বিনা উসকানিতে তারা সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে ছাত্রলীগের অন্তত ৫০০ নেতাকর্মী আহত ও দুই নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। অপপ্রচারের জন্য ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতার ভুয়া ছবি বিভিন্ন পেজে ছড়িয়ে পড়ছে; আরো জানান তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “কোটা সংস্কার আদালতের বিষয়। আদালতের বাইরে বল প্রয়োগ বা অন্য কোনো উপায়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার উপায় বা সুযোগ নেই।”