অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

‘খালেদা জিয়ার জীবন এখন ঝুঁকিতে রয়েছে’, বললেন মির্জা ফখরুল


বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ৮ জুলাই, ২০২৪।
বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ৮ জুলাই, ২০২৪।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জীবন এখন ঝুঁকিতে রয়েছে।

হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখে এসে, সোমবার (৮ জুলাই) বিকালে বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

“ভোরে তিনি (খালেদা জিয়া) হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমরা বারবার বলে আসছি, তিনি নানা জটিল রোগে ভুগছেন। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও বিদেশে তার চিকিৎসার বিষয়টিকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না;” তিনি আরো বলেন।

খালেদা জিয়ার জীবন এখন বিপন্ন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। বলেন, “আমরা মনে করি, খালেদা জিয়াকে ইচ্ছাকৃতভাবে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেয়া হচ্ছে না।:

খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি একটি জাতীয় দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান তিনি। আরো বলেন, “তার প্রতি চরম অবিচার করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে আটকে রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে।”

বিএনপি মহাসচিব জানান যে খালেদা জিয়ার রোগগুলো ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করেছে। ফলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এবং তাকে ঘন ঘন হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।

আবার হাসপাতালে খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার (৮ জুলাই) ভোর সোয়া ৪টার দিকে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “ম্যাডাম অসুস্থ বোধ করায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।”

চিকিৎসকদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে কেবিনে তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানান চিকিৎসক জাহিদ।

এর আগে, খালেদা জিয়া, রাজধানী ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ১০ দিন চিকিৎসা শেষে গুলশানের বাসায় ফিরছেন। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছিলেন, মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী ২ জুলাই) খালেদা জিয়া হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।

তার শারীরিক অবস্থা ও সর্বশেষ মেডিকেল রিপোর্ট পর্যালোচনা করে বোর্ড এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান জাহিদ হোসেন। তিনি আরো বলেছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন এখন বাসায় থেকেই চিকিৎসা নেবেন।

উল্লেখ্য, গত ২২ জুন দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে গুলশানের বাসায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়া। পরে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন (২৩ জুন) অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল সফলভাবে তার বুকে পেসমেকার বসান।

২০২২ সালের ১১ জুন খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটি ৯৫ শতাংশ ব্লক ছিলো। সে সময় স্টেন্ট বসানোর মাধ্যমে তার চিকিৎসা করা হয়। ৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস এবং কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যা-সহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।

গত ২০২০ সালে শর্তসাপেক্ষে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। সেই বছরই, আরেকটি দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন তিনি।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ এক নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তার গুলশানের বাসায় অবস্থান এবং দেশত্যাগ না করার শর্তে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। এরপর থেকে তাকে কারাগারের বাইরে থাকার মেয়াদ একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে।

গত ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তাকে বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে আসছেন তার চিকিৎসকরা।

গত বছরের ২৬ অক্টোবর খালেদা জিয়ার পেটে ও বুকে পানি জমে ও লিভারে রক্তক্ষরণ হয়। পরে, তার চিকিৎসায়, ট্রান্সজুগুলার ইন্ট্রাহেপ্যাটিক পোর্টোসিস্টেমিক শান্ট (টিপস প্রসিডিউর) নামে পরিচিত হেপাটিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

XS
SM
MD
LG