অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ইরানে মৃত্যুদন্ড ও নারী বিরোধী অভিযানের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ


ফাইল- ইরানে সরকার বিরোধী বিক্ষোভের সময়ে ইস্তামবুলে একজন প্রতিবাদকারী একটি দড়ি ধরে আছেন এবং তাঁর গলায় লেখা আছে , “মৃত্যুদন্ডের অবসান হউক”। তুরস্ক, নভেম্বর ১৯,২০২২।
ফাইল- ইরানে সরকার বিরোধী বিক্ষোভের সময়ে ইস্তামবুলে একজন প্রতিবাদকারী একটি দড়ি ধরে আছেন এবং তাঁর গলায় লেখা আছে , “মৃত্যুদন্ডের অবসান হউক”। তুরস্ক, নভেম্বর ১৯,২০২২।

জাতিসংঘ মহাসচিবের একটি প্রতিবেদনে ইরানে গত বছর যে বিপুল সংখ্যক লোকের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় এবং দেশের হিজাব আইন লংঘন করার জন্য নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে যে সহিংস অভিযান চালানো হয়েছে তার নিন্দা করেছে।

মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের ডেপুটি হাই কমিশনার নাদা আল নাশিফ বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের সামনে প্রতিবেদনটি পেশ করেন। তিনি বলেন, “২০২৩ সালে কমপক্ষে ৮৩৪ ব্যক্তির মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। এই সংখ্যা পুর্ববর্তী বছরের চেয়ে ৪৩% বেশী”।

তিনি বলেন , “বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে মাদক বিষয়ক অপরাধের জন্য ২০২৩ সালে মৃত্যুদন্ড ৮৪% বৃদ্ধি পায় যা গত প্রায় এক দশকে সর্বোচ্চ”।

বেসরকারি সংগঠন ইরান হিউমান রাইটস বলছে মাদক সংক্রান্ত অভিযোগে গত বছর ৪৭১ জনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে বলে জানা যায়। তিনি বলেন এ বছরও মৃত্যুদন্ডের সংখ্যা বৃদ্দি পাবে, “এ পর্যন্ত ২০২৪ সালে ১০ জন নারীসহ অন্তত ২৪৩ জনের প্রাণদন্ড কার্যকর করা হয়েছ”।

আল-নাশিফ পরিষদকে জানান যে এই মৃত্যুদন্ডে সংখ্যালঘুরা অনানুপাতিক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে,”সব মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তদের মধ্যে ২০% হচ্ছে সংখ্যালঘু বালুচরা”।

তিনি বলেন, “লক্ষ্য করা গেছে ২০২৪ সাল থেকে শিশুদের মৃত্যুদন্ড সামগ্রিক ভাবে কমে এসেছে। এই প্রতিবেদনে ২০২৩ সালে দু’ জন শিশু অপরাধীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার তীব্র নিন্দা জানানো হয় এবং সরকারকে মৃত্যুদন্ড প্রদানের উপর অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানানো হচ্ছে”। তিনি আরও বলেন , “ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দেশব্যাপী প্রতিবাদের কারণে”গত বছর দুজনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়” যার ফলে মোট মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তদের সংখ্যা দাঁড়ালো নয়’এ।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “নির্যাতন চালিয়ে অপরাধ স্বীকার করানোর প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

মাহসা আমিনি

হিজাব ঠিক মতো না পরার কথিত অভিযোগে পুলিশের হাতে বন্দি ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনির ২০২২ সালে মৃত্যু দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় তোলে।

নারীদের হিজাব পরতে বাধ্য করার বিরুদ্ধে গণ-প্রতিবাদ যদিও শেষ হয়েছে, মহাসচিবের প্রতিবেদনে এটাও বলা হয়েছে যে হিজাব আইন প্রয়োগ এবং কঠোর করার ব্যাপারে সরকারের দৃঢ় ইচ্ছা এখনও থেকে গেছে ।

এই প্রতিবেদনে নারীদের পবিত্রতা ও হিজাব আইন সম্পর্কে অব্যাহত উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। “ওই আইন নারী ও মেয়েদের জন্য প্রকাশ্যে বাধ্যতামূলক হিজাব আইন প্রয়োগ করতে চায় এবং এটি মান্য না করার দায়ে কঠোর শাস্তি প্রযোগ করতে চায়”।

এই প্রতিবেদনে ইরানকে কঠোর দমনমূলক শাসকের দেশ বলে বর্ণনা করা হয়েছে যারা দমন ও ভয় দেখিয়ে তাদের লোকজনকে শাসন করে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে অন লাইন ও অফ লাইনে সুশীল ও গণতান্ত্রিক স্থান কঠোর ভাবে সীমিত; তথ্যের নাগাল পাওয়া কঠোর ভাবে সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত যেমন, “সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এবং সাংবাদিক, লেখক এবং শিল্পিদের তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়”।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে ইরানের অর্থনৈতিক সংকট একতরফা চাপ, সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থার কারণে পর্যদূস্ত হয়েছে। আর তার ফলে, “বসবাসের অবস্থা এবং স্বাস্থ্য, খাদ্য ও পানির প্রাপ্তির সমস্যাও দেখা দিয়েছে”

আল নাশিফ বিচারকদের প্রতি সরকারের এই নির্দেশনাকে স্বাগত জানান যে “তারা যেন তাদের সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের প্রতি (ইরানের) দায় দায়িত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করেন”।

তথ্য অনুসন্ধানী মিশন

ডেপুটি হাইকমিশনার ইরানের বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধানী মিশন এবং ইরানে মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশেষ র‌্যাপটিয়ারের সঙ্গে “সর্বাত্মক সহযোগিতা” করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। উভয়ই ইরানে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য নিয়োজিত।

জেনেভায় জাতিসংঘ মিশনে ইরানের রাষ্ট্রদূত আলী বাহরেইনি বলেন, “ইরান মানবাধিকার পরিষদের বাছাই করা নির্দেশগুলির বিরোধীতা করে যার মধ্যে রয়েছে বৈরি ভাবাপন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত, “মিথ্যা ও বানোয়াট প্রতিবেদন”।

তিনি বলেন, “ এ ধরণের প্রাক-বিচারিক ধারণার সঙ্গে মানবাধিকারের উন্নয়ন ও সংরক্ষণের কোন সম্পর্ক নেই এবং তা মানবাধিকার মূল্যবোধের এবং তার কাঠামোর বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য ক্ষতিকর। তিনি আরও বলেন , “ সত্যিকারের মানবাধিকারের উন্নয়ন হতে পারে সহযোগিতার মাধ্যমে, সংঘাতের মাধ্যমে নয়”।

ইরানে মৃত্যুদন্ডের ব্যবহারের ব্যাপারে মহাসচিবের সমালোচনা এবং তা বন্ধ করার জন্য তার আহ্বানকে ইরানি দূত নাকচ করে দেন। তিনি বলেন হত্যা, বড় ধরণের মাদকদ্রব্য পাচার এবং সন্ত্রাসী অপরাধের জন্য ইরান এ ধরণের শাস্তি প্রয়োগ করে থাকে। এগুলি গোটা সমাজের নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে”।

পরিশেষে তিনি বলেন যে আগামি সপ্তাহের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে “ জনগণের কন্ঠ আবারও প্রমাণ করবে” যে ইরান কঠোর ভাবে গণতন্ত্রকে উন্নীত করে।

XS
SM
MD
LG