অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ইমরান খানঃ পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী 'নিয়ম-বহির্ভূতভাবে' আটক, বলছে জাতিসংঘ প্যানেল


ইমরান খানঃ ক্রিকেট তারকা থেকে প্রধানমন্ত্রী, তারপর বিতর্কিত কারাদণ্ডে দণ্ডিত। ফাইল ফটোঃ ১৮ মে, ২০২৪।
ইমরান খানঃ ক্রিকেট তারকা থেকে প্রধানমন্ত্রী, তারপর বিতর্কিত কারাদণ্ডে দণ্ডিত। ফাইল ফটোঃ ১৮ মে, ২০২৪।

জাতিসংঘের একদল বিশেষজ্ঞ সোমবার অবিলম্বে এবং নিঃশর্তে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তি দাবী করেছেন। তারা বলেন, খানকে নিয়ম-বহির্ভূতভাবে এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে কারাবন্দী রাখা হয়েছে।

জেনেভা-ভিত্তিক ওয়ার্কিং গ্রুপ ওন আরবিট্রারি ডিটেনশন, যারা জাতিসংঘ হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের সাথে কাজ করে, তাদের মতামত প্রকাশ করে বলে যে, পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের খানকে অন্তরিন রাখার “কোন আইনগত ভিত্তি নেই।”

পাঁচ-সদস্যের গ্রুপ বলে যে, ৭১-বছর বয়স্ক প্রাক্তন পাকিস্তানি নেতার কারাদণ্ড দ্য উইনিভারসাল ডিক্লারেশন অফ হিউম্যান রাইটস এবং দ্য ইন্টারন্যাশনাল কভেনান্ট ওন সিভিল অ্যান্ড পলিটিকাল রাইটস-এর অন্তত এক ডজন ধারা লঙ্ঘন করে।

“ওয়ার্কিং গ্রুপ পাকিস্তান সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছে, অনতিবিলম্বে মিস্টার খানের পরিস্থিতি সংশোধন করে তাকে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক নিয়মের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে,” তারা বলে।

নির্বাচন থেকে নিষিদ্ধ

ইমরান খানকে ২০২৩ সালের অগাস্ট মাসে দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে তিন বছরের জেল দেয়া হয়। বিচার প্রক্রিয়া ত্রুটিতে ভরা ছিল বলে তিনি এবং স্বতন্ত্র আইন বিশেষজ্ঞরা ঘোষণা দেন।

কিন্তু তিন দিন পর, পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন খানকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে নিষিদ্ধ করে।

তথাকথিত ‘তোশাখানা মামলা’য় অভিযোগ করা হয় যে, খান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন পাওয়া উপহার তিনি ঘোষণা করেন নি। তোশাখানা হচ্ছে একটি সরকারি দফতর যেখানে পাকিস্তানি নেতাদের সরকারি বিদেশ সফরের সময় পাওয়া উপহার সংরক্ষণ এবং প্রদর্শন করা হয়।

Pakistan's former prime minister Imran Khan's supporters protest outside the court in Islamabad on June 27, 2024, to demand the release of Khan and his wife Bushra Bibi.
ইমরান খানের সমর্থকরা ইসলামাবাদে আদালতের বাইরে খান এবং তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবির মুক্তি দাবী করে। ফটোঃ ২৭ জুন, ২০২৪।

জাতিসংঘের গ্রুপ সিদ্ধান্ত নেয় যে, বিচারকার্য শুরু থেকেই আইনের ভিত্তিতে হচ্ছিল না, এবং খানকে “রাজনৈতিক ক্ষমতার জন্য নির্বাচন থেকে নিষিদ্ধ করাই” ছিল বেআইনি আটকাদেশের উদ্দেশ্য।

তাদের মতামতের তারিখ ছিল ২৫ মার্চ কিন্তু মাত্র সোমবার তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, “উপযুক্ত সংশোধন হবে মিস্টার খানকে মুক্তি দিয়ে তাঁকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার প্রয়োগযোগ্য অধিকার দেয়া।”

'তুচ্ছ' অভিযোগে মামলা

একজন প্রাক্তন ক্রিকেট তারকা এবং রাজনিতিক, খান গত বছর অগাস্ট থেকে জেলে আছেন। তিনি ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, এবং ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে সংসদে বিরোধী দলের নেতৃত্বে অনাস্থা ভোট তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে।

পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ ক্ষমতাচ্যুত নেতার বিরুদ্ধে হত্যা, দেশদ্রোহ, ঘুষ এবং অন্যান্য অপরাধের অভিযোগে এক রাশ মামলা করেছে। কর্তৃপক্ষ মামলাগুলো দেশের ক্ষমতাবান সামরিক বাহিনীর নির্দেশে করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

খান অভিযোগগুলোকে তুচ্ছ এবং তাঁকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার প্রচেষ্টা বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি পাকিস্তান তেহরিক-এ-ইনসাফ পার্টি বা পিটিআই-এর প্রধান। পিটিআইকে ২৪.৫ কোটি মানুষের দেশের সব চেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে গণ্য করা হয়।

নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেহবাজ শরিফ (বাঁয়ে), তাঁর শপথবাক্য পাঠ করাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভী। ফটোঃ ৪ মার্চ, ২০২৪।
নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেহবাজ শরিফ (বাঁয়ে), তাঁর শপথবাক্য পাঠ করাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভী। ফটোঃ ৪ মার্চ, ২০২৪।

বিশেষজ্ঞরা বলেন তারা স্বাভাবিক নিয়মে পাকিস্তান সরকারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন, যাতে খানের কারাদণ্ডের আইনগত ব্যাখ্যা এবং সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক চুক্তির অধীনে তার সামঞ্জস্য যাচাই করা যায়। “ওয়ার্কিং গ্রুপ দুঃখিত যে তারা সরকারের তরফ থেকে কোন উত্তর পায় নাই,” তারা বলেন।

ইমরান খানের পার্টি জাতিসংঘ গ্রুপের প্রতিবেদন স্বাগত জানায় এবং পুনরায় অনতিবিলম্বে খানের মুক্তি দাবী করে।

“অবশেষে ইমরান খানের বেআইনি বন্দীদশা নিয়ে আন্তর্জাতিক মৌনতার অবসান হয়েছে,” বলেন জুলফি বুখারি, খানের উপদেষ্টা এবং পিটিআই মুখপাত্র।

“পাকিস্তান সরকার যেভাবে মিস্টার খানের স্বাধীনতা এবং অধিকার কেড়ে নিয়েছে, তাঁর নিন্দা যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাতিসংঘ পর্যন্ত প্রতিধ্বনিত হয়েছে … এবং এখন ওয়ার্কিং গ্রুপ দেখিয়ে দিয়েছে যে এসব করা হয়েছে রাজনৈতিক ক্ষমতার জন্য তাঁর নির্বাচনে যাবার প্রচেষ্টায় হস্তক্ষেপ করতে,” বুখারি বলেন।

ক্রিকেট ব্যাট থেকে বঞ্চিত

পাকিস্তানে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচনের প্রাক্বালে, পিটিআই প্রার্থীদের গ্রেফতার করা হয়, তাদের নির্যাতন করে ভয় দেখিয়ে পার্টি ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়। কর্তৃপক্ষ পিটিআই প্রচারণা জনসভা আটকে দেয়, বাধা দেয়।

একটি বিতর্কিত পদক্ষেপে, দলকে তাদের সুপরিচিত নির্বাচনী প্রতীক ক্রিকেট ব্যাট থেকে বঞ্চিত করা হয়, যার ফলে দলের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে বাধ্য হয়।

ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখের নির্বাচনের কয়েক দিন আগে, খানকে আরও তিনটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং অতিরিক্ত ১০, ১৪ এবং সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় । তিনি নির্বাচনের দিন তাঁর দলের উপর নির্যাতন, ভোটে জালিয়াতি এবং মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেট বন্ধ করার জন্য সামরিক বাহিনীকে দায়ী করেন। তবে সামরিক বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশন অভিযোগ অস্বীকার করে।

তবে বিধিনিষেধ সত্ত্বেও, পিটিআই-এর সাথে সম্পৃক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সব চেয়ে বেশি সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন, ৯২ জন, কিন্তু সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য তা যথেষ্ট ছিল না।

গত সপ্তাহে, যুক্তরাষ্ট্রের সংসদের নিম্নকক্ষ হাউস অফ রেপ্রেসেন্টেটিভস ৩৬৮-৭ ভোটে পাকিস্তানের নির্বাচনে “হস্তক্ষেপ বা অনিয়মের দাবীর উপর পূর্ণ এবং স্বাধীন তদন্ত” চালানোর আহবান জানায়।

ইসলামাবাদ এই তদন্তের ডাক দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের প্রস্তাবের উৎপত্তি হচ্ছে পাকিস্তানের “রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে অসম্পূর্ণ উপলব্ধি” থেকে।

XS
SM
MD
LG