অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বিএনপি নেতা ফারুক: ‘আওয়ামী লীগ আজিজ-বেনজীরের মতো দুর্নীতিবাজকে আশ্রয় দিয়েছে’


বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক

আওয়ামী লীগ সরকার আজিজ আহমেদ ও বেনজীর আহমেদের মতো অসংখ্য দুর্নীতিবাজকে আশ্রয় দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক।

শুক্রবার (২৮ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে এ অভিযোগ করেন তিনি। ভারতের সঙ্গে সরকারের চুক্তির প্রতিবাদে এ বিক্ষোভের আয়োজন করে প্রজন্ম বাংলাদেশ।

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ফারুক প্রশ্ন করেন, “এখন কোথায় বেনজীর (সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ), আজিজ (সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ), মতিউর (রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান)?”

“বাংলাদেশে সরকারের আশ্রয়ে অসংখ্য ব্যক্তি লুটপাট করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, বিদেশে ঘরবাড়ি বানিয়েছেন। তারা সাঁতার কাটার জন্য সুইমিং পুল-সহ প্রাসাদ তৈরি করেছিলো। এই মানুষগুলোর মুখোশ উন্মোচন করে দিতে হবে, তা না হলে বাংলাদেশের জনগণ আপনাদের কখনো ক্ষমা করবে না;” আরো বলেন জয়নুল আবদিন ফারুক।

সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যে সরকারকে সমর্থন করায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সমালোচনা করেন সংসদের সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ফারুক।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ খুবই সচেতন। গুটিকয়েক আমলার সমর্থন নিয়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আছে। “আপনারা একদিনের জন্যও বাংলাদেশের মানুষের মন জয় করতে পারেননি;” যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে, রেল লাইন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার বিষয়ে ভারত সরকারের পরিকল্পনার সমালোচান ও বিরোধিতা করেন তিনি। বলেন, “ভারতের সঙ্গে এই অসম চুক্তি আমরা মেনে নেবো না। এসব অন্যায্য চুক্তি প্রত্যাহার করুন।”

বিশ্বজুড়েই দুর্নীতি একটি বাস্তবতা: ওবায়দুল কাদের

এদিকে, বিশ্বজুড়েই দুর্নীতি একটি বাস্তবতা বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, “এটি বাংলাদেশে বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় নয়।”

বুধবার (২৫ জুন) সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিআরটিসি শাটল বাস সার্ভিসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, “এখানে দুর্নীতি নেই বলে দাবি করছি না। শুধু সরকারি কর্মকর্তারা দুর্নীতিবাজ ও রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিবাজ নন, এ কথা বলা ঠিক নয়।”

“আমরা যখন কথা বলি, তখন আমাদের অবশ্যই সবাইকে বিবেচনা করতে হবে, প্রথমে আয়নায় নিজের চেহারা দেখতে হবে। আমি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছি, আমার খাতেও দুর্নীতি আছে। এখানে নেই? অবশ্যই আছে;” যোগ করেন ওবায়দুল কাদের।

এ সময় তিনি দুর্নীতি দমনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।বলেন, “আমি মনে করি দুদক এখানে আছে এবং প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে অবিচল।”

“সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়াই দুর্নীতির তদন্ত করছে দুদক। সরকার দুদকের এই স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেনি এবং করবেও না;” জানান ওবায়দুল কাদের।

‘বিব্রত নয় সরকার’

এর আগে গত ২৮ মে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদ ইস্যুতে সরকার বিব্রত নয়। ধানমন্ডিতে, আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

“সরকারের বিচার করার সৎ সাহস আছে। সরকার তাদের অপরাধ অস্বীকার করে পার পেয়ে যাবার সুযোগ দেয়নি। দুর্নীতির ব্যাপারে সরকার আপোষহীন;” যোগ করেন তিনি।

বেনজীরের বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে বলে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, দুদক স্বাধীন। সরকার দুদককে স্বাধীনতা দিয়েছেন। দুদক জানিয়েছে, বেনজীর আহমেদের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে তদন্ত এখনো চলছে এবং আরো তদন্ত করা হবে।

“যেহেতু তদন্ত চলছে, সেহেতু তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। শেখ হাসিনার শাসনামলে কোনো অপরাধী ছাড় পাবে না। সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ, তিনি যদি অপরাধী হন, তার বিরুদ্ধেও তদন্ত করতে পারবে দুদক। অপরাধী হলে অপরাধের জন্য শাস্তি পেতেই হবে। তিনি যেই হোন;” যোগ করেন ওবায়দুল কাদের।

সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ সম্পর্কে হাছান মাহমুদ

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান, অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত ভিসা নীতির আওতায় নেয়া হয়নি বলে জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। গত ২১ মে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

“বাংলাদেশ সরকার দুর্নীতি দমনে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে এবং এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখবে;” যোগ করেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমনে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করছে। “আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই এবং তা অব্যাহত রাখবো;” আরো বলেন হাছান মাহমুদ।

এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত ভিসা নীতির আওতায় নেয়া হয়নি। এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট, ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান,যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ এবং সন্ত্রাসবাদ, মানবপাচার ও অন্যান্য ইস্যুতে ২ দেশ একসঙ্গে কাজ করছে। সাবেক সেনাপ্রধানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত প্রথমে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানানো হয় বলেও জানান তিনি।

বিষয়টি একজন সাবেক সেনাপ্রধানের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

বাংলাদেশের সাবেক সেনা প্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর বা স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রাক্তন প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে ‘উল্লেখযোগ্য দুর্নীতির’ সাথে সম্পৃক্ততার কারণে ‘ডেসিগনেট’ করেছে, বা তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

“আজিজ আহমেদ সরকারি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে লিপ্ত হন, এবং তার ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কাজের জন্য জবাবদিহিতা এড়াতে সহায়তা করেন,” সোমবার (২০ মে) এক বিবৃতিতে স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানায়।

স্টেট ডিপার্টমেন্ট-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আজিজ অন্যায় ভাবে সামরিক কন্ট্রাক্ট প্রদানে তার ভাইয়ের সাথে কাজ করেন এবং নিজ সুবিধার জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণ করেন।

“তার কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থা দুর্বল করার জন্য অবদান রেখেছে,” বিবৃতিতে বলা হয়।

স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলে, আজিজের ‘ডেসিগনেশন’ বাংলাদেশে আইনের শাসন এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান জোরদার করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার আবারো ব্যক্ত করছে।

“যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সরকারি পরিষেবা আরো স্বচ্ছ, ব্যবসায়িক ও নিয়ন্ত্রক পরিবেশের উন্নয়ন এবং অর্থ পাচার সহ আর্থিক অপরাধ তদন্ত আর তার বিচারের মাধ্যমে দুর্নীতি-বিরোধী কার্যক্রম সমর্থন করে,” বিবৃতিতে বলা হয়।

এই ‘ডেসিগনেশন’ বা নিষেধাজ্ঞার ফলে, আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা সাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশের অযোগ্য হবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, র‌্যাব ও বেনজীর আহমদ

২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়।

এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র‍্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত।

এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র‍্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র‍্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।

XS
SM
MD
LG