ইরানের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাসুদ পেজেশকিয়ান ফিরতি নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বি, এক সময়ে যিনি পরমাণু নিয়ে দরকষাকষি করতেন সেই সাঈদ জলিলিকে পরাস্ত করেছেন এবং তাঁকে সমর্থনের জন্য নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পেজেশকিয়ান পশ্চিমের সঙ্গে আরও নিবীড় ভাবে আলোচনা করার, দেশের কঠোর হিজাব আইন শিথিল করার এবং ২০১৫ সালের পরমানু চুক্তি পূনর্বহাল করার প্রতিজ্ঞা করেছেন।
তবে বলা হচ্ছে এ নিয়ে বহু ইরানি সন্দিহান যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি যেহেতু রাষ্ট্রের সকল ব্যাপার নিয়ন্ত্রণ করেন এবং খামেনির চারপাশে কট্টরপন্থিরা রয়েছে, ৬৯ বছর বয়সী হৃদপিন্ডের এই শৌল্য চিকিৎসক তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারবেন কীনা।
তা ছাড়া গাজা ভূখন্ডে হামাসের সঙ্গে ও হেজবুল্লাহর সঙ্গে চলমান যুদ্ধ এবং তেহরানের ইউরেনিয়াম পরিশোধন অস্ত্র-মানের কাছাকাছি চলে আসার আশংকার মধ্যেই পেজেশকিয়ানকে তাঁর সীমিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য এগিয়ে যেতে হবে।
ইরানের কর্তৃপক্ষ বলছে যে পেজেসকিয়ান ১ কোটি ৬৩ লক্ষ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বি জালিলি পেয়েছেন ১ কোটি ৩৫ লক্ষ ভোট। ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বলছে যে মোট ৩ কোটি লোক এই নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। শুক্রবারের এই ভোটগ্রহণে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোন পর্যবেক্ষক ছিলেন না। দেশের অভ্যন্তরের পর্যবেক্ষকরা বলেন বহু ভোটদাতাই ভোট দিতে আসেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মুখপাত্র ভয়েস অফ আমেরিকার ফার্সি বিভাগকে বলেন যে ইরানের নির্বাচন “ অবাধ ও নিরপেক্ষ ছিল না” এবং “ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইরানি এতে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন”।
মুখপাত্রটি বলেন, “ আমাদের এমন কোন প্রত্যাশা নেই যে এ ধরণের নির্বাচন ইরানে কোন মৌলিক পরিবর্তন আনবে কিংবা তার জনগণের মানবাধিকারের প্রতি কোন রকম সম্মান জানাবে। যেমনটি প্রার্থীরা নিজেরাই বলেছেন ইরানের নীতিমালা ঠিক করেন সে দেশের সর্বোচ্চ নেতা”।
মুখপাত্রটি আরও বলেন, “ এই নির্বাচন ইরানের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে কোন উল্লেখযোগ্য প্রভাবও ফেলবে না। ইরানের আচরণ নিয়ে আমাদের উদ্বেগ অপরিবর্তিতই থাকছে। যখন আমেরিকান স্বার্থের প্রশ্ন আসে আমরা তখন কুটনীতির দিকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকি”।
ভয়েস অফ আমেরিকার ফার্সি বিভাগে পাঠানো ভিডিওগুলিতে ভোট কেন্দ্রগুলি জনশূণ্য দেখা যাচ্ছে এবং বহু প্রত্যক্ষদর্শী এবং ইরানের নাগরিক সাংবাদিকরাই জানিয়েছেন যে ভোট দাতাদের সংখ্যা ছিল খুব কম।
প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির উত্তরসূরি নির্বাচনের এই দ্বিতীয় পর্বে তেহরান, আহওয়াজ ও রাশ্তসহ কোন কোন শহরে ইন্টারনেট অচল থাকার খবর পাওয়া গেছে।
কোন কোন সামাজিক মাধ্যম অনুমান করে যে জনশূন্য ভোটকেন্দ্র সম্পর্কিত ছবি ও খবর যাতে প্রকাশ করা না হয় সে জন্য এই ব্যবস্থা নেয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বলে প্রাথমিক রিপোর্টে দেখা গেছে শুক্রবারের এই ভোটগ্রহণে ৫০% ভোটদাতা অংশ নেন যা জুন মাসে প্রথম দফা ভোটগ্রহণের চেয়ে বেশি ছিল।
ওই ইসলামি প্রজাতন্ত্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রথম দফার ভোটদানে প্রায় ৪০% লোক অংশ নেন যা ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে এই অবধি ছিল সর্বনিম্ন।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইউনাইটেড আগেইনস্ট ইরান গোষ্ঠীর কাসরা আরাবি বলেণ, “ অংশগ্রহণকারীদের সংখ্য কম হওয়া সত্ত্বেও বাইরের লোকদের কাছে ভুয়া প্রতিযোগিতার একটি কল্পিত চিত্র তুলে ধরতে খামেনি তূলনামূলক ভাবে সফল হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বলছে যে ইরানের নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ নয় কারণ ইরানের শাসকরা খামেনির প্রতি বিশ্বস্ত নন এমন প্রার্থীদের অযোগ্য ঘোষণা করেন।
আরাবি বলেন পেজেশকিন ও জালিলির মধ্যে “ কোন অর্থবহ পার্থক্য নেই “কারণ সব ধরণের কৌশলগত নীতি নির্ধারণ করেন খামেনি”।
১৮ বছর বা তারচেয়ে বেশি বয়সের ৬ কোটি ১০ লক্ষেরও বেশি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটদানে যোগ্য ছিলেন। এই ভোটগ্রহণ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় শেষ হবার কথা ছিল কিন্তু এতে অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য সময়সীমা মধ্যরাত অবধি বাড়ানো হয়।
মে মাসে এক হেলিকপ্টার দূর্ঘনায় রাইসি নিহত হন। তাঁকেই খামেনির সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে মনে করা হতো।
এই প্রতিবেদনে অবদান রেখেছেন মাইকেল লিপিন। এপি ও রয়টার থেকে নেয়া কিছু তথ্যও এই প্রতিবেদনে ব্যবহার করা হয়েছে।