অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বান্দরবানে বেনজীর ও স্ত্রী–মেয়ের নামে থাকা সম্পত্তি জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে


বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।

বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী ও মেয়েদের নামে বান্দরবান জেলায় থাকা প্রায় ৩০ কোটি টাকা মূল্যের ২৫ একর সম্পত্তি তত্ত্বাবধানে নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সকালে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক (ডিসি) শাহ মোজাহিদ উদ্দিনের নেতৃত্বে প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তাদের একটি দল সম্পত্তি তত্ত্বাবধানে নিয়ে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়।

বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী জীশান মীর্জা ও তাঁদের মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীরের ২৫ একর জমির ওপর থাকা বাগানবাড়ি, পুকুর, গবাদিপশুর খামারসহ সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি তত্ত্বাবধানে নেয় জেলা প্রশাসন। বাগানবাড়ি প্রাঙ্গণে সম্পত্তি তত্ত্বাবধানে নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, আদালতের নির্দেশনার পর বেনজীর আহমেদের সম্পত্তিগুলো তত্ত্বাবধানে নেওয়া হয়েছে এবং এসব সম্পত্তি থেকে যা আয় হবে তা সরকারের কোষাগারে জমা হবে।

উল্লেখ্য, দুদক সারাদেশে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সম্পত্তির পরিমাণ খুঁজে বের করার পর বান্দরবানেও বিপুল পরিমাণে সম্পত্তির তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়াও, স্থানীয় সূত্র জানায়, বান্দরবানের সুয়ালকে ৫০ একর ও লামা উপজেলাতে প্রায় ১০০ একর সম্পত্তি রয়েছে।

এর আগে ওই অঞ্চলের প্রায় কোটি টাকার গাছ কেটে ফেলা হয়। এ ছাড়া, কোরবানির ঈদের আগে ৩৬টি গরু সরিয়ে ফেলা হয়।

বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে দুদক সুয়ালকে ২৫ একর সম্পত্তির নথি খুঁজে পায়। এসব সম্পত্তি তত্ত্বাবধানে নিয়েছে বান্দরবানের জেলা প্রশাসন।

সিঙ্গাপুরে বেনজীর

বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ৩১ মে (শুক্রবার) এবং ১ জুন (শনিবার) সংবাদ প্রকাশ করে যে, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ৪ মে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সিঙ্গাপুর চলে গেছেন ।

৪ মে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন এবং সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে সিঙ্গাপুর গেছেন। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ঢাকার সংবাদমাধ্যমগুলো।

বেনজীর আহমেদের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে, ৪ মে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে তিন মেয়ে ও স্ত্রীসহ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যান তিনি। স্ত্রী জীশান মির্জার চিকিৎসাজনিত কারণে তাঁরা সেদেশেই অবস্থান করছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বক্তব্য

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি।

৩ জুন (সোমবার) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

হাছান মাহমুদ বলেন, “তার বিরুদ্ধে কোনো আদালত বা দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে বিদেশ ভ্রমণে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার স্বচ্ছভাবে দেশ পরিচালনা করে এবং দুদকের ওপর সরকারের কোনো প্রভাব নেই। “দুদক স্বাধীন ও স্বচ্ছভাবে কাজ করছে। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে;” বলেন হাছান মাহমুদ।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, র‌্যাব ও বেনজীর আহমেদ

২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দফতর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়।

ওই কর্মকর্তারা হলেন র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খান। তাঁদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।

এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র‍্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত।

বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র‍্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র‍্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছেন বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।

XS
SM
MD
LG