অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

'কোটা নিয়ে কেউ রাজনীতির চেষ্টা করলে রাজনৈতিকভাবে জবাব দেব,' বলেছেন ওবায়দুল কাদের


কোটা বিরোধী আন্দোলনে অবরোধের সময় একজন ছাত্র রেল লাইনের উপর শুয়ে পড়ে। ফটোঃ ১০ জুলাই, ২০২৪।
কোটা বিরোধী আন্দোলনে অবরোধের সময় একজন ছাত্র রেল লাইনের উপর শুয়ে পড়ে। ফটোঃ ১০ জুলাই, ২০২৪।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আদালতের নির্দেশনা মেনে অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের আবেগকে কাজে লাগিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের কোটা বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন।

বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কোটাবিরোধী আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির আকাঙ্ক্ষা পূরণ হতে দেবে না আওয়ামী লীগ। এই অরাজনৈতিক আন্দোলন নিয়ে কেউ রাজনীতি করার চেষ্টা করলে আমরা রাজনৈতিকভাবে তার জবাব দেব।

এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বানও জানান তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, কিছু কুচক্রী গোষ্ঠী দেশকে অস্থিতিশীল ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। গত পাঁচ বছরে কোটার অনুপস্থিতি নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত করেছে। একটি বৈচিত্র্যময় ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ গঠনের জন্য কোটা অপরিহার্য।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ফাইল ফটো।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ফাইল ফটো।

তিনি বলেন, “কোটা কোনো ধরনের বৈষম্য নয়; কিছু বৈষম্য দূর করার জন্য এগুলো প্রয়োজন।”

তিনি উল্লেখ করেন, কোটা ইস্যুতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা জারি করেছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, চলমান বিচারিক কার্যক্রম ও আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও তথাকথিত বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির অজুহাতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।”

বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য শিক্ষার্থীদের উসকানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, “বিএনপিসহ কয়েকটি দল প্রকাশ্যে কোটা আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত করার চেষ্টা করছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল প্রকাশ্যে বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রয়োজন নেই।”

সবাইকে সর্বোচ্চ আদালত ও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, “বিক্ষোভের নামে জনসাধারণের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা ও যানবাহন চলাচলে বাধা দেওয়া অবৈধ।”

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আন্দোলনে উসকানির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুলের

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে বিএনপি উসকানি দিচ্ছে, সরকারের এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, বিএনপির এ ধরনের আন্দোলনে জড়ানোর কোনো কারণ নেই।

তিনি আরও বলেন, “আমাদের এ ধরনের আন্দোলনে ইন্ধন দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। এই সব আন্দোলন তাদের (শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের) নিজস্ব।”

সোমবার (৮ জুলাই) ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ফাইল ছবি)
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ফাইল ছবি)

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে স্বাধীনভাবে এসব আন্দোলন পরিচালনা করছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা কেন এই আন্দোলনে উসকানি দেব? আমাদের এটা করার কোনো কারণ নেই।”

তবে তিনি জানান, তাদের দল মনে করে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের আন্দোলন এবং সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক।

তিনি বলেন, “আমরা যা যৌক্তিক তা নিয়ে এবং তার পক্ষে কথা বলব। আমরা সবসময়ই এটা করে আসছি।”

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন বিএনপিকে অনুপ্রাণিত করেছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “দেশের মানুষ যখন নিজেদের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়, তখন তা আমাদের অনেক আশা জাগায়।”

তবে দেশের অন্য সমস্যাগুলো থেকে জনগণের মনোযোগ সরাতে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে দুটি আন্দোলন তৈরি করেছে কি না তা নিয়ে বিএনপি সন্দিহান বলে জানান মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “যৌক্তিক দাবির প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনকে আমরা সমর্থন করি। আমরা এটাকে অযৌক্তিক মনে করার কোনো কারণ দেখছি না।”

রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পরও সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা বজায় রাখা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এটি মেধার বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। এভাবে যোগ্য ব্যক্তিদের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে নিয়োগ থেকে বিরত রাখা হয়। এতে দেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সরকার নিজ অবস্থান থেকে সরে এসে শিক্ষকদের জন্য পেনশন স্কিম চালু করতে চাচ্ছে তাই তাদের আন্দোলন একটি যৌক্তিক দাবির ওপর ভিত্তি করে হচ্ছে বলে মনে করে বিএনপি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আপনারা (সরকার) আগেই বলেছিলেন, যারা এরই মধ্যে পেনশন পাচ্ছেন, তাদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার দরকার নেই। যারা পাচ্ছেন না শুধু তাদেরই অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। এখন এটা ঐচ্ছিক না রেখে শিক্ষকদের জন্য বাধ্যতামূলক করেছেন।”

কোটা সংস্কার আন্দোলন: পুলিশের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের ঢাকায় সড়ক অবরোধ

সড়ক অবরোধের বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) হুঁশিয়ারির পরও কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবারও (১১ জুলাই) বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন।

বিকেলে ঢাকার শাহবাগে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ের দিকে যাত্রা করেন।

ডিএমপির হুঁশিয়ারির পরও কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন। ১১ জুলাই, ২০২৪।
ডিএমপির হুঁশিয়ারির পরও কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন। ১১ জুলাই, ২০২৪।

তারা কপালে জাতীয় পতাকা বেঁধে তাদের দাবির বিষয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শাহবাগে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বিকেল ৫টার দিকে বাংলামোটরের দিকে মিছিল নিয়ে যান।

এর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) ড. মহিদ উদ্দিন বলেছিলেন, বাংলা ব্লকেডের নামে যারা সড়ক অবরোধ করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা জারি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

সড়ক অবরোধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি ডিএমপির

বাংলা ব্লকেডের নামে যারা সড়ক অবরোধ করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. মহিদ উদ্দিন।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

মহিদ উদ্দিন বলেন, সড়ক অবরোধের মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা বিদ্যমান আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

মহিদ উদ্দিন বলেন, “গতকাল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়ে ২০১৮ সালের সার্কুলার বহাল রেখেছেন । ফলে সার্কুলারটি এই সময় পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তাই বিক্ষোভের মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির কোনো যৌক্তিকতা নেই।”

ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. মহিদ উদ্দিন। ১১ জুলাই, ২০২৪।
ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. মহিদ উদ্দিন। ১১ জুলাই, ২০২৪।

শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও সহানুভূতি আছে, কিন্তু বিদ্যমান আইন ও সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে । “শিক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে আমি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এমন কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করবেন না । ২০১৮ সালের সার্কুলার এখনো বলবৎ।”

মহিদ উদ্দিন আরও বলেন, “গতকাল আন্দোলনকারীরা ২১ জায়গায় অবরোধ করেছে । ঢাকাবাসীর অবাধ চলাচল নিশ্চিত করে আমরা পেশাদারির সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি। যেহেতু আদালত বিষয়টি নিষ্পত্তি করেছেন, আমরা আশা করছি আর জনগণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে না।”

মহিদ উদ্দিন বলেন, “আন্দোলনের একটি যৌক্তিক ভিত্তি থাকা উচিত । বর্তমানে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ আন্দোলনকারীদের পক্ষেই। আন্দোলনে যুক্তি না থাকলে তা চালিয়ে যাওয়া উচিত নয়। আমরা শিক্ষার্থীদের এসব কর্মসূচি বন্ধ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। এতে ঢাকাবাসীসহ সবার উপকার হবে এবং আমাদের বিচার ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।”

তিনি বলেন, “সড়ক বন্ধ থাকলে আমাদের সংবিধান অনুযায়ী চলাচলের স্বাধীনতায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে । আন্দোলনকারীরা এই অপরাধ করবে না আশা করছি। গত ১০ দিনে শিক্ষার্থীদের প্রতি সম্মান বজায় রেখে পুলিশ পেশাদারির সঙ্গে কাজ করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, শিক্ষার্থীরা আইন, নগরবাসী ও পুলিশের প্রতি এই শ্রদ্ধাবোধের প্রতিদান দেবে।”

বিক্ষোভ চলতে থাকলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “শান্তভাবে এই পরিস্থিতিগুলো সামলে নেওয়া আমাদের কাজের ধরন এবং এভাবেই কাজ করব । আমরা আশা করি, বিক্ষোভকারীরা তাদের অবস্থান বুঝতে পারবেন, বিশেষ করে আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে। যেহেতু ২০১৮ সালের সার্কুলার এখনো কার্যকর আছে, সেহেতু আন্দোলনের কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই।”

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা তাদের সীমা লঙ্ঘন করছে, বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের সীমা লঙ্ঘন করছেন বলে মনে করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সচিবালয়ে মাদকের অপব্যবহার ও পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, “আদালতের নির্দেশনা নিয়ে শিক্ষার্থীরা ভাবছেন তাদের চিন্তা-ভাবনা থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেজন্য তারা রাস্তায় চলে এসেছিলেন । আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশকে বলেছি, ‌এদের কথা আমরা শুনব। কিন্তু শোনারও একটা সীমা বোধ হয় থাকে। তারা বোধ হয় এগুলো অতিক্রম করে যাচ্ছে।”

আসাদুজ্জামান খান বলেন, “প্রধান বিচারপতি একটা নির্দেশনা দিয়েছেন । তিনি স্পষ্ট বলেছেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা স্থগিত করা হয়েছে। চলমান মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। তাই হাইকোর্টের নির্দেশনা (কোটা বহাল করে) এখন অচল, সেটি এখন নেই।”

সচিবালয়ে মাদকের অপব্যবহার ও পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ১১ জুলাই, ২০২৪।
সচিবালয়ে মাদকের অপব্যবহার ও পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ১১ জুলাই, ২০২৪।

রায় না থাকায় আন্দোলনের কারণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি ।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, “ছাত্ররা আদালতে নিজেদের বক্তব্য জানাতে পারে। রাস্তায় থেকে তাদের কষ্ট করার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তারা যেটা চেয়েছিলেন সেই দিকেই তো যাচ্ছে।”

জনদুর্ভোগ না করতে শিক্ষার্থীদের অনুরোধ জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান আরও বলেন, “তাদের দাবির প্রতি সরকার সব সময় খেয়াল রাখছে । যেহেতু বিষয়টি কোর্টে আছে এজন্য কোর্টের মাধ্যমে এটি নিষ্পত্তি হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রতিবছর ২৬ জুন মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস পালন করা হয় । তবে বাস্তবতার কারণে এবার তা ১১ জুলাই করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মশিউর রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন।

সরকার শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সবকিছু করতে প্রস্তুত, বলেছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন

কোটার বিষয়টি আদালতে নিষ্পত্তি হওয়ার পর সরকার শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সবকিছু করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী কমিশন গঠন করা হবে কি না- জানতে চাইলে ফরহাদ হোসেন বলেন, “আদালতের বিষয় আদালতে সমাধান হোক। এই সমাধানের পর যদি আরও কিছু আলোচনা করতে হয় সেটি আলোচনা করার জন্য আমরা সব সময় প্রস্তুত। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে যা করা লাগে আমরা সবকিছু করতে প্রস্তুত আছি।”

সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। ১১ জুলাই, ২০২৪।
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। ১১ জুলাই, ২০২৪।

তিনি আরও বলেন, “কোটার বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী বিভাগের অংশ। এটি এখন আদালতে রয়েছে। বিচার বিভাগে কোনো বিষয় থাকলে সেটি বিচার বিভাগেই নিষ্পত্তি করতে হয়।”'

বিষয়টি আদালতে নিষ্পত্তি করতে শিক্ষার্থীদের অনুরোধ জানিয়ে ফরহাদ হোসেন বলেন, “যেটি যেখানে নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন সেটি সেখানে নিষ্পত্তি করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কথা শুনে আদালত যে রায় দিয়েছে, এখানে কিন্তু সুযোগ রয়ে গেছে, প্রধান বিচারপতি সেই আহ্বান জানিয়েছেন। আদালত হচ্ছে সেই জায়গা যেখানে আপনার কথা শুনে আসলে কী করতে হবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।”

তিনি আরও বলেন, “কোর্টে না গিয়ে রাস্তায় আন্দোলন-সংগ্রাম করে, ব্যারিকেড দিয়ে ভোগান্তির সৃষ্টি করা, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা- এটি অনুচিত ও অযৌক্তিক।”

কিছু কুচক্রী, কোনো পরামর্শদাতা বা কারও ইন্ধনের কারণে পানির মতো একটি সহজ জিনিসকে জটিল করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ফরহাদ হোসেন।

কারও দ্বারা প্ররোচিত হয়ে শিক্ষার্থীরা যেন ভিন্ন জায়গায় না যায় সে বিষয়ে সতর্ক করে ফরহাদ হোসেন বলেন, “আপনারা কারও দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে যথাযথ জায়গায় যাবেন। আপনাদের বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। আমি মনে করি সুন্দরভাবে সেটি সমাধান হওয়া সম্ভব।”

একটি গোষ্ঠী দেশের উন্নয়নের সমালোচনা করে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কারা শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে- জানতে চাইলে ফরহাদ হোসেন বলেন, “যারা দেশের উন্নয়ন চায় না, যারা সেই সময়ে দেশে লুটপাট করেছে, যারা দেশে জঙ্গি কার্যক্রম চালাচ্ছে, তারা চাচ্ছে না। তারা বসে আছে যেকোনো বিষয়কে পুঁজি করে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে।”

অপর এক প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ হোসেন বলেন, “৪৩তম বিসিএসে মাত্র ১৭ শতাংশ নারীরা সুযোগ পেয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ৫৯ জেলা থেকে পুলিশে একজন নারীও চাকরির সুযোগ পাননি। ১৭টি জেলায় নারী-পুরুষ কেউই সুযোগ পায়নি। এরকম যদি হয়, তাহলে একটা অসমতা তৈরি হয়। কোটার সংস্কার দরকার। কোটা কতটুকু থাকবে সেটা আলোচনা হতে পারে।”

কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছে আপিল বিভাগ

এদিকে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের চলমান বাংলা ব্লকেডের মধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বহালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের ওপর ৪ সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছে আপিল বিভাগ।

বুধবার (১০ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির বেঞ্চ কোটা সংস্কার নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষার্থীর করা আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন।

শিক্ষার্থীদের পক্ষের আইনজীবী জহিরুল ইসলাম বলেন, একইসঙ্গে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ৪ সপ্তাহের মধ্যে লিভ-টু-আপিল করতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আদালত।

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে মঙ্গলবার আপিল বিভাগে আবেদন করেন ২ জন কোটা আন্দোলনকারী। বুধবার আপিল বিভাগ এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করে চেম্বার আদালত।

এর আগে ৪ জুলাই রিট আবেদনকারীর আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি মুলতবি করে আপিল বিভাগ।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে এ বছরের ৫ জুন রায় দেয় হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে ৪ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। রিট আবেদনকারী পক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন আপিল বিভাগ নট টুডে (৪ জুলাই নয়) বলে আদেশ দেয়। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী মঙ্গলবার আবেদন করেন। দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য বুধবার আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে স্থিতাবস্থার আদেশ দেয় আপিল বিভাগ।

XS
SM
MD
LG