অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

মুদ্রাস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে বাজেট জাতীয় সংসদে অনুমোদন


জাতীয় সংসদে কিছু ছোটখাটো পরিবর্তন এনে অর্থবিল-২০২৪ পাস হয়। ২৯ জুন, ২০২৪।
জাতীয় সংসদে কিছু ছোটখাটো পরিবর্তন এনে অর্থবিল-২০২৪ পাস হয়। ২৯ জুন, ২০২৪।

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে রবিবার (৩০ জুন) জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ১২ লাখ ৪১ হাজার ৭৫২ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ চেয়ে নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২৪ উত্থাপন করলে, তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে শনিবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে কিছু ছোটখাটো পরিবর্তন এনে অর্থবিল-২০২৪ পাস হয়।

সরকারের প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয় মেটানোর জন্য, অর্থ বরাদ্দের সংসদীয় অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক সংসদে উত্থাপিত প্রস্তাব অনুসরণ করে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির মাধ্যমে স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের ব্যয়ের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন।

এর আগে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরি দাবিতে বিরোধী দলের সদস্যদের নামে দাঁড়িয়ে থাকা মোট ২৫১টি ছাঁটাই প্রস্তাব সংসদে কণ্ঠভোটে প্রত্যাখ্যান করা হয়।

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ, হামিদুল হক খন্দকার, আবুল কালাম, সোহরাব উদ্দিন ও নাসের শাহরিয়ার জাহেদী-সহ ৭ জন ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এ সময় তাদের আইন মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আলোচনায় অংশ নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়।

পরে, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী মধ্যাহ্নভোজের বিরতি না দিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরি দাবি পাসের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেন। বরাদ্দ বিল পাস হওয়ার সময় বিরোধী ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন এবং তারা বিলটি পাস করার বিষয়ে আপত্তি উত্থাপন করেননি।

‘সংকোচনমূলক নীতি দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধি ধীর করতে পারে’

এদিকে, শনিবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক নীতি দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে শ্লথ করতে পারে, এ কথা অনস্বীকার্য।

“যদিও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সংকোচনমূলক নীতি গ্রহণ করা দরকার, তবে এটি অনস্বীকার্য যে দীর্ঘমেয়াদে এই পদ্ধতি প্রবৃদ্ধিকে ধীর করতে পারে;” আরো বলেন অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী।

তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে, বাংলাদেশকে অব্যাহত উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। “এ প্রেক্ষাপটে আমরা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির আপাত পরস্পরবিরোধী লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই বাজেট প্রণয়ন করেছি;” তিনি আরো বলেন।

মাহমুদ আলী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়ার চেষ্টা করেছে। “এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আমরা যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছি;” তিনি যোগ করেন।

প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার বিষয়কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

তিনি জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে, ইতোমধ্যেই মুদ্রানীতিতে বিভিন্ন সংকোচনমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পলিসি রেট (রেপো) উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে সাড়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে এবং ব্যাংকের সুদের হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা হয়েছে; আরো জানান তিনি।

সরকারের গৃহীত নীতিমালার কারণে, আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সহায়ক অবকাঠামো উন্নয়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পদ সংগ্রহের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

“এসব উদ্যোগের ফলে আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মধ্য মেয়াদে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আমরা আশা করছি;” জানান অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী। তিনি বলেন, সরকারি ব্যয় মেটাতে সম্পদ সংগ্রহের জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

XS
SM
MD
LG