অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

কোটা বাতিলের দাবিতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ


বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনের মুক্তমঞ্চের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। ১ জুলাই, ২০২৪।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনের মুক্তমঞ্চের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। ১ জুলাই, ২০২৪।

বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের প্রতিবাদে আবার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। হাইকোর্টের রায়ের ওপর আগামী ৪ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

সোমবার (১ জুলাই) শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনের মুক্তমঞ্চের সামনে তারা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। কর্মসূচি পলনকালে, সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। নিয়োগের ক্ষেত্রে সমতা প্রত্যেকের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারউল্লেখ করে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালকে সংবিধানের লংঘন বলে উল্লেখ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি বিলুপ্তি না হলে ছাত্র সমাজ কঠোর কর্মসূচি দেবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা। এর আগে গত ১০ জুন কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের প্রতিবাদে মানববন্ধন করে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী।

পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থী মো. ইরান মিয়া বলেন, “কোটা পদ্ধতির নামে বৈষম্য, বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ কখনোই মানবে না। সংবিধানে চাকরির ক্ষেত্রে সুযোগের সমতার কথা বলা হয়েছে এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে। কোটা পদ্ধতির পুনর্বহাল সংবিধানের লংঘন। তাই সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতির বিলুপ্তি না হলে ছাত্রসমাজ ছেড়ে কথা বলবে না।”

কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী মো. জুহায়ের আমিন হৃদয় বলেন, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সমতা সবার সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। আবার পুরনো সেই কোটা প্রথা ফিরিয়ে আনার যে প্রয়াস দেখা যাচ্ছে, তাতে এই মৌলিক অধিকার লাভের পথ ব্যাহত হবে। এমন বৈষম্য রুখে দাঁড়িয়েছে সচেতন ছাত্র সমাজ। নিজেদের ন্যায্য অধিকার ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা রাজপথ থেকে ফিরবে না।

ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম তুষার বলেন, “স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর, কোটা প্রথা চলতে পারে না। বর্তমানে প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ছাড়া আর কোনো কোটার প্রয়োজন নেই। আগামী ৪ জুলাইয়ের রায় সারা বাংলার ছাত্র সমাজের যৌক্তিক দাবির বিরুদ্ধে গেলে আমরা কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলন গড়ে তুলবো।”

আপিল বিভাগের রায়

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায়, গত ৯ জুন আপাতত বহাল রেখেছে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। এছাড়া, এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।

রবিবার (৯ জুন) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। এর আগে, সকালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

উল্লেখ্য, গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। ৬ জুন থেকে সে রায়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে।

হাইকোর্টের রায়

গত ৫ জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে, মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল থেকে যায়। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করেন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এবং এ রায় দেন।

বাংলাদেশ জুড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে, ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার।

পরিপত্রে বলা হয়, নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। এই সব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা বাতিল করা হলো। পরে, এ পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী।

XS
SM
MD
LG