অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

অব্যাহত বৃষ্টিপাতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বিপর্যস্ত সিলেটের শিক্ষাব্যবস্থা


বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে, ব্রহ্মপূত্র ও সুরমা-কুশিয়ারা অববাহিকায় বন্যা পরিস্থির অবনতি হয়েছে। সিলেট, কুড়িগ্রাম, জামালপুর এলাকায় বন্যা পররিস্থিতি অবনতি হওয়ায় বেড়েছে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা।

সিলেট জেলা এই মৌসুমে তৃতীয় দফায় বন্যা কবলিত হয়েছে। এই জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শিক্ষা ব্যাবস্থা। এছাড়া, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কক্সবাজার জেলার বহু গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, আরো বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।

বিপর্যস্ত সিলেটের শিক্ষাব্যবস্থা

চলতি বছরে তৃতীয় দফা বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সিলেট। জেলার সড়ক, কৃষি, মৎস্য, অবকাঠামোসহ নানা খাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে শিক্ষা খাত।

বন্যার কারণে জেলার প্রায় ৫০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি জমে আছে আর বাকিগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ঈদের ছুটির পর থেকেই বন্ধ রয়েছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান।

শিখন ঘাটতি কমাতে, ঈদ ও গ্রীষ্মের ছুটি কমিয়ে ২ জুলাইয়ের পরিবর্তে ২৬ জুন থেকে দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান শুরু হয়। তবে, সিলেটের অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঈদের পর আর পাঠদান শুরু শুরু করা সম্ভব হয়নি। একই অবস্থা প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোরও। ঈদের ছুটির পর ৩ জুলাই থেকে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় খুললেও, বন্যার কারণে সিলেটের বিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম শুরু হয়নি।

বন্যার কারণে সিলেটের প্রায় ৫০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
বন্যার কারণে সিলেটের প্রায় ৫০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো থেকে জানা গেছে, বন্যার কারণে সিলেট জেলায় ৩৯৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে ৭৮টি। এছাড়া কয়েকটি কলেজ জলমগ্ন হওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, জেলার মোট ১ হাজার ৪৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৯৮টিই বন্ধ। এর মধ্যে সিলেট সদর উপজেলায় ৩৭, বিশ্বনাথে ২, বালাগঞ্জে ৫৫, ফেঞ্চুগঞ্জে ৩২, গোলাপগঞ্জে ২৭, বিয়ানীবাজারে ৫৪, জকিগঞ্জে ২৩, কানাইঘাটে ৪, জৈন্তাপুরে ৩, গোয়াইনঘাটে ২, কোম্পানীগঞ্জে ৬৫, দক্ষিণ সুরমায় ২২ ও ওসমানীনগরে ৭২টি বিদ্যালয় রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত এরশাদ বলেন, ৩৯৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আর বাকিগুলো জলমগ্ন হয়ে আছে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, বন্যার কারণে জেলায় ৭৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যালয় রয়েছে ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায়। কুশিয়ারা অববাহিকার এসব এলাকায় বন্যার পানি কমছেই না।

সিলেটে প্রথম দফা বন্যা দেখা দেয় গত ২৯ মে। ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় সিলেটের সীমান্তবর্তী ৬ উপজেলা। ৮ জুনের পর থেকে এই বন্যার পানি কিছুটা কমে আসে।

গত ১৬ জুন থেকে আবার বন্যা শুরু হয়। এতে সিলেট নগরসহ জেলার ১৩টি উপজেলায়ই বন্যা দেখা যায়। পানিবন্দী হয়ে পড়েন প্রায় সাড়ে ১০ লাখ মানুষ। ২৫ জুন দ্বিতীয় দফার বন্যার পানি কমা শুরু হয়। ১ জুলাই থেকে আবার অতিবৃষ্টি শুরু হলে নেমে আসে ঢল, সৃষ্টি হয় নতুন বন্যা পরিস্থিতি।

কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়ে পড়েছে নতুন নতুন এলাকা। পানিবন্দী অর্ধলক্ষ মানুষের সাথে যোগ হয়েছে আরো মানুষ।

শুক্রবার (৫ জুলাই) সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বেড়ে বিপদ সীমার ৭৮ সেন্টিমিটিরা, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৭২ সেন্টিমিটিরা এবং হাতিয়া পয়েন্টে ৮০ সেন্টিমিটিার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রামে অর্ধলক্ষ মানুষের সাথে যোগ হয়েছে আরো মানুষ।
কুড়িগ্রামে অর্ধলক্ষ মানুষের সাথে যোগ হয়েছে আরো মানুষ।

তবে, পানি বাড়লেত, কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি, পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমার এবং শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদ সীমার নিচেই রয়েছে। কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। চিলমারী থেকে রৌমারীগামী ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।

এদিকে, বন্যার জলমগ্ন হয়ে পড়ায়, জেলায় ৩৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নদ-নদী তীরবর্তী চর ও নিম্নাঞ্চলের বসতভিটায় পানি ঢুকে পড়ায় দুর্ভোগে পড়েছে মানুষজন। অনেক পরিবার গবাদিপশুসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান জানান, ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি আরো ৪৮ ঘণ্টা ধরে বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরইমধ্যে ব্রহ্মপুত্রের পানি তিনটি পয়েন্টে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, জেলায় এখন পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা ৬২ হাজার ২০০ জন।

জামালপুর

ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার আরেক জেলা জামালপুর। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে জামালপুরের যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে, সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৫০ হাজার মানুষ।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার (৫ জুলাই) সকালে দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদ সীমার ৯২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই পরিস্থিতিতে দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর ও মাদারগঞ্জ উপজেলার মোট ১৮টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়েছে বলে জানান তিনি।

সেতুর সংযোগ সড়ক ও আঞ্চলিক সড়ক ভেঙে যাওয়ায় কিছু এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া, বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ২৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

কক্সবাজার

টানা ভারী বর্ষণে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৮টি ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, অন্তত ৩ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়েছেন অন্তত ৩০ হাজার মানুষ।

জনপ্রতিনিধিরা আরো জানান, পানিতে ডুবে থাকায়, কাঁচা ঘরবাড়ি, গ্রামীণ সড়ক, কালভার্ট, পানের বরজ ভেঙে পড়ছে। কয়েকটি গ্রামে বাঁধ ভেঙে মৎস্য খামার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ ছাড়া, উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের অনেক গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। আর, কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে আরো কয়েকদিন।

বৃষ্টির পূর্বাভাস

শুক্রবার (৫ জুলাই) আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, বাংলাদেশের সব বিভাগে আরো বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে; রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।’

শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায়, চাঁদপুরে দেশের সর্বোচ্চ ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।এছাড়া সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আর বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ৩৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি ও ২৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যথাক্রমে চুয়াডাঙ্গা ও কক্সবাজারের টেকনাফে।

এদিকে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।

XS
SM
MD
LG