বাংলা ব্লকেডের নামে যারা সড়ক অবরোধ করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. মহিদ উদ্দিন।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
মহিদ উদ্দিন বলেন, সড়ক অবরোধের মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা বিদ্যমান আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মহিদ উদ্দিন বলেন, “গতকাল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়ে ২০১৮ সালের সার্কুলার বহাল রেখেছেন। ফলে সার্কুলারটি এই সময় পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তাই বিক্ষোভের মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির কোনো যৌক্তিকতা নেই।”
শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও সহানুভূতি আছে, কিন্তু বিদ্যমান আইন ও সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। “শিক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে আমি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এমন কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করবেন না। ২০১৮ সালের সার্কুলার এখনো বলবৎ।”
মহিদ উদ্দিন আরও বলেন, “গতকাল আন্দোলনকারীরা ২১ জায়গায় অবরোধ করেছে। ঢাকাবাসীর অবাধ চলাচল নিশ্চিত করে আমরা পেশাদারির সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি। যেহেতু আদালত বিষয়টি নিষ্পত্তি করেছেন, আমরা আশা করছি আর জনগণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে না।”
মহিদ উদ্দিন বলেন, “আন্দোলনের একটি যৌক্তিক ভিত্তি থাকা উচিত। বর্তমানে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ আন্দোলনকারীদের পক্ষেই। আন্দোলনে যুক্তি না থাকলে তা চালিয়ে যাওয়া উচিত নয়। আমরা শিক্ষার্থীদের এসব কর্মসূচি বন্ধ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। এতে ঢাকাবাসীসহ সবার উপকার হবে এবং আমাদের বিচার ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।”
তিনি বলেন, “সড়ক বন্ধ থাকলে আমাদের সংবিধান অনুযায়ী চলাচলের স্বাধীনতায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। আন্দোলনকারীরা এই অপরাধ করবে না আশা করছি। গত ১০ দিনে শিক্ষার্থীদের প্রতি সম্মান বজায় রেখে পুলিশ পেশাদারির সঙ্গে কাজ করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, শিক্ষার্থীরা আইন, নগরবাসী ও পুলিশের প্রতি এই শ্রদ্ধাবোধের প্রতিদান দেবে।”
বিক্ষোভ চলতে থাকলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “শান্তভাবে এই পরিস্থিতিগুলো সামলে নেওয়া আমাদের কাজের ধরন এবং এভাবেই কাজ করব। আমরা আশা করি, বিক্ষোভকারীরা তাদের অবস্থান বুঝতে পারবেন, বিশেষ করে আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে। যেহেতু ২০১৮ সালের সার্কুলার এখনো কার্যকর আছে, সেহেতু আন্দোলনের কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই।”
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের ওপর আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থা জারি করলেও কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা সারাদেশে বাংলা ব্লকেড (অবরোধ) চালিয়ে যাচ্ছে। তারা কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে।
অগাস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কোটা সমস্যার সমাধান হবে, বলেছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অগাস্টের প্রথম সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টে চূড়ান্ত শুনানির মাধ্যমে কোটা সমস্যার সমাধান হবে।
তিনি আদালতের আদেশ মেনে চলা এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী আন্দোলন বন্ধ করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।
বুধবার (১০ জুলাই) দুপুরে রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই বিষয়ে স্থিতাবস্থা জারি করেছে এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের তাদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত এবং আশা করি এটি একটি বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত হবে।
প্রত্যয় পেনশন প্রকল্প নিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই বিষয়টিও শিগগিরই সমাধান করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ অন্য কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছে আপিল বিভাগ
এদিকে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের চলমান বাংলা ব্লকেডের মধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বহালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের ওপর ৪ সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছে আপিল বিভাগ।
বুধবার (১০ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির বেঞ্চ কোটা সংস্কার নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষার্থীর করা আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন।
শিক্ষার্থীদের পক্ষের আইনজীবী জহিরুল ইসলাম বলেন, একইসঙ্গে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ৪ সপ্তাহের মধ্যে লিভ-টু-আপিল করতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আদালত।
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে মঙ্গলবার আপিল বিভাগে আবেদন করেন ২ জন কোটা আন্দোলনকারী। বুধবার আপিল বিভাগ এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করে চেম্বার আদালত।
এর আগে ৪ জুলাই রিট আবেদনকারীর আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি মুলতবি করে আপিল বিভাগ।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে এ বছরের ৫ জুন রায় দেয় হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে ৪ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। রিট আবেদনকারী পক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন আপিল বিভাগ নট টুডে (৪ জুলাই নয়) বলে আদেশ দেয়। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী মঙ্গলবার আবেদন করেন। দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য বুধবার আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে স্থিতাবস্থার আদেশ দেয় আপিল বিভাগ।