বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল সংক্রান্ত হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে, রাজধানী ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করে তারা। হাইকোর্টের রায়ের ওপর আগামী ৪ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা জানান আগামী ৪ জুলাইয়ের রায় যদি ছাত্র সমাজের যৌক্তিক দাবির বিরুদ্ধে যায় তবে তারা কঠোরতর আন্দোলন গড়ে তুলবে।
দুপুর পৌনে ২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এরপর ক্যাম্পাসের রাজু ভাস্কর্যের সামনে মিছিল করে শাহবাগে অন্যান্য বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়।
অবরোধ কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজসহ আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এসময় তারা সরকারি চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
এর আগে, একই দাবিতে সোমবার (১ জুলাই) মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচি পলনকালে, সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। নিয়োগের ক্ষেত্রে সমতা প্রত্যেকের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার উল্লেখ করে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালকে সংবিধানের লংঘন বলে উল্লেখ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেলেন, “স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর, কোটা প্রথা চলতে পারে না। বর্তমানে প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ছাড়া আর কোনো কোটার প্রয়োজন নেই। আগামী ৪ জুলাইয়ের রায় সারা বাংলার ছাত্র সমাজের যৌক্তিক দাবির বিরুদ্ধে গেলে আমরা কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলন গড়ে তুলবো।”
আপিল বিভাগের রায়
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায়, গত ৯ জুন আপাতত বহাল রেখেছে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। এছাড়া, এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
রবিবার (৯ জুন) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। এর আগে, সকালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
উল্লেখ্য, গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। ৬ জুন থেকে সে রায়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে।
হাইকোর্টের রায়
গত ৫ জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে, মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল থেকে যায়। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করেন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এবং এ রায় দেন।
বাংলাদেশ জুড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে, ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার।
পরিপত্রে বলা হয়, নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। এই সব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা বাতিল করা হলো। পরে, এ পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী।