চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের আমন্ত্রণে, চার দিনের সরকারি সফরে বেইজিং পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (৮ জুলাই) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬ টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টা) বেইজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইট। এর আগে, ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
চীনে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা গ্রেট হল অফ দ্য পিপলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে (১০ জুলাই) পৃথক বৈঠক করবেন।
এছাড়া বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ বিষয়ে একটি শীর্ষ বৈঠকে (৯ জুলাই) যোগ দেবেন তিনি।
গ্রেট হল অফ দ্য পিপলে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে এক সংবর্ধনার আয়োজন করা হবে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাকে গার্ড অফ অনার দেয়া হবে। ১০ জুলাই চীনের প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত অভ্যর্থনা ভোজে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
এর আগে, ৯ জুলাই ১৪তম জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াং হুনিং ও এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) প্রেসিডেন্ট জিন লিকুনের সঙ্গে বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা।
এছাড়া, তিয়েনআনমেন স্কয়ারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আগামী ১১ জুলাই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে চীন থেকে দেশে ফিরবেন তিনি।
সই হতে পারে ২০ সমঝোতা স্মারক
এদিকে, রবিবার (৭ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনে সফরে প্রায় ২০টি সমঝোতা স্মারক সই এবং কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের ঘোষণা আসতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাত, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল ইকোনমি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে সহায়তা, ষষ্ঠ ও নবম বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ নির্মাণ, বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি, জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সইয়ের সম্ভাবনা আছে।”
প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত ভোজসভার মাধ্যমে গ্রেট হলে এসব বিষয়ে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে বলে জানান হাছান মাহমুদ।
সফরে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, আর্থিক সহায়তা এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ চীনের সহায়তা কামনা করবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আরো জানান, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে চীনের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ চীনের প্রতি সমর্থন দেবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর চীনের পক্ষ থেকে সরকারি সফরের জন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
চীনের আমন্ত্রণ
এর আগে, চীন জানায় যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ থেকে ১০ জুলাই চীন সফর করবেন।বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন, “স্টেট কাউন্সিলের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ থেকে ১০ জুলাই চীনে সরকারি সফর করবেন।”
মাও নিং বলেন, নতুন মেয়াদ শুরু হওয়া এবং চীনে তাঁর শেষ সফরের পাঁচ বছর পর এটি হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম চীন সফর। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং–এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন এবং তার সঙ্গে আলোচনা করবেন। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতার নথি সই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
মুখপাত্র বলেন, “দুই দেশের নেতারা আলোচনা করবেন, কীভাবে ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব গভীর এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সহযোগিতা প্রসারিত করা যায়। পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে গভীরভাবে মতবিনিময় করবেন।”
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য, ব্যবসা ও বিনিয়োগের সুযোগবিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন।
তিনি বলেন, “উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন কৌশল নিয়ে আমাদের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। ৪৯ বছর আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে দুই দেশ একে অপরকে সম্মান ও সমতার সঙ্গে আচরণ করেছে। পারস্পরিক উপকারী সহযোগিতায় জড়িত হয়েছে। আমাদের নিজ নিজ মূল স্বার্থ সম্পর্কিত ইস্যুতে একে অপরকে সমর্থন করেছে এবং যৌথভাবে আধুনিকীকরণ করেছে।”
তিনি বলেন, তারা উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার একটি সুন্দর উদাহরণ স্থাপন করেছেন। “সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের দুই দেশের নেতাদের কৌশলগত দিকনির্দেশনা ও অঙ্গীকারের মাধ্যমে দুই পক্ষ বাংলাদেশ-চীন কৌশলগত সহযোগিতা মূলক অংশীদারত্ব গভীর করেছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ ও বাস্তব সহযোগিতা করেছে;” আরো বলেন তিনি।
মুখপাত্র বলেছেন, “এই সফরের মাধ্যমে পাঁচটি মূলনীতির চেতনা সামনে রেখে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে চীন। মূলনীতিগুলো হলো- শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, রাজনৈতিক পারস্পরিক আস্থা গভীর করা, উন্নয়ন কৌশল আরও সমন্বয় করা, উচ্চমানের বেল্ট-রোড সহযোগিতাকে এগিয়ে নেয়া, বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ, বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগ-বৈশ্বিক সভ্যতা উদ্যোগ বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা এবং আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন স্তরে উন্নীত করা।”