বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, ভারতের ও বাংলাদেশের মধ্যে সই হওয়া সমঝোতা স্মারকের সকল ধারা না পড়ে এবং না বুঝে বিএনপি অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করছে। “ধারাগুলো খন্ডিতভাবে তুলে ধরে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে;” আরো বলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী।
সোমবার (১ জুলাই) দুপুরে, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিষয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।
“কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। সেখানে কিছু সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এই সমঝোতা স্মারকের বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কিছু মূলধারার গণমাধ্যমেও ভুল তথ্য চলে এসেছে;” যোগ করেন আরাফাত।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, “আমরা দেখেছি, বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা এ নিয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। সর্বশেষ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও যুক্ত হয়েছেন সেই অপপ্রচারে।”
“রবিবার তিনি একটি প্রেস কনফারেন্সে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেগুলো একেবারেই অসত্য এবং ডাহা মিথ্যা কথা। সমঝোতা স্মারকের সবগুলো ধারা তিনি হয়তো পড়েননি বা যারা অপপ্রচার করেছে তারাও পড়েননি। সব ধারা না পড়ে, খণ্ডিতভাবে এগুলো তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে;” তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক কোনোভাবেই সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি নয়, বরং এটি উভয় দেশের জন্য লাভজনক; বলেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী আরাফাত বলেন, বিএনপি অপপ্রচার করছে যে, বাংলার বুক চিরে ভারতের ট্রেন চললে বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হবে। এটা মোটেও সঠিক নয়। সমঝোতা স্মারকের ৩ নম্বর ধারায় পরিষ্কার বলা হয়েছে, রেড ট্রাফিক তথা অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং বিস্ফোরকসহ বিপজ্জনক ও আপত্তিকর পণ্য পরিবহন করা যাবে না। সমঝোতা স্মারকের ৪ নম্বর ধারায় এটাও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পণ্য ও মানুষের চলাচল, সংশ্লিষ্ট দেশের জাতীয় আইন, প্রবিধান এবং প্রশাসনিক বিধানের অধীনে হবে।
“বিএনপি এটা বলে না যে, ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ট্রেন নেপাল ও ভুটান পর্যন্ত চলবে। নেপাল-ভুটান থেকে ভারতের মধ্য দিয়ে ট্রেন বাংলাদেশে আসবে এবং কলকাতা বন্দর ব্যবহার না করে মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করবে;”প্রতিমন্ত্রী আরাফাত যোগ করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, তারা এটা বলে না যে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ গ্রিডের মাধ্যমে, ভারতের ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহার করে, ভারতের বুক চিরে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করবে বাংলাদেশ।
গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তিতে ভারতকে রাজি করিয়ে, গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা শেখ হাসিনাই আদায় করেছেন বলে উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী আরাফাত।
বিএনপির রাজনীতি ‘নতজানু’ উল্লেখ করে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে বিজেপি প্রথম ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গ বিএনপি মিষ্টি বিতরণ করেছিলো। ভারতকে গ্যাস দেয়ার ‘মুচলেকা’ দিয়ে ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি।
প্রতিমন্ত্রী আরাফাত বলেন, “আপনাদের বিবেক নতজানু, যে কারণে আপনারা নিজেরা যা করতে পারেননি, এমনকি কোনো উদ্যোগ নেননি, সেগুলো নিয়ে আওয়ামী লীগের অর্জন থাকা সত্ত্বেও সমালোচনা করেন। আপনাদের সততার মানদণ্ড নতজানু, যে কারণে আপনারা ডাহা মিথ্যা কথা বলে জনগণকে প্রতিনিয়ত ধোঁকা দেন এবং বিভ্রান্ত করেন।”
বিএনপি সমঝোতা স্মারক প্রত্যাখ্যান করে, সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল
নয়াদিল্লি সফরে ভারতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সই করা ১০টি সমঝোতা স্মারককে 'দাসত্বের নতুন সংস্করণ' বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। বলেছে, “বিএনপি এসব দেশবিরোধী চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক প্রত্যাখ্যান করে।”
প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি অনতিবিলম্বে জনসম্মুখে প্রকাশের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে বিএনপি। রবিবার (৩০ জুন) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ আহবান জানান।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভারতকে একটি রেল করিডোর প্রদান করে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে রেলপথের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার অনুমতি দেয়া আত্মঘাতী এবং জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। ভারতের সঙ্গে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করা হবে বলে জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া অবৈধ মাফিয়া সরকারের বর্তমান প্রধান শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে ১০টি সমঝোতা স্মারক সই করেছেন। এটা দাসত্বের নতুন সংস্করণ।”
ভারতকে যোগাযোগের নামে একটি করিডোর দেয়া, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে যাওয়া রেল লাইনের মাধ্যমে ভারতের এক অংশ অন্য অংশের সঙ্গে যুক্ত করার উদ্যোগ, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করবে বলে উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।
“দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিসর্জন দিয়ে এসব সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে ভারতের দাসত্বের ফাঁদে দীর্ঘদিনের জন্য বাংলাদেশকে আটকে ফেলার নিন্দনীয় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন শেখ হাসিনা। জাতীয় স্বার্থবিরোধী এ ধরনের চুক্তি জনগণ মেনে নেবে না;” মির্জা ফখরুল যোগ করেন।
বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ সমঝোতা স্মারক সই করেছেন।আর, এটা করা হয়েছে দেশ ও জনগণের কল্যাণের পরিবর্তে, রাষ্ট্রক্ষমতার ওপর আওয়ামী লীগের অবৈধ নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারণের বিনিময়ে; তিনি যোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা দাবি জানাচ্ছি, ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি অবিলম্বে জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। আমরা আবার বলতে চাই, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তার পরিপন্থী এসব চুক্তি জনগণ কখনোই মেনে নেবে না। বিএনপি এসব দেশবিরোধী চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক প্রত্যাখ্যান করে।”