অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

মিয়ানমারের সামরিক অভিযান শক্তিশালী করে বিশ্বব্যাপী এমন অস্ত্র ব্যবসার নিন্দা জানিয়েছেন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ


ফাইল- সামরিক বাহিনী মিয়ানমারের নাইপিতাওতে সশস্ত্র বাহিনী দিবসে একটি কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করছে, ২৭ মার্চ, ২০২১।
ফাইল- সামরিক বাহিনী মিয়ানমারের নাইপিতাওতে সশস্ত্র বাহিনী দিবসে একটি কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করছে, ২৭ মার্চ, ২০২১।

একজন বিশিষ্ট মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সাথে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য সরকারদের প্রতি আহ্বান জানান। এ অস্ত্র বাণিজ্য “মিয়ানমার জুড়ে বেসামরিক লোকদের বিরুদ্ধে জান্তার সহিংসতার নৃশংস অভিযানকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করছে।”

মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষ দূত টমাস অ্যান্ড্রুজ বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের কাছে এক প্রতিবেদনে অভিযোগ করেন যে, আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থা মিয়ানমারকে অস্ত্র সংগ্রহে সহায়তা করছে যা “বেসামরিক জনগণের উপর আক্রমণ চালাতে তাদের সক্ষম করেছে” এবং হাজার হাজার মানুষকে হত্যা, পঙ্গু ও বাস্তুচ্যুত করেছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক জান্তা দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে ১,০২২ জন নারী এবং ৬৬৭ জন শিশু সহ কমপক্ষে ৫২৮০ জন বেসামরিক নাগরিক “সৈন্যদের হাতে নিহত হয়েছে।”

এছাড়া, সংস্থাটি রিপোর্ট করে যে, কমপক্ষে ৩০ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। “এই জনসংখ্যার বিশাল একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ এখনও যথার্থ আশ্রয় ছাড়াই রয়েছে,” এবং ২০,০০০ জনেরও বেশি রাজনৈতিক বন্দী আটক রয়েছে।

অ্যান্ড্রুজ কাউন্সিলকে বলেন, ২০২৪ সালের মার্চে শেষ হওয়া গত দুই বছরে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থার মাধ্যমে ৬৩ কোটি ডলারের অস্ত্র, দ্বৈত-ব্যবহার প্রযুক্তি, উত্পাদন সরঞ্জাম এবং কাঁচামাল কিনেছে।

বিশেষ দূত অ্যান্ড্রুজ ১৬টি বিদেশী ব্যাংক চিহ্নিত করেন যেগুলি দেশটির শাসকগোষ্ঠীর সামরিক ক্রয় সম্পর্কিত লেনদেনগুলি সহজতর করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, দেশটির সামরিক বাহিনী এবং তাদের সহকর্মীরা লেনদেনের আসল প্রকৃতিকে অস্পষ্ট করার জন্য “সামরিক ফ্রন্ট কোম্পানি স্থাপন করা সহ” বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়েছে।

তিনি গত বছর তার জারি করা একটি প্রতিবেদন "বিলিয়ন ডলার ডেথ ট্রেড" ’এর কথা উল্লেখ করেন। এতে তিনি সিঙ্গাপুরকে দেশটির সামরিক বাহিনীর তৃতীয় বৃহত্তম অস্ত্র এবং সংশ্লিষ্ট উপকরণ সরবরাহকারী হিসাবে চিহ্নিত করেন।

তিনি কাউন্সিলকে বলেন, সেই প্রতিবেদনের কারণে “সরকার অবিলম্বে ব্যবস্থা নিয়েছে এবং আমার অনুসন্ধানের উপর তদন্ত শুরু করেছে। আমি এই খবর দিতে অত্যন্ত আনন্দিত যে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকে সিঙ্গাপুর থেকে দেশটির জান্তার সামরিক সরবরাহ ক্রয় প্রায় ৯০ শতাংশ কমে গিয়েছে।”

তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্যবশত, থাইল্যান্ডের মাধ্যমে তাদের সামরিক সরবরাহ এর বিপরীত রূপ নিয়েছে। দেশটির জান্তা থাইল্যান্ডে নিবন্ধনকৃত সরবরাহকারীদের কাছ থেকে প্রায় ১৩ কোটি ডলারের অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম আমদানি করেছে, যা গত বছরের তুলনায় মোট দ্বিগুণেরও বেশি।”

কিন্তু, তিনি পর্যবেক্ষণ করে বলেন, “এটি লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে গত বছরে সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে যেমন প্রমাণ পেয়েছিলাম, থাইল্যান্ডের সরকার এই লেনদেনের সাথে জড়িত বা এমনকি এ ধরণের লেনদেন নিয়ে যে সচেতন ছিল এমন কোনও প্রমাণ আমি পাইনি।” তিনি আশাবাদী থাইল্যান্ড ভিত্তিক সংস্থাগুলি সহ, দেশটির ব্যাংকগুলি “সামরিক জান্তার কাছে আর অস্ত্র এবং অস্ত্র সামগ্রী স্থানান্তর করতে সহায়তা করবে না।”

অ্যান্ড্রুজ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে সামরিক জান্তা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলির সাথে লেনদেন সহজতর করা বন্ধ করার জন্য এবং সরকারদের মিয়ানমারের অর্থনৈতিক ব্যাংক সহ সেই জান্তা-নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার জন্য আহ্বান জানান।

বিশেষ দূত অ্যান্ড্রুজ তাঁর এই আহ্বানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সহ সদস্য দেশগুলির সমর্থন অর্জন করেন।

অ্যান্ড্রুজ বলেন মিয়ানমারের জনগণের কাউন্সিল ও সরকারগুলির সমর্থন প্রয়োজন এবং এটি তাদের প্রাপ্য। তিনি জোর দিয়ে বলেন তাদের আন্তর্জাতিক পদক্ষেপেরও প্রয়োজন, “শুধুমাত্র মিয়ানমারের জনগণের উপর সামরিক জান্তার নিরন্তর আক্রমণের কারণে নয়, সাথে এই মুহূর্তে আপনাদের সরকারের কাছে এমন সুযোগ রয়েছে যা এই সংকট কীভাবে এবং কখন শেষ হবে তার উপর নির্ভর করে তারা বড় রকমের পরিবর্তন আনতে পারে।

তিনি বলেন, সরকারের সামরিক ঘাঁটির পতন ঘটছে , হাজার হাজার সৈন্য “ হতাহত, আত্মসমর্পণ বা দলত্যাগের জন্য হারিয়ে গিয়েছে” এবং অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, বিশ্বের এমনটি হতে দেওয়া উচিত নয়।

XS
SM
MD
LG