দ্বিভাজিত পশ্চিম আফ্রিকা এই সপ্তাহান্তে দুইটি প্রেসিডেন্ট পর্যায়ের শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। নিজারে আয়োজিত সম্মেলনে অংশ নেবেন সাহেল অঞ্চলের তিন দেশের সামরিক রাষ্ট্রপ্রধানরা। এরপর রবিবার নাইজেরিয়ায় অপর সম্মেলনে বৃহত্তর অর্থনৈতিক ব্লকের নেতারা সম্মিলিত হবেন।
শনিবার নিজারের রাজধানী নিয়ামেতে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনটিই হতে যাচ্ছে দ্য অ্যালায়েন্স অব সাহেল স্টেটস (এইএস) নামের নতুন আঞ্চলিক জোটের সামরিক রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক।
জানুয়ারিতে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর বৃহত্তর অর্থনৈতিক সম্প্রদায় ইকোওয়াস ব্লক ছেড়ে যায় মালি, বুরকিনা ফাসো ও নিজার এবং সেপ্টেম্বরে নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা সহায়তার নতুন জোট গঠন করে।
মূলত প্যারিস এই ব্লকে অনাহুত হস্তক্ষেপ করছে এবং উগ্র জিহাদি -বিরোধী উদ্যোগে যথেষ্ট সহায়তা দিচ্ছে না, এমন অভিযোগ করে এই দেশগুলো ইকোওয়াস জোট ত্যাগ করে।
এই তিন দেশ এমন সময় জোট ছেড়েছে, যখন তারা সাবেক ঔপনিবেশিক শাসক ফ্রান্সের প্রভাব থেকে দূরে সরতে শুরু করেছে। তারা জিহাদি বিরোধী ফরাসি সৈন্যদের বহিষ্কার করেছে এবং তাদের ভাষায়, তাদের “প্রকৃত অংশীদার” রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরানের দিকে ঝুঁকেছে।
বেশ কয়েকবার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিলেও ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণকারী এই তিন দেশের সামরিক শাসক এবারই প্রথম মুখোমুখি বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন।
মে মাসের মাঝামাঝি বুরকিনা ফাসো, মালি ও নিজারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা নিয়ামেতে এই জোট গঠনের খসড়া চুক্তিতে সম্মত হন। শনিবারের সম্মেলনে তিন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা একে আনুষ্ঠানিক রূপ দেবেন বলে প্রত্যাশা করা যাচ্ছে।
বেশ কয়েক বছর ধরে নিজার, মালি ও বুরকিনা ফাসোর মধ্যে অবস্থিত সুবিশাল “তিন সীমান্তে” বিদ্রোহীরা হামলা চালিয়ে এসেছে। তাদের দমনে বিশাল আকারের জিহাদি বিরোধী সেনাবাহিনী মোতায়েন করেও তেমন কোনো লাভ হয়নি।
রবিবারের ইকোওয়াস সম্মেলন এমন সময় আয়োজিত হতে যাচ্ছে যখন পশ্চিম আফ্রিকার প্রেসিডেন্টরা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রাখার সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সেনেগালের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাসিরোউ দিওমায়ে ফায়ে মে’র শেষ দিকে জানান, ইকোওয়াস ও তিন সাহেল দেশের মধ্যে সমঝোতা সম্ভব।
জুনে পুননির্বাচনে জয়ী মরিটানিয়ার প্রেসিডেন্ট মোহামেদ ওউল্ড চিখ এল ঘাজুয়ানি পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোকে জিহাদিবাদের উত্থানের মুখে আবারও একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
তবে দুই জোটের পরপর সম্মেলন আয়োজনে এইএস ও ইকোওয়াসের মধ্যে সম্পর্ক শীতল হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
এএফপিকে নাইজেরীয় আইনজীবী জিবরিল আবারচি বলেন, “আমার মনে হয় না এইএসের দেশগুলো ইকোওয়াসে ফিরতে চায়। আমার ধারণা, ইকোওয়াসকে তাদের প্রত্যাশা কমিয়ে বাস্তববাদী হতে হবে।”
এইএস মূলত অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সংগঠন হলেও এর তিন সদস্য দেশ বারবার একে আরও সামনে এগিয়ে নেওয়ার ইচ্ছের কথা