চীন বৃহস্পতিবার নেটোর বিরুদ্ধে অন্যদের ক্ষতি করে নিজের নিরাপত্তা চাওয়ার অভিযোগ এনে, নেটোকে এশিয়ায় একই ধরনের “বিশৃঙ্খলা” না আনতে বলেছে। এটি নেটো সদস্য এবং জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ফিলিপাইনের মতো এশীয় দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের বিরোধিতা করার দৃঢ় সংকল্পের প্রতিফলন।
নেটো চীনকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের ‘নির্ণায়ক সহায়তাকারী’ হিসেবে অভিহিত করার একদিন পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রের এই বিবৃতি এলো।
নিয়মিত ব্রিফিং-এ চীনের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, “ইউক্রেন ইস্যুতে চীনের ওপর নেটোর দায় চাপানো অযৌক্তিক এবং এর অশুভ উদ্দেশ্য রয়েছে।” তিনি বলেন, ইউক্রেন ইস্যুতে চীনের সুষ্ঠু ও বস্তুনিষ্ঠ অবস্থান রয়েছে।
চীন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছে। চীন রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা করতে বা এমনকি এটিকে আগ্রাসন হিসেবে উল্লেখ করতে অস্বীকার করে।
ওয়াশিংটনে এক শীর্ষ সম্মেলনে নেটো এক বিবৃতিতে বলে, রাশিয়ার সাথে ‘সীমাহীন অংশীদারিত্ব’ এবং রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য বৃহদাকারের সমর্থনের মাধ্যমে চীন যুদ্ধের সহায়ক হয়ে উঠেছে।
লিন বলেন, রাশিয়ার সাথে চীনের বাণিজ্য বৈধ ও যৌক্তিক এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মাধীন। তিনি বলেন, নেটোর ‘তথাকথিত নিরাপত্তা’ অন্য দেশের নিরাপত্তার ক্ষতি করে অর্জন করা হয়।
এশিয়া অঞ্চলে নেটো
ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে নেটোর ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চীন। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এ সপ্তাহে নেটো শীর্ষ সম্মেলনে তাদের নেতা বা প্রতিনিধি পাঠিয়েছে।
“চীন নেটোর প্রতি আহবান জানাচ্ছে … চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো বন্ধ করতে এবং চীনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা বন্ধ করতে এবং ইউরোপে গোলমাল সৃষ্টি করার পর এশিয়াতে এসে বিশৃঙ্খলা না সৃষ্টি করতে,” লিন বলেন।
নেটোর সদস্য পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে যৌথ মহড়ার জন্য চীনা সৈন্যরা চলতি সপ্তাহে বেলারুশে অবস্থান নিচ্ছে। রাশিয়ার মিত্র বেলারুশের সাথে চীনের এটিই প্রথম মহড়া। বেলারুশে দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর অধীনে একদলীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে।
লিন এই যৌথ প্রশিক্ষণকে একটি সাধারণ সামরিক অভিযান হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এটি কোনও নির্দিষ্ট দেশকে লক্ষ্য করে করা হচ্ছে না।
সাংহাই কার্যক্রম
চীন সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন-এর প্রধান সদস্য, যেখানে রাশিয়া এবং কয়েকটি মধ্য এশীয় দেশের সাথে সামরিক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। এসসিও-তে ভারতও অন্তর্ভুক্ত এবং সাম্প্রতিক সময়ে বেলারুশ।
ধারনা করা হয়, এই অঞ্চলে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রভাব মোকাবেলা করার জন্য এই জোট গড়ে উঠছে। কিন্তু একই সাথে, এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব নিয়েও উত্তেজনা বাড়ছে, যে অঞ্চলকে রাশিয়া তার নিজস্ব প্রভাব বলয় হিসেবে গণ্য করে, যেহেতু সেখানে বিলুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রাক্তন কয়েকটি দেশ অবস্থিত।
এ’মসের আগের দিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং কাজাখস্তানে ১০টি এসসিও সদস্য দেশের নেতা বা প্রতিনিধির সাথে বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে পুতিন, ইউক্রেনের যেসব অঞ্চলের দখল রাশিয়া দাবী করে, সেখান থেকে কিয়েভের বাহিনী প্রত্যাহারের দাবী জানান।
ইউক্রেন পুতিনের দাবী প্রত্যাখ্যান করেছে। কিয়েভ চীনের শান্তি প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছে, যেখানে ইউক্রেনের জমি কিয়েভ সরকারের কাছে ফেরত যাবার কোন উল্লেখ নেই।