ফ্লোরিডায় ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপনীয় নথি সংক্রান্ত মামলা ফেডেরাল বিচারক সোমবার (১৫ জুলাই) বাতিল করেছেন। ট্রাম্পের আইনজীবীরা যুক্তি দেখিয়েছিলেন, যে বিশেষ কাউন্সেল (কৌঁসুলি) মামলার দায়ের করেছিলেন, তাকে জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট বেআইনিভাবে নিয়োগ করেছিল। মামলার বিচারক বিবাদীপক্ষের যুক্তি গ্রহণ করে মামলা বাতিল করে দেন।
যুক্তরাষ্ট্র ডিসট্রিক্ট জাজ আইলিন ক্যাননের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে এবং ঊর্ধ্বতন আদালত তাঁর সিদ্ধান্ত পাল্টেও দিতে পারে। এই ফৌজদারি মামলা যখন দায়ের করা হয় তখন অনেকে সেটাকে রিপাবলিকান প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের সামনে আইনগত চ্যালেঞ্জ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক বলে মনে করেছিলেন। জাজ ক্যাননের সিদ্ধান্ত, অন্তত এখনকার মত, এই মামলার হঠাৎ এক বিস্ময়কর সমাপ্তি ঘটালো।
যদিও মামলাটি অনেক দিন ধরে আটকে ছিল এবং নভেম্বরের নির্বাচনের আগে বিচারকার্য শুরু হওয়ার সম্ভাবনা এর মধ্যেই অবাস্তব হয়ে উঠেছিল, বিচারকের আদেশ ট্রাম্পের জন্য এক বিশাল আইনগত বিজয়। ট্রাম্প শনিবার (১৩ জুলাই) হত্যা প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে গিয়ে সুস্থ হচ্ছেন এবং এ’সপ্তাহে মিলওয়াকিতে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন গ্রহণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা চারটি ফৌজদারি মামলার একটিতে ট্রাম্প কয়েক ডজন অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। অভিযোগ করা হয় যে, তিনি ফ্লোরিডার পাম বিচে তাঁর মার-এ-লাগো এস্টেটে রাষ্ট্রীয় গোপনীয় নথিপত্র বেআইনিভাবে জমা করে রেখেছিলেন এবং সেগুলো উদ্ধার করার কাজে তদন্ত সংস্থা এফবিআই-কে বাধা দিয়েছেন। ট্রাম্প অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
ট্রাম্পের আইনজীবীরা মামলার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ দায়ের করেন। তার মধ্যে একটি ছিল আইনগত দিক থেকে টেকনিকাল, যেখানে বলা হয় সংবিধানের অ্যাপয়েন্টমেন্টস ক্লজের অধীনে বিশেষ কাউন্সেল জ্যাক স্মিথ-এর নিয়োগ বেআইনি ছিল, কারণ তাঁকে অ্যাটর্নি জেনেরাল মেরিক গারল্যান্ড কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া নিয়োগ করেছিলেন। আরও বলা হয় যে বিশেষ কাউন্সেলের দফতর অর্থায়নে জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট অনিয়ম করেছে।
ক্ষমতার পৃথকীকরণ
বিচারক ক্যানন মামলা বাতিল করতে ট্রাম্পের আইনজীবীদের অনুরোধ মঞ্জুর করে ৯৩ পাতার আদেশ লেখেন, যেখানে তিনি বলেন, “বিশেষ কাউন্সেলের অবস্থান কার্যতভাবে আইনপ্রণেতাদের গুরুত্বপূর্ণ কর্তৃত্ব দখল করে নিয়ে সেটা ডিপার্টমেন্ট প্রধানের কাছে স্থানান্তর করেছে। এর ফলে, ক্ষমতা আলাদা করার ভেতরে স্বাধীনতার যে কাঠামো, তা হুমকির মুখে পড়েছে।”
“যদি রাজনৈতিক শাখাগুলো বিশেষ কাউন্সেল স্মিথকে একজন যুক্তরাষ্ট্র অ্যাটর্নির পূর্ণ ক্ষমতাসহ এই মামলা তদন্ত এবং পরিচালনার জন্য নিয়োগ করার জন্য অ্যাটর্নি জেনেরালকে ক্ষমতা দিতে চায়, তাহলে সেটা করার জন্য উপযুক্ত রাস্তা আছে,” তিনি বলেন।
তিনি বলেন সেই রাস্তা হচ্ছে কংগ্রেসের অনুমোদন দিয়ে।
বিচারক ক্যাননকে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন নিয়োগ করেছিলেন, এবং তাঁর এই আদেশ হচ্ছে সর্বশেষ উদাহরণ যেখানে তিনি মামলা তদারকি করেছেন এমনভাবে যেটা প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের পক্ষে গেছে।
তিনি ২০২২ সালের অগাস্ট মাসে মার-এ-লাগো থেকে উদ্ধার করা গোপনীয় নথিপত্র পরীক্ষা করে দেখার জন্য একজন স্বতন্ত্র বিচারক নিয়োগ করে এফবিআই-এর তদন্তের সময় গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করেন। কয়েক মাস পরে তাঁর সিদ্ধান্ত একটি ফেডেরাল আপিল প্যানেল সর্বসম্মতিক্রমে বাতিল করে দেয়।
বিচারকার্য ট্রাম্পের পক্ষে
তখন থেকে, রুল জারি করার ক্ষেত্রে তিনি ধীর গতিতে চলেছেন – যেটা মামলার কাজ বিলম্বিত করতে ট্রাম্পের কৌশলকে সহায়তা করেছে। তিনি এমন যুক্তিতর্ক গ্রহণ করেছেন যেটা বিশেষজ্ঞদের মতে অন্যান্য বিচারক শুনানি ছাড়াই প্রত্যাখ্যান করতেন। মে মাসে তিনি বেশ কয়েকটি অমীমাংসিত আইনগত ইস্যুর মাঝে বিচারের তারিখ অনির্দিষ্ট কালের জন্য বাতিল করেন।
বিশেষ কাউন্সেল স্মিথের আইনজীবীরা গত মাসে বিচারকের সামনে বিবাদী পক্ষের যুক্তির বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য দেন। তারা বিচারককে বলেন, তিনি যদি ট্রাম্পের আইনজীবীদের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেনও, মামলা বাতিল করা উপযুক্ত পদক্ষেপ হবে না। স্মিথ-এর আইনজীবীরা উল্লেখ করেন যে, অন্যান্য আদালতে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের নিয়োগ করা বিশেষ কাউন্সেলের বিরুদ্ধে এ’ধরনের যুক্তি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
তবে বিচারক ক্যানন তাঁর মতে স্থির থাকেন, এবং তিনি বাদীপক্ষের দাবিকে “জড়তাপূর্ণ” বলে অভিহিত করেন।
স্মিথ টিমের মুখপাত্র সোমবার প্রতিক্রিয়ার জন্য অনুরোধের জবাব তাৎক্ষণিক দেন নি, এবং ট্রাম্পের টিমও সাথে সাথে কোন মন্তব্য করে নি।