অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী: ‘মূল্যস্ফীতি রোধে সংকোচনমূলক নীতি দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধি ধীর করতে পারে’


বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী

বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক নীতি দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে শ্লথ করতে পারে, এ কথা অনস্বীকার্য। শনিবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

“যদিও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সংকোচনমূলক নীতি গ্রহণ করা দরকার, তবে এটি অনস্বীকার্য যে দীর্ঘমেয়াদে এই পদ্ধতি প্রবৃদ্ধিকে ধীর করতে পারে;” আরো বলেন অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী।

তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে, বাংলাদেশকে অব্যাহত উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। “এ প্রেক্ষাপটে আমরা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির আপাত পরস্পরবিরোধী লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই বাজেট প্রণয়ন করেছি;” তিনি আরো বলেন।

মাহমুদ আলী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়ার চেষ্টা করেছে। “এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আমরা যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছি;” তিনি যোগ করেন।

প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার বিষয়কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

তিনি জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে, ইতোমধ্যেই মুদ্রানীতিতে বিভিন্ন সংকোচনমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পলিসি রেট (রেপো) উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে সাড়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে এবং ব্যাংকের সুদের হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা হয়েছে; আরো জানান তিনি।

মাহমুদ আলী বলেন, রপ্তানিকে উৎসাহিত করতে এবং রেমিট্যান্স ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে ডলারের বিনিময় হারে ক্রলিং পেগ সিস্টেম চালু করা হয়েছে। মুদ্রানীতির সংকোচনমূলক উদ্যোগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাজস্ব নীতিতে সহায়ক নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, বাজেট ঘাটতি হ্রাস, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় নিরুৎসাহিত করা এবং বিভিন্ন খাতে কৃচ্ছ্রসাধনের উদ্যোগ; তিনি আরো বলেন।

সরকারের গৃহীত নীতিমালার কারণে, আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সহায়ক অবকাঠামো উন্নয়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পদ সংগ্রহের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

“এসব উদ্যোগের ফলে আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মধ্য মেয়াদে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আমরা আশা করছি;” জানান অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী। তিনি বলেন, সরকারি ব্যয় মেটাতে সম্পদ সংগ্রহের জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

“রাজস্ব আদায় নীতিমালা নির্ধারণের আগে আমরা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী সংগঠন ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের প্রস্তাবগুলো বিস্তারিত পর্যালোচনা করেছি;” তিনি জানান।মাহমুদ আলী বলেন, উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে সরকার কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে কর ফাঁকি হ্রাসসহ কর আদায় বাড়াতে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।

রাজস্ব আহরণে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ অতিক্রমের মাধ্যমে মধ্য-মেয়াদে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণোত্তর বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে সরকার জাতীয় কাস্টমস নীতিমালা সংস্কার করছে।

“রপ্তানি বিরোধী পক্ষপাত কমাতে সহায়তা করার জন্য, আমদানি শুল্কের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করা হচ্ছে;” যোগ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে বাংলাদেশ এবং ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে শামিল হবে। “আর, ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা একটি উন্নত-সমৃদ্ধ-স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো;” বলেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী।

XS
SM
MD
LG