বাংলাদেশের যমুনা নদীর পানি আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকায়, আগাম পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। শুক্রবার (১২ জুলাই) ডব্লিউএফপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
যমুনা অববাহিকার কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, বগুড়া ও জামালপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলাকে কেন্দ্র করে কাজ করছে ডব্লিউএফপি। এই জেলাগুলোতে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বন্যা কবলিত অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএফপি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর ওপর আসন্ন বন্যার প্রভাব প্রশমিত করতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।। এটি এখন পর্যন্ত ডব্লিউএফপির সবচেয়ে বড় আগাম পদক্ষেপ। নদীর তীরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পানির স্তর আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের (এফএফডব্লিউসি)।
ডব্লিউএফপির অংশীদার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে; কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কোইকা), ইউরোপীয় কমিশনের মানবিক সহায়তা বিভাগ (ইসিএইচও), সেন্ট্রাল ইমার্জেন্সি রেসপন্স ফান্ড (সিইআরএফ) এবং জার্মানি ও আয়ারল্যান্ড সমর্থিত অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন (এএ)-ট্রাস্ট ফান্ড।
এছাড়াও রয়েছে; বাংলাদেশের মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রতিক্রিয়া মন্ত্রণালয় এবং আরো কিছু দাতা সংস্থা। প্রাক-অর্থায়নে সর্বকালের বৃহত্তম মানবিক সহায়তা দিয়েছে। যমুনা অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় ডব্লিউএফপি ও এর অংশীদাররা প্রাক-অর্থায়নের মাধ্যমে সর্বকালের বৃহত্তম মানবিক সহায়তা দিচ্ছে।
বাংলাদেশে ডব্লিউএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডোম স্ক্যালপেল্লি বলেন, “আমরা আমাদের দাতাদের সমর্থনের জন্য গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। তাদের কারণে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে এই আসন্ন বিপর্যয়ের মুখে দ্রুত এবং কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হচ্ছে। অরক্ষিত অবস্থানে থাকা পরিবারগুলো যেন এই দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সহায়তা পায়, সেজন্য আমাদের কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছে।’
প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব কমাতে, ডব্লিউএফপির অন্যতম পদক্ষেপ হলো আগাম প্রস্তুতি। বন্যার পানি বিপজ্জনক অবস্থায় যাওয়ার আগেই, জীবন ও জীবিকা রক্ষা, সম্পত্তির ক্ষতি রোধ এবং দীর্ঘমেয়াদি মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা কমানো ডব্লিউএফপির লক্ষ্য।
যমুনা অববাহিকায় ইতোমধ্যেই বন্যা পরিস্থিতিতে বিরাজ করছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএফপি। বলেছে, প্রায় ৫০ লাখ মানুষ, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বন্যাদুর্গত অবস্থায় আছে। অনেককে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় অবস্থান করতে হচ্ছে। এছাড়া খাবার ও নিরাপদ পানির অভাবে ভুগছে তারা।
ডোম স্ক্যালপেল্লি বিবৃতিতে আরো বলেন, বন্যাদুর্গতদের তাৎক্ষণিক ত্রাণ সরবরাহের জন্য নয় বরং তারা যেন ভবিষ্যতে বন্যার বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকতে পারে এবং পূর্বপ্রস্তুতিকে গুরুত্ব দেয়; সেই লক্ষ্যে এই পদক্ষেপগুলো নেয়া হয়েছে। “স্থানীয় অংশীদার ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিলে, এই প্রচেষ্টাগুলো টেকসই ও কার্যকর করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ;” বলেন ডোম স্ক্যালপেল্লি।
বিস্তৃত ও সফল কর্মসূচির জন্য প্রত্যাশিত কর্ম পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থা ও স্থানীয় সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে ডব্লিউএফপি।
কার্যক্রম চালাতে গিয়ে ডব্লিউএফপি ১ কোটি ৩২ লাখ ডলারের তহবিল ঘাটতিতে পড়েছে। এ অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সহায়তায় দাতা সদস্যদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছে ডব্লিউএফপি।
সহায়তায় অন্তর্ভুক্ত বিষয়
আগাম সহায়তার আওতায় রয়েছে; বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণের চার দিন আগে ৮১ হাজারের বেশি পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে সহায়তা প্রদান।
আগাম অ্যান্টিসিপেটরি শক রেসপন্সিভ সোশ্যাল প্রটেকশন কর্মসূচির আওতায় রয়েছে; পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আগে, বন্যাকবলিত অঞ্চলে বসবাসরত ৮ হাজার ১০০ জনের বেশি সরকারি সামাজিক সুরক্ষা সহায়তা গ্রহীতাদের বাড়তি সহায়তা প্রদান।
এছাড়া, ২০ হাজারের বেশি পরিবারকে বন্যা বিমার আওতাভুক্ত করা এই কর্মসূচির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।