সিলেটে বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো জেলায় প্রায় ৪ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। এর মধ্যে জেলাজুড়ে ৬৫১ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ৯ হাজার ৬৩৫ জন মানুষ। বাকিরা কেউ স্বজনের বাড়ি, কেউবা ঘরের মধ্যে মাচা বানিয়ে বসবাস করছেন।
এছাড়াও বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে নানা রকমের পানিবাহিত রোগ। রোগ-বালাই বাড়ার কারণে বন্যার্তরা আরও দুর্ভোগে পড়েছেন।
কুশিয়ারা তীরবর্তী জনপদ জকিগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, দক্ষিণ সুরমা, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে।
সুরমা তীরবর্তী জনপদ গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। এসব উপজেলায় পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা বন্যার্তরা ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন।
সিলেটে বন্যাকবলিত হয়েছে ১৩ উপজেলার ১০১টি ইউনিয়ন ও কয়েকটি পৌরসভা। প্লাবিত হয়েছে ১ হাজার ১১৬টি গ্রাম।
এদিকে বন্যা দুর্গত এলাকায় বাড়ছে পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। দূষিত পানি পান ও বানের পানিতে চলাফেরা করায় ডায়রিয়া, চর্মরোগ ও চোখের রোগ দেখা দিয়েছে দুর্গতদের।
জানা গেছে, সিলেটে এখন পর্যন্ত ১৩৬টি মেডিকেল টিম স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। ৮১ জন ডায়রিয়ায় ও ৩২ জন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন। চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৫০ জন। চোখের রোগে আক্রান্ত রয়েছেন ৫ জন।
এ ছাড়া অন্য রোগে আক্রান্ত আরও ৬৫৩ জন। তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
সিলেট জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত বলেন, “বন্যা পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ মেডিকেল টিম কাজ করে যাচ্ছে। পানিবাহিত রোগ মোকাবিলায় রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগের পরিচালক ডা. মো. আনিসুর রহমান বলেন, “বন্যা পরবর্তীতে নানা রোগবালাই দেখা দেয়, এটা স্বাভাবিক। এ জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। বন্যাদুর্গতদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য বিভাগে আমাদের ৪০৩টি মেডিকেল টিম কাজ করে যাচ্ছে।”
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল কুদ্দুস বুলবুল জানান, বন্যার্তদের জন্য এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৬০ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ১৪ হাজার ৫৫৬ বস্তা শুকনা খাবার, ২০ লাখ টাকার শিশুখাদ্য ও ২০ লাখ টাকার গোখাদ্য উপবরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ৩০ জুন থেকে শুরু হলেও বন্যার কারণে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত ছিল। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) থেকে সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় পরীক্ষা শুরু হয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আবশ্যিক) বিষয়ের পরীক্ষা দিয়ে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে সিলেট বিভাগে। পরীক্ষার সময় ছিল ৩ ঘণ্টা। সিলেট শিক্ষাবোর্ডের ৪ জেলার ৩০৯টি প্রতিষ্ঠানের ৮২ হাজার ৭৯৫ জন শিক্ষার্থী এবার এইচএসসিতে অংশ নিয়েছেন।