বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান জানিয়েছেন যে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যায়, দেশের ১৫টি জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শনিবার (৬ জুলাই) সচিবালয়ে, সংবাদ সম্মেলনে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।
“আগামী মাস (আগস্ট) কিংবা তার পরের মাসে (সেপ্টেম্বর) আবার এরকম বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আগামী বন্যার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি;” আরো জানান ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।প্রতিদিনই বন্যার পরিধি বাড়ছে বলেও জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান বলেন, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, রংপুর, জামালপুর, গাইবান্ধা, ফেনী, রাঙ্গামাটি, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, লালমনিরহাট ও কক্সবাজার জেলা বন্যা কবলিত হয়েছে।
বন্যাকবলিত ১৫ জেলায় এ পর্যন্ত নগদ ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা, ৮ হাজার ৭০০ টন ত্রাণের চাল, ৫৮ হাজার ৫০০ বস্তা শুকনো ও অন্যান্য খাবার, শিশু খাদ্য কেনার জন্য ৬০ লাখ টাকা ও গো-খাদ্য কেনার জন্য ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, “পুরো ১৫ জেলার সব মানুষ পানিবন্দী নয়। কোনো কোনো জেলা আংশিকভাবে প্লাবিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমাদের আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৬ হাজার ২২৩ জন আশ্রয় নিয়েছেন। জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বন্যায় এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২০ লাখ মানুষ। তবে কেউ মারা যায়নি।”
বন্যাকবলিত অঞ্চল নিয়ে সরকার কাজ করছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান। বলেন, “বন্যা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে, সেই জায়গাগুলোকে আমরা চিহ্নিত করবো। বন্যার কারণে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলও প্লাবিত হতে পারে। এছাড়া সবার সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা কাজ করছি। তারপরও বিভিন্ন সময় পত্রিকায় দেখি, কোন কোন জায়গায় খাদ্য পায়নি। এজন্য আমরা জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবো।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী আরো জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং ডিসি, ইউএনও গণ যখন যা চাচ্ছেন দেয়া হচ্ছে। তারপরও ঘাটতি থাকার কোনো কারণ নেই। বন্যাদুর্গত এলাকায় যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা পর্যাপ্ত; জনান তিনি।
কুড়িগ্রামে দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দী
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে প্রায় দেড় লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ স্বাক্ষরিত নথি থেকে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৭২, হাতিয়া পয়েন্টে ৭১ ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬৮ সেন্টিমিটার বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়া, ধরলা নদী ব্রীজ পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার, তালুক শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার ও দুধকুমার নদীর পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপদ সীমার ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমর ও ধরলা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায়, নদী তীরবর্তী ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, রাজারহাট, চিলমারী, রৌমারী, চর রাজিবপুর উপজেলার ৪২ টি ইউনিয়নের ৮৪ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তথ্যমতে দেড় লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, ১৪৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জলমগ্ন। এছাড়াও ২০টি মাদরাসা ও ৪৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ৪০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ হাজার ১২৪ জন বন্যার্ত আশ্রয় নিয়েছেন। ইতোমধ্যে বন্যার্তদের মাঝে ২৯১ মেট্রিক টন চাল, ২১ লাখ ৫০হাজার টাকা ও ১৫ হাজার ৩২০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
অন্তত ৬ হাজার ৬১৫ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যার্তদের সহায়তায় ইউনিয়ন পর্যায়ে ৮৩টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস
শনিবার (৬ জুলাই) আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, দেশের ৩ বিভাগে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আরো বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।’
শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় দেশের সর্বোচ্চ ২৯২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। আর, শুক্র ও শনিবার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ৩২ দশমিক ৮ ডিগ্রি ও ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস যথাক্রমে রাজশাহী ও বান্দরবানে।
এদিকে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে ভারতের আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।