চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে, দাবির বিষয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে এবং পুলিশের দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে চূড়ান্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (১৪ জুলাই) বেলা বিকেল তিনটার দিকে রাজধানী ঢাকার জিপিওর কাছে এ সময়সীমা ঘোষণা করেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, “আমরা সরকারের কাছ থেকে আশ্বাস পাচ্ছি না। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে আমরা সংসদে আমাদের এক দফা দাবির বিষয়টি উত্থাপনের জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছি। আমরা চাই তিনি আইন পাসে ভূমিকা রাখবেন এবং জাতীয় সংসদের জরুরি অধিবেশন ডাকবেন।”
নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, রাষ্ট্রপতি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংসদ অধিবেশন ডেকে সেখানে দাবির বিষয়ে আইন পাসে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেন।
“আমরা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে এই সমস্যা সমাধানে দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চাই। জনদুর্ভোগ হোক এমন কোনো কর্মসূচি নিতে আমাদের বাধ্য করবেন না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিন;” আরো বলেন নাহিদ ইসলাম।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: ‘যৌক্তিকতা না থাকলে মামলা বাতিল হতে পারে’
ঢাকার শাহবাগ থানায় কোটাবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশের গাড়ি ভাংচুর ও হামলার অভিযোগ তুলে যে মামলা হয়েছে, তার যৌক্তিকতা না থাকলে বাতিল হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
রবিবার(১৪ জুলাই) দুপুরে শিল্পকলা একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা বুঝে এসব করছে বলে মনে হয় না।”
তিনি আরো বলেন, সুপ্রিম কোর্ট থেকে একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে; আগামী ৮ আগস্ট শুনানি হবে। শুনানিতে তাদের (শিক্ষার্থীদের) অংশগ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
“তারা তা না করে, রাস্তা অবরোধ করছে। এগুলো সবকিছু এখন বিচার বিভাগের কাছে। সরকারের হাতে কিছু নেই;” যোগ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।অ
শিক্ষার্থীদের আলটিমেটাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে মামলা করতে পারে। মামলা তদন্তের পর যদি ম্যারিট (যৌক্তিতা) না থাকে তবে অটোমেটিক বাতিল হয়ে যেতে পারে। সেখানে ২৪ ঘণ্টা কিংবা ২৪ দিনের কোনো প্রশ্ন আসে না।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ভুল পথে নেয়ার লোকের অভাব নেই। সেই ধরনের ঘটনা ঘটছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কারা উসকানি দিয়েছে এবং কারা দায়ী সবগুলো বিষয় তদন্তের পর বলা যাবে।
“যেহেতু একটি ঘটনা ঘটেছে, এর তদন্ত হবে। তদন্তের পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। তদন্তের আগে আমি কিছু বলতে পারছি না;” বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
সংসদীয় কমিটিতে কোটা
কোটা পদ্ধতির সিদ্ধান্ত আদালতে প্রক্রিয়াধীন থাকায়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে চলমান নিয়োগ কার্যক্রম পেছানোর সুপারিশ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সংসদ ভবনে স্থায়ী কমিটির সভাপতি এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকে কমিটির সদস্য এসএম রেজাউল করিম, আবদুর রহমান, বিএম কবিরুল হক, ছোট মনির, নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, মো. রশিদুজ্জামান, মোশতাক আহমেদ রুহী, মশিউর রহমান মোল্লা সজল, আশিকা সুলতানা এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কোটা পদ্ধতি প্রসঙ্গে আপিল বিভাগ
এদিকে, সারাদেশে শিক্ষার্থীদের চলমান ‘বাংলা ব্লকেডের’ মধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বহাল রেখে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের ওপর ৪ সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছে আপিল বিভাগ।
বুধবার (১০ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির বেঞ্চ কোটা সংস্কার নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষার্থীর করা আবেদনের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
শিক্ষার্থীদের পক্ষের আইনজীবী জহিরুল ইসলাম জানান, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ৪ সপ্তাহের মধ্যে লিভ-টু-আপিল করতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আর, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহবান জানিয়েছে।
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) আপিল বিভাগে আবেদন করেন ২ জন কোটা আন্দোলনকারী। বুধবার (১০ জুলাই) আপিল বিভাগ এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করে চেম্বার আদালত।
এর আগে ৪ জুলাই রিট আবেদনকারীর আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি মুলতবি করে আপিল বিভাগ।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে এ বছরের ৫ জুন রায় দেয় হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে ৪ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আসে। রিট আবেদনকারী পক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন আপিল বিভাগ নট টুডে (৪ জুলাই নয়) বলে আদেশ দেয়। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়।
এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী ৯ জুলাই আবেদন করেন। দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য ১০ জুলাই আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে স্থিতাবস্থার আদেশ দেয় আপিল বিভাগ।