বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার শাহবাগে 'পুলিশের কাজে বাধা' ও 'ভাঙচুরের' অভিযোগে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
শুক্রবার (১২ জুলাই) রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের পরিবহন সুপারভাইজার খলিলুর রহমান বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে কোটা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের গাড়িতে হামলা ও পুলিশ সদস্যদের মারধরের অভিযোগ আনা হয়।
রমনা জোনের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ আশরাফুল বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় শাহবাগে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়েছিলো। পরে, সেটি অতিক্রম করার সময় গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
হুঁশিয়ারি ডিএমপির
এর আগে ১১ জুলাই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. মহিদ উদ্দিন জানিয়েছিলেন, বাংলা ব্লকেডের নামে যারা সড়ক অবরোধ করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। মহিদ উদ্দিন বলেন, সড়ক অবরোধের মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা বিদ্যমান আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
“গতকাল (১০ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়ে ২০১৮ সালের সার্কুলার বহাল রেখেছে । ফলে সার্কুলারটি এই সময় পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তাই বিক্ষোভের মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির কোনো যৌক্তিকতা নেই;” জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার।
তিনি আরো বলেন, “শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও সহানুভূতি আছে। কিন্তু বিদ্যমান আইন ও সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে । “শিক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে আমি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এমন কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করবেন না । ২০১৮ সালের সার্কুলার এখনো বলবৎ আছে;” তিনি যোগ করেন।
মহিদ উদ্দিন আরো বলেন, “১০ জুলাই আন্দোলনকারীরা ২১ জায়গায় অবরোধ করেছে । ঢাকাবাসীর অবাধ চলাচল নিশ্চিত করে আমরা পেশাদারিত্বের সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি। যেহেতু আদালত বিষয়টি নিষ্পত্তি করেছেন, আমরা আশা করছি আর জনগণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে না।”
“আন্দোলনের একটি যৌক্তিক ভিত্তি থাকা উচিত। বর্তমানে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ আন্দোলনকারীদের পক্ষেই। আন্দোলনে যুক্তি না থাকলে তা চালিয়ে যাওয়া উচিত নয়। আমরা শিক্ষার্থীদের এসব কর্মসূচি বন্ধ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। এতে ঢাকাবাসী সহ সবার উপকার হবে এবং আমাদের বিচার ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে;” তিনি আরো বলেন
বিক্ষোভ চলতে থাকলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “শান্তভাবে এই পরিস্থিতিগুলো সামলে নেয়া আমাদের কাজের ধরন এবং এভাবেই কাজ করবো। আমরা আশা করি, বিক্ষোভকারীরা তাদের অবস্থান বুঝতে পারবেন, বিশেষ করে আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে। যেহেতু ২০১৮ সালের সার্কুলার এখনো কার্যকর আছে, সেহেতু আন্দোলনের কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই।"
কোটা পদ্ধতি প্রসঙ্গে আপিল বিভাগ
এদিকে, সারাদেশে শিক্ষার্থীদের চলমান ‘বাংলা ব্লকেডের’ মধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বহাল রেখে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের ওপর ৪ সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছে আপিল বিভাগ।
বুধবার (১০ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির বেঞ্চ কোটা সংস্কার নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষার্থীর করা আবেদনের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
শিক্ষার্থীদের পক্ষের আইনজীবী জহিরুল ইসলাম জানান, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ৪ সপ্তাহের মধ্যে লিভ-টু-আপিল করতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আর, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহবান জানিয়েছে।
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) আপিল বিভাগে আবেদন করেন ২ জন কোটা আন্দোলনকারী। বুধবার (১০ জুলাই) আপিল বিভাগ এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করে চেম্বার আদালত।
এর আগে ৪ জুলাই রিট আবেদনকারীর আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি মুলতবি করে আপিল বিভাগ।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে এ বছরের ৫ জুন রায় দেয় হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে ৪ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আসে। রিট আবেদনকারী পক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন আপিল বিভাগ নট টুডে (৪ জুলাই নয়) বলে আদেশ দেয়। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়।
এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী ৯ জুলাই আবেদন করেন। দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য ১০ জুলাই আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে স্থিতাবস্থার আদেশ দেয় আপিল বিভাগ।