অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

কোটা সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় প্রকাশ: কোটা রাখতে হবে, প্রয়োজনে বাড়ানো–কমানো যাবে


বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ভবন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ভবন।

সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (নবম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধাসহ বিদ্যমান কোটা বাতিল-সংক্রান্ত ২০১৮ সালের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের দেওয়া রায়ের মূল অংশ (অপারেটিভ পার্ট) ও নির্দেশনা প্রকাশিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক পৃষ্ঠার এই সংক্ষিপ্ত রায় প্রকাশ করেছেন।

প্রকাশিত রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকার যদি বিদ্যমান কোটার হার পরিবর্তন করতে, কমাতে অথবা বাড়াতে চায়, তাহলে এই রায় বাধা হবে না। অর্থাৎ সরকার চাইলে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করতে পারবে।

তবে আইনজীবীরা বলছেন, যেহেতু আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিয়েছে, সেজন্য হাইকোর্টের রায় আপাতত কার্যকর করা যাবে না।

কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ও আইনগত কোনো ভিত্তি নেই উল্লেখ করে এই রায়ে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে করা ২৩৫ নম্বর রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় ও আদেশ এবং যে রায়টি ২০৬২/২০১৩ নম্বর লিভ টু আপিলের মাধ্যমে সংশোধিত আকারে আপিল বিভাগে বহাল রাখা হয়েছে, সেই রায়ের আলোকে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতিদের কোটা পুনরায় বহাল করার নির্দেশ দেওয়া হলো এবং একই সঙ্গে জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী, উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসহ অন্য যদি থাকে সেক্ষেত্রে কোটা বহাল রাখার নির্দেশ দেওয়া হলো।

এ ছাড়া, এক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব, সেটা আদেশের কপি গ্রহণের সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রায়ে। যেভাবেই হোক, যদি উপরোক্ত সব ক্ষেত্রে কোটার হার পরিবর্তন করতে, কমাতে অথবা বৃদ্ধি করতে চায়, তাহলে বিবাদীদের (সরকারের) জন্য এই রায় ও নির্দেশনা বাধা হবে না। যদি কোনো পাবলিক পরীক্ষায় কোটা পূরণ না হয়, সেক্ষেত্রে শূন্য পদ সাধারণ মেধা তালিকা থেকে পূরণ করার ক্ষেত্রে বিবাদীদের স্বাধীনতা থাকবে বলেও বলা হয়েছে।

রায়ের ব্যাপারে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান বলেন, “হাইকোর্টের রায়ের মূল অংশটুকু প্রকাশিত হয়েছে, যা হাতে এসেছে। গতকাল (বুধবার) আপিল বিভাগ কোটার বিষয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন। ৭ অগাস্ট শুনানির দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। ফলে আপাতত হাইকোর্টের রায় কার্যকর হবে না।”

হাইকোর্টে রিট আবেদনকারীদের পক্ষের আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী রায়ের বিষয়ে বলেন, রায়ে সব কোটা বজায় রাখতে বলা হয়েছে। তবে প্রয়োজনে সরকার তা কমাতে বা বাড়াতে পারবে। আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন। ফলে এ রায় এখনই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।

সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন কোটায় ৫৬ শতাংশ পদ সংরক্ষিত রাখা কোটা পদ্ধতি ২০১৮ সালে বাতিল করা হয়। ২০২১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরাধিকারীরা এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করলে ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলকে অবৈধ ঘোষণা করে।

পরে সরকার ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে।

রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন ৪ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। রিট আবেদনকারী পক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন আপিল বিভাগ নট টুডে (৪ জুলাই নয়) বলে আদেশ দেয়। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী মঙ্গলবার আবেদন করেন। দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য বুধবার আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে স্থিতাবস্থার আদেশ দেয় আপিল বিভাগ।

XS
SM
MD
LG