অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

কোটা সংস্কার আন্দোলন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাতভর সংঘর্ষ


কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর রড ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ১৫ জুলাই, ২০২৪।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর রড ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ১৫ জুলাই, ২০২৪।

ছাত্রলীগের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের পর সোমবার (১৫ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল, অমর একুশে হল ও ফজলুল হক হলের নিয়ন্ত্রণ নেয় শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (১৫ জুলাই) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর রড ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর আবার হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এমন প্রেক্ষাপটে, তিনটি হল থেকে শিক্ষার্থীরা পাল্টা হামলা চালায় এবং ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া করে।

বিজ্ঞান অনুষদ এলাকার হলের শিক্ষার্থীরা, ছাত্রলীগ নেতাদের কক্ষ ভাঙচুর করে এবং তাদের হল থেকে বের করে দেয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বারবার বিজ্ঞান অনুষদের হল দখলের চেষ্টা করলে, ১৫ জুলাই দিবাগত রাত ২টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে।

কবি জসীমউদ্দীন হলের দুই আবাসিক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী মোটরসাইকেলে করে সেখানে পৌঁছালে, সংঘর্ষ তীব্রতর হয়। তাদের মধ্যে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী হেদায়েতুল ইসলাম অমর একুশে হলের শিক্ষার্থীরা মারধর করে এবং তার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।

পরে ছাত্রলীগের ২০-৩৫ জনের একটি দল মোটরসাইকেলে কর অমর একুশে হলে আসে। নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হলে, শিক্ষার্থীরা তাদের আটটি মোটরসাইকেল আটক ও ভাঙচুর করে।

এরপর, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ছাত্রলীগ নেতারা শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন চেক করে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থকদের টার্গেট করে মারধর করে।

আতঙ্কে ক্যাম্পাস ত্যাগ

সংঘর্ষের ফলে ক্যাম্পাসে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, অনেক শিক্ষার্থী গভীর রাতে এবং মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ভোরে তাদের জিনিসপত্র নিয়ে হল থেকে পালিয়ে গেছেন।

বিজয় একাত্তর হলের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমি হলে থাকলে আমাকে ও আমার সহপাঠীদের ওপর হামলাকারীদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হবে। গত দুই বছর ধরে ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছি। আমি যদি এখন তাদেরকে সহযোগিতা করি, তবে নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারব না। চলে যাওয়াই ভালো।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরবতা

চলমান সহিংসতা সত্ত্বেও, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরা দৃশ্যত নীরব রয়েছেন। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন যে কোনো প্রশাসনিক কর্মকর্তা আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে হাসপাতালে যাননি বা হামলার বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেননি।

তবে কয়েকজন শিক্ষক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।

ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিজ্ঞান অনুষদের হলে পাথর নিক্ষেপ করছে। ১৬ জুলাই দিবাগত রাত ৩টার দিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের রাজু ভাস্কর্যের সামনে রড, লাঠি, স্টিলের পাইপ ও হকিস্টিক নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় এবং স্লোগান দিতে দেখা যায়।

জরুরি সভা

সংকট মোকাবেলায়, উপাচার্য অধ্যাপক এ কে এম মাকসুদ কামালের বাসভবনে জরুরি প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা ডাকা হয়। কমিটির সিদ্ধান্ত হয়, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অছাত্রদের প্রবেশ ঠেকাতে সব প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটর রাতে হলে অবস্থান করবেন।

অবরোধ

সোমবারের (১৫ জুলাই) দিন ও রাতের ঘটনার পর, কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সারা দেশে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

অবরোধের কারণে, রাজধানী ঢাকা এবং ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী প্রধান মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিঘ্নিত হয় রেল যোগাযোগ।

এর আগে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থক ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার প্রতিবাদে, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সারা দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হয়। এই সমাবেশ কার্যত মাহাসড়ক অবরোধে রূপ নেয়।

XS
SM
MD
LG