হরিজন বা দলিত গোষ্ঠীর কলোনি মিরন জল্লা অনুমানিক ৪ ফিট বাই ৮ ফিটের এক কক্ষের এক বাড়িতে স্বামী-তিন ছেলে-মেয়ে এবং শাশুড়িকে নিয়ে থাকেন পিংকি দাস। শুধু পিংকি দাসের ঘর নয়, সরেজমিনে মিরন জল্লা কলোনি গিয়ে দেখা গেছে- অধিকাংশ ঘরের আকৃতি ৫ ফিট বাই ৮ ফিট, ১০ ফিট বাই ১০ ফিট। এসব ঘরে কোনও রকম জীবন-যাপন করছেন হরিজন সম্প্রাদায়ের মানুষরা।
পিংকি দাস ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ঘরে ঘুমানোর জায়গায় না থাকায় এক সন্তানকে নারায়ণগঞ্জে মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।“
কক্ষের মধ্যে থাকা ছোট একটি খাট দেখিয়ে পিংকি বলেন, “এখানে আমি, আমার স্বামী ও দুই-ছেলে-মেয়ে থাকি। আর রাতে খাটের পাশে পর্দা দিয়ে খালি অংশে আমার শাশুড়ি থাকেন । এখন এই ঘর থেকে আমাদেরকে উচ্ছেদ করে দেওয়া হলে কোথায় যাবো?"
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোররেশন সম্প্রতি মিরন জল্লা কলোনিতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে গত চারশো বছর ধরে বসবাসরত দলিত হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের কোনোরকম পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করেই উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়ার পর ভয়েস অফ আমেরিকার পক্ষ থেকে সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে পিঙ্কি দাস একথা বলেন। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে এই উচ্ছেদ কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ আছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোররেশন এখানে একটি কাঁচাবাজার করার পরিকল্পনা নিয়েছে।
মিরন জল্লা কলোনির একই আকারের আরেকটি ঘরে ৬ জনের পরিবার নিয়ে থাকেন মাকিন দাস। তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "এই কক্ষে ৩ জনের বেশি কোনভাবেই ঘুমাতে পারি না। বাকিরা মন্দিরে গিয়ে ঘুমাতো।”
তিনি আরও বলেন, “পরে একটি এনজিও থেকে কিছু টাকা ঋণ নিয়ে উপরে সমান আরেকটি রুম করেছি। এখন সেখানে মা-বা এবং ২ ছেলে থাকেন। এইভাবে চলে যাচ্ছে আমাদের জীবন।"
ভেঙে ফেলা ঘরের বাসিন্দারা আশ্রয় নিয়েছে আকাশের নিচে
গত ১২ জুন মিরন জল্লা কলোনিতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ২০ টির মতো ঘর ভেঙে দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। পরে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে হরিজন সম্প্রদায়ের স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীরা। ১৩ জুন উচ্ছেদপ্রক্রিয়ার ওপর ৩০ দিনের স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেয় হাইকোর্ট।
গত ১৬ জুন সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভেঙে ফেলা ঘরগুলোর পরিবারগুলো মধ্যে কেউ মন্দিরে, কেউবা ভাঙা জায়গায় খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন।
ভাঙা ঘরের মেজেতে কাঠের পাটাতন বিছিয়ে বসে আছেন মুরাদ। তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "আমরা ৭ বংশ ধরে এখানে বসবাস করছি। ব্রিটিশরা আমাদের পূর্ব পুরুষদের এখানে নিয়ে এসেছে। কিন্তু এখন আমাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। তাহলে আমরা কোথায় যাবো। আমাদের এই জায়গা ছাড়া আর কিছু নেই।”
ভাঙা ঘরটি দেখিয়ে মুরাদ বলেন, "এখানে আমার বাবা-ভাই মিলে ৫ জন থাকি। এখন ঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ভাঙা ঘরে পাটাতন বিছিয়ে আমি,ভাই ও বাবা থাকি। আর শিশুরা মন্দিরে থাকে।”
তার মতো অন্য পরিবারগুলো একইভাবে ভাঙা ঘরের ফ্লোর পরিষ্কার করে সেখানে কোনও রকম জীবন-যাপন করছে।
কারা এই হরিজন সম্প্রদায়? কবে থেকে তারা এ এলাকায় বাস করছেন?
ব্রিটিশ শাসকরা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দরিদ্র ও দলিত জনগোষ্ঠীকে কাজের জন্য এই অঞ্চলে (বাংলাদেশে) নিয়ে আসেন। যারা মূলত হরিজন সম্প্রদায় নামে পরিচিত। ইতিহাসবিদ ও গবেষকরা বলছেন, ব্রিটিশরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পয়ঃনিষ্কাশন, চা-বাগানসহ প্রভৃতি কাজ করানো জন্য ভারতের নানা অঞ্চল থেকে দরিদ্র ও দলিত জনগোষ্ঠীকে নিয়ে আসে। ভূমিহীন এই হরিজন সম্প্রদায় মানুষদের থাকার জন্য জায়গাও দেওয়া হয়। যেখানে তারা গত ৩-৪ শত বছর ধরে প্রজন্ম পর প্রজন্ম বসবাস করছে। যে জায়গায় তারা থাকে সেই ভূমির ওপর মালিকানা তাদের নেই।
লেখক, গবেষক, গওহার নঈম ওয়ারা ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "বাংলাদেশে বসবাসকারী অবাঙালি দলিতদের সাধারণভাবে হরিজন বলা হয়। ব্রিটিশ আমলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, চা-বাগানের কাজ, জঙ্গল কাটা ও পয়োনিষ্কাশনসহ বিভিন্ন কাজের জন্য ভারতের নানা অঞ্চল থেকে দরিদ্র দলিত মানুষকে এ দেশে আনা হয়। ভূমিহীন এসব মানুষদের থাকার জন্য জায়গা দেওয়া হয়।”
হরিজনদের নিয়ে কাজ করা আরেক গবেষক আলতাফ পারভেজ ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “গত চার শত বছর ধরে এরা বাংলাদেশে আছে। ঢাকায় ১৫-২০ টির মতো কলোনি আছে। সারাদেশে তো আছেই।”
তিনি বলেন, “হরিজনের বড় সমস্যা হলো ভূমির ওপর মালিকানা না থাকা । কেউ আছেন সরকারি জমিতে, কেউ আছেন রেলওয়ের জমিতে। এরা প্রায়ই উচ্ছেদ হয়। আবার সরকার যে কলোনিগুলো তৈরি করছে, সেখানে বাসা পেতে হলে সরকারি চাকরি লাগবে। কিন্তু পরিচ্ছন্নতা কর্মীর চাকরি নিয়ে যাচ্ছে বাঙালিরা, ১০-১৫ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে। ফলে, একদিকে তারা চাকরি হারাচ্ছে। আর চাকরি হারানো সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে জমি বা বাসস্থান হারানোর। কারণ তাদেরকে তো ভূমির মালিকানা দেওয়া হয়নি।”
আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “মোঘল শাসক বা ব্রিটিশ শাসক যাই বলেন না কেন, তারা এদেরকে এনেছিলেন ঢাকাকে পরিষ্কার করার জন্য। তখন এই কাজগুলো তারাই করতো। বংশ পরম্পরায় এই চাকরিগুলো তাদের পাওয়ার কথা ছিলো। এই রকম কথা দিয়ে তাদেরকে এই দেশে আনা হয়েছিলো।”
মিরনজিল্লা সুইপার কলোনিতে ৭ হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করেন বলে জানান সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বলেন, সেখানে ৮ শ'র মতো পরিবার আছে। আর সারাদেশে কতজন হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ আছে তার সঠিক কোনও পরিসংখ্যান নেই।
মাযহারুল ইসলাম ও আলতাফ পারভেজের ২০১৩ সালের গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে বসবাসরত বাঙালি–অবাঙালি দলিতদের সংখ্যা বর্তমানে ৫৫ থেকে ৬০ লাখ।
কলোনির উন্নয়ন নয়, জায়গার মালিকানা চান বাসিন্দারা
১৬ জুলাই মিরন জল্লা কলোনির মন্দিরে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় বিকে দাসসহ কয়েকজন তরুণের সঙ্গে। তখন বিকে দাসসহ অন্যরা বলেন, “ব্রিটিশ আমল থেকেই আমাদের দাদার-দাদারা এখানে বসবাস করে আসছেন। এখন সিটি করপোরেশন আমাদের উচ্ছেদ করে দিলে কোথায় যাবো। আমাদের নিজেদের তো কোনও জায়গা নেই। আমাদের কলোনিতে আমরা কোনও উন্নয়ন চাই না। আমাদের জায়গা আমাদের বুঝিয়ে দেয়া হোক।”
কলোনির কেন উন্নয়ন চান না জানতে চাইলে বিকে দাস বলেন, "আগের মেয়র (সাঈদ খোকন) থাকতে ২ টি ঝুকিপূর্ণ বিল্ডিং ভেঙে নতুন করে ভবন তৈরি কাজ শুরু করা হয়। তখন বলা হয়েছিল- এই দুই জায়গায় যে ৬০ টি পরিবার বসবাস করতো, নতুন ভবনে তাদেরকে ঘর দেওয়া হবে। কিন্তু এই মেয়রের এসে বললো যারা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাচিবিক আদেশ চাকরি করে শুধু তারাই ঘর পাবে। যে কারণে মাত্র ১৮ টি পরিবার ঘরের চাবি পেয়েছে।”
তিনি বলেন, “বাকিদের মধ্যে ১৮ টি পরিবার এখন স্কুলের ছাদে টিনশেড করে বসবাস করছেন। ৪ টি পরিবার অতিথি ভবনের মধ্যে বাস করছেন। তাই আমাদের জায়গায় তৈরী ভবনে আমরাই যদি ঘর না পাই, সেই উন্নয়নের দরকার নেই।”
অন্যদের কেন ঘর দিচ্ছে না জানতে চাইলে- বিকে দাস বলেন, “তারা বলেছে (ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ) আমাদের কর্মীচারীদের শুধু ঘর দেওয়া হবে। অন্যদের দায়িত্ব কেন আমরা নিবো। যারা উত্তর সিটি করপোরেশনসহ অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে তারা এখানে ঘর পাবেন না।”
আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “আপনি এদের কলোনি গেলে দেখবেন ১০ ফিট বাই ১০ ফিটের একটি ঘরে ৫ জন মানুষ থাকে। এমনকি তারা শিফট করে ঘরে ঘুমাই। দুইজন ঘুমালে বাকি ২ জন দেখা যায় বাইরে মন্দিরে গিয়ে বসে থাকেন।"
বেতন কম, পেনশন কিংবা উৎসব ভাতা নেই
রাজধানীর বংশালের আগাসাদেক রোডের মিরন জল্লা কলোনির হরিজন সম্প্রদায়ের লোকেরা বলছেন, তাদের মধ্যে যারা সিটি করপোশেরন বর্জ্য পরিষ্কারে কাজ করেন তাদের বেতন খুবই কম। অবসের তাদেরকে দেওয়া হয় না কোনও পেনশন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন উৎসবে তাদেরকে কোনও ভাতা দেওয়া হয় না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন দাবী করেন, “আমি যখন দায়িত্বে ছিলাম তখন তাদেরকে বিভিন্ন উৎসব ভাতা দিতাম। তাদেরকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হতো।“
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোশেনের বর্জ্য নিষ্কাশনের কাজ করেন কলোনির বিকে দাস। তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “আমাদের বেতন খুবই কম। কোনও উৎসব ভাতা দেওয়া হয় না। আর ৫৯ বছর বয়স হলে বাধ্যতামূলক অবসরে চলে যেতে হয়। তখন আমাদের কোনও পেনশন দেওয়া হয় না।”
তিনি বলেন, আগে কেউ অবসরে গেলে পোষ্য কোটায় তার ছেলে-মেয়েরা এই চাকরি পেতো। আমাদের জন্য এই কাজ বরাদ্দ ছিলো। কিন্তু বর্তমানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র এটি বন্ধ করে দিয়েছে। এই চাকরিগুলো এখন সাধারণ মানুষকে দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে, অনেকে বেকার হয়ে পড়ছে।”
একই কথা বলছেন মুরাদ দাস। তিনি ভয়েস অফ আমেরিকা বলেন, “আমার বাবার কাছ থেকে আমি এই চাকরি পেয়েছি। কিন্তু আমি অবসরে গেলে এই চাকরি আমার ছেলে-মেয়ের হস্তান্তর করতে পারবো না। যেটা আগে করা যেতো।"
আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “...বর্তমানে, চাকরিগুলো হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন পাচ্ছে না। বাঙালিরা এই চাকরিগুলো নিচ্ছে। অধিকাংশ কোয়ার্টারগুলো বাঙালিদের দখলে। যার কারণে হরিজনরা বেকার হয়ে পড়ছে। কেউ-কেউ সিটি করপোরেশনে কাজ করছে। আর অন্যরা বিভিন্ন সরকারী সংস্থা বা বেসরকারি সংস্থায় কাজ করছে।”
মিরন জিল্লা কলোনির উচ্ছেদঃ আন্দোলন-আইনী লড়াই চালিয়ে যাবে হরিজনরা
গত ১৩ জুন মিরনজিল্লা সুইপার কলোনিতে থাকা হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের উচ্ছেদপ্রক্রিয়ার ওপর ৩০ দিনের স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেয় হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।আগামী ১৩ জুলাই এই স্থিতাবস্থার মেয়াদ শেষ হবে।
রিটকারী তিন আইনজীবীদের একজন, মনোজ কুমার ভৌমিক। তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “উচ্ছেদ অভিযান কেন অবৈধ হবে না এই মর্মে আদালতে আমরা একটা রুল চেয়েছিলাম। আদালত সেই মর্মে রুল দিয়েছেন, এক মাসের জন্য উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, “এখন আমরা এই স্থিতি আদেশ অবশ্যই বাড়াতে এবং যাতে তারা ভাঙতে না পারে তার জন্য কাজ করবো। কারণ এখানে তাদের ২ শত বছরের বেশি পুরানো বসতি। তাদেরকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ করাটা অত্যন্ত অমানবিক। এই জন্য তো আমরা আইনী যুদ্ধ তো অবশ্যই চালিয়ে যাবো।”
এই বিষয় নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে বলে জানান কুমার ভৌমিক।
তিনি বলেন, “আগামীতে সবাই একসঙ্গে এই উচ্ছেদ অভিযান বন্ধের বিরুদ্ধে কাজ করবো আমরা।”
মিরন জিল্লাহ কলোনির পঞ্চায়েত কমিটির সাবেক সভাপতি অনু দাস ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "আমরা সম্প্রদায়ের লোকেরা এখানে দুই শত বছর ধরে বংশ পরম্পরা বসবাস করে আসছে। এই জায়গা ছেড়ে আমরা কোথাও যাবো না। নিজেরে বাসস্থান রক্ষায় আমাদের আন্দোলন ও আইনী লড়াই অব্যাহত থাকবে।"
তিনি আরও বলেন, "১৯৭১ সালের স্বাধীনতার যুদ্ধে আমাদের ১০ জন মানুষ শহীদ হয়েছে। যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি এখান থেকে উচ্ছেদ করা জন্য।”
উচ্ছেদের দিন (১২ জুন) তো আপনারা মেয়দের সঙ্গে দেখা করেছিলেন- তিনি কি বলেছিলেন জানতে চাইলে অনু দাস বলেন, “মেয়র তো আমাদের কথাই শুনতে চান নাই। তিনি বলেছেন-তোমরা এখানে অবৈধভাবে থাকো। উন্নয়নের জন্য ভাঙতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, “মেয়রের কথা হচ্ছে সিটি করপোরের্শনে যারা সাচিবিক আদেশে চাকরি করে, তারা ছাড়া কলোনির অন্য বাসিন্দা অবৈধ। অথচ আমরা এখানে ২ শত বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করে আসছি।”
বৈধভাবে কর্মরত হরিজন সম্প্রদায়ের কাউকে উচ্ছেদ করা হবে নাঃ সিটি মেয়র
“ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত সকল কর্মচারী, বিশেষত হরিজন সম্প্রদায়সহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর আবাসন নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধ পরিকর”- বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
ভয়েস অফ আমেরিকা দেওয়া লিখিত বক্তব্যে মেয়র আরও বলেন, “ইতোমধ্যে মিরনজিল্লা সুইপার কলোনির বাসিন্দাদের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত হরিজন সম্প্রদায়ের ৬০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে বাসা বরাদ্দ প্রদান ও পুনর্বাসন করেছি। বিগত ৪ বছরে আমরা ন্যায্যতা ও বাসা বরাদ্দ নীতিমালা অনুযায়ী ৬৭৮ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে বাসা বরাদ্দ দিয়েছি এবং আরও ৩৬৭ জনকে বরাদ্দ প্রদানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।”
“ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বৈধভাবে কর্মরত হরিজন সম্প্রদায়ের কাউকে উচ্ছেদ করা হয়নি”- বলে উল্লেখ করে মেয়র আরও বলেন, “উচ্ছেদ করা হবে না। কিন্তু বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে ও বিভিন্ন অজুহাতে ভূমিদস্যরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জমি দখল করে আছে। সেখানে তারা অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।...সেই প্রেক্ষিতে ভূমিদস্যুদেরকে সিটি কর্পোরেশনের জমি থেকে উচ্ছেদ করে আমাদের কর্মচারী এবং এলাকার জনগণের কল্যাণে সেখানে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ফলশ্রুতিতে, মিরনজিল্লায় বিদ্যমান ভঙ্গুর কাঁচাবাজারটি সম্প্রসারণে ২০১৬ সালেই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ ৮ বছর পর ঐতিহ্যবাহী ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের জনগণের কল্যাণে ও তাদের জীবনমান উন্নয়নে একটি আধুনিক কাঁচাবাজার নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাস্তবতার নিরিখে এবং সেখানকার বাসিন্দাদের চাহিদার প্রেক্ষিতেই কাঁচাবাজারটি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।”