অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

কোটা সংস্কার আন্দোলন: মঙ্গলবার দেশের সব ক্যাম্পাসে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা


ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার প্রতিবাদে সারা দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার প্রতিবাদে সারা দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে।

বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থক ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার প্রতিবাদে, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সারা দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে।

সোমবার (১৫ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন কোটা আন্দোলনের মুখপাত্র ও অন্যতম সংগঠক নাহিদ ইসলাম।

কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে, সারাদেশের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি এবং কর্মসূচি সফল করতে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত হওয়ার আহবান জানান।

ছাত্রলীগের হামলা

বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলায় ২৫০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থী ও হাসপাতাল সূত্র।

সোমবার (১৫ জুলাই) বিকাল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সামনে আন্দোলন কর্মী ও ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।

সংঘর্ষ বিকাল ৪টা পর্যন্ত সংঘর্ষ স্থায়ী হয়। ছাত্রলীগ কর্মীরা লাঠি, স্টাম্প ও লোহার রড দিয়ে আন্দোলনকারীদের আঘাত করতে দেখা গেছে। এসময় অনেকে আহত হন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায় আহত অবস্থায় ২০০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সামনে আন্দোলন কর্মী ও ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা শুরু হয়। ১৫ জুলাই, ২০২৪।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সামনে আন্দোলন কর্মী ও ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা শুরু হয়। ১৫ জুলাই, ২০২৪।

হামলার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনার পর ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এর আগে, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমবেত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন।

কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, দুপুরে ইডেন মহিলা কলেজ থেকে কয়েক জন কোটা সংস্কার আন্দোলন কর্মী সমাবেশে যোগ দিতে বের হন। এ সময় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা গেটে তালা লাগিয়ে তাদের বাধা দেন। এতে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে এবং বেশ কয়েকজন আহত হন।

এ ঘটনায় আহতরা হলেন; সায়মা আফরোজ, শাহিনুর সুমি, সুমাইয়া আক্তার ও সানজিদা হক। আহতদের মধ্যে একজনকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের বিরোধিতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে রবিবার (১৪ জুলাই) গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন।

‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে একটি প্লাটফরমের আহবানে রবিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। বিক্ষোভে ছাত্রীরাও অংশ নেন।

মির্জা ফখরুলের নিন্দা

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের 'ক্যাডার' ও পুলিশকে যারা লেলিয়ে দিয়েছে তারা মানবতা বিবর্জিত।

সোমবার (১৫ জুলাই) এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, “যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে মিলে শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংসভাবে হামলা চালায়, তারা মানবতাবিরোধী ও অমানবিক। যারা দুর্নীতি ও সহিংসতায় লিপ্ত, তারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন নিয়েও সন্দেহ পোষণ করেন।”

“লুটপাটের আদর্শে পরিচালিত সরকারের মাধ্যমে কখনো জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই সম্মিলিত কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে তারা চরম বর্বরতার আশ্রয় নিয়েছে। কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগের ক্যাডারদের কাপুরুষোচিত হামলার ও ঘৃণ্য ঘটনার জন্য আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি;” তিনি যোগ করেন।

বিএনপি মহাসচিব আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন এবং হামলাকারীদের শাস্তি দাবি করেন। তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশে শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনে সরকার উদ্বিগ্ন ও মরিয়া হয়ে উঠেছে। “তাই আন্দোলন দমনের জন্য রাষ্ট্রশক্তিকে এখন নির্দয়ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এটাই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য;” বলেন বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার কোটা ইস্যুতে প্রতিনিয়ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। কারণ মানুষকে ধোঁকা দেয়া আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে ভিন্ন পদ্ধতিতে তা পুনর্বহাল করেছেন।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিকে রক্তাক্ত করার মাধ্যমে দমন করার চেষ্টা করছে। তাদের হাতে জনগণ, রাষ্ট্র, সমাজ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব কখনো নিরাপদ নয়; আরো বলেন তিনি।

তিনি বলেন, “ক্ষমতাসীন আওয়ামী মহল ভয়ংকর দমন-পীড়নের মাধ্যমে দেশের জনগণকে চুপ করিয়ে দিতে চায়। সাধারণ ছাত্রদের চলমান আন্দোলন দমনের মনোভাব আওয়ামী সরকার যেমন গ্রহণ করেছে, তেমনি গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের ওপর স্টিমরোলার চালাচ্ছে। তাই এ ধরনের পৈশাচিক কর্মকাণ্ডে জড়িত সন্ত্রাসীদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।”

'বিএনপি-জামায়াতের ভূমিকা উন্মোচিত হয়েছে': ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, তারা পুরো ছাত্রসমাজকে সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে।

সোমবার (১৫ জুলাই) বিকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ১৫ জুলাই, ২০২৪।
ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ১৫ জুলাই, ২০২৪।

ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে কোনো জনদুর্ভোগ সরকার সহ্য করবে না। “যে কোনো অশুভ শক্তিকে দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করা হবে;” আরো বলেন তিনি।

এই আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোর সম্পৃক্ততা ও প্রকাশ্য সমর্থন রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের। বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ করছিলাম কোটা সংস্কার আন্দোলন ছদ্মবেশে সরকার বিরোধী আন্দোলনের রূপ ধারণ করছে। তাদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী স্লোগানের মধ্য দিয়ে তা স্পষ্ট হয়েছে।”

বিচার বিভাগে বিবেচনাধীন বিষয়ে মতামত প্রকাশ করা আদালত অবমাননার শামিল; বলেন ওবায়দুল কাদের। রাজাকার পরিচয় সম্পর্কিত স্লোগানকে জাতীয় মৌলিক মূল্যবোধের অবমাননা বলে নিন্দা জানান তিনি। বলেন, “ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে স্বঘোষিত রাজাকারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।”

XS
SM
MD
LG