আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এর অনুমোদিত ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি হিসেবে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া, আরো কিছু উৎস থেকে পাওয়া ঋণের কিস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। ফলে দেশটির রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানান, “আইএমএফ ছাড়াও আমরা কোরিয়া, আইবিআরডি, আইডিবি এবং অন্যান্য উৎস থেকে প্রায় ৯০ কোটি ডলার পেয়েছি। ফলে মোট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের বেশি।”
গত ২৪ জুন আইএমএফ-এর নির্বাহী বোর্ড তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের অনুমোদন দেয়। ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি ঋণ প্যাকেজের প্রথম কিস্তি অনুমোদন করে আইএমএফ। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ৪৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার গ্রহণ করে। আইএমএফের ঋণের পুরো অর্থ ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে ৩ বছরে ৭ কিস্তিতে বাংলাদেশকে দেয়া হবে।
এর আগে, আইএমএফ ঋণের তৃতীয় কিস্তি, জুন মাসেই পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
গত ২৬ মে সচিবালয়ে, আইএমএফের নির্বাহী পরিচালক ড. কৃষ্ণমূর্তি ভি সুব্রামানিয়ান বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর পর অর্থমন্ত্রী এ কথা জানান।
তখন অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেছিলেন, “আমরা চেষ্টা করছি, যাতে ডলারের প্রবাহ বাড়ানো যায়। অনেক আলোচনা আছে। আমরা আশা করছি, এ সমস্যা সমাধান করতে পারবো। আমরা কাজ করছি।”
অনাদায়ী ঋণ প্রসঙ্গে আইএমএফ
গত ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে জনস্বার্থে অনাদায়ী ও ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে বিস্তারিত ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশের পরামর্শ দেয় আইএমএফ প্রতিনিধি দল।
বৈঠকে আইএমএফ ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা ও পরিদর্শন প্রতিবেদন গ্রাহকদের জন্য উন্মুক্ত করতে বলে। একই সঙ্গে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঋণ কেলেঙ্কারি রোধে, পরিদর্শনের সংখ্যা বাড়ানোর তাগিদ দেয়।
সে সময় বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বড় ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়মের কারণে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ বাড়ছে। আর বেশ কয়েকটি ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে স্বীকার করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
তাই, সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোতে মানুষের আমানত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে মনে করছে আইএমএফ। এমন পরিস্থিতিতে, ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন গ্রাহকদের সামনে প্রকাশ করার পরামর্শ দেয় এই বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থা।
আইএমএফ কর্মকর্তাদের মতে, এসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে গ্রাহক তাদের আমানত রাখার বিষয়ে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
বৈঠকে আইএমএফ ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন অব্যাহত আছে কি না, তা জানতে চেয়েছে। পরিদর্শন প্রতিবেদনগুলো গ্রাহকদের কাছে প্রকাশ করা হয় কি না সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা চাওয়া হয়েছে।
অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঋণ কেলেঙ্কারি রোধে গুণগত মান ও পরিদর্শনের সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক জানান, আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক চলছে। আগামী ৮ মে পর্যন্ত ধাপে ধাপে এই বৈঠক চলবে।
এর আগে, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। বাংলাদেশ মোট সাত কিস্তিতে এই ঋণ পাবে বলে জানিয়েছিলো আইএমএফ।
ঋণ অনুমোদনের প্রতিক্রিয়ায় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, “আমরা অবশ্যই আইএমএফের প্রতি এই ঋণের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।”