এ সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে চীন আফ্রিকার ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলির কর্মকর্তাদের জন্য সেমিনার ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে এবং এর লক্ষ্য হচ্ছে একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং’এর বৈশ্বিক মতবাদকে তুলে ধরা।
শি’র শাসনের একটি মূল স্তম্ভ হচ্ছে বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়াটিভ (বিআরআই) । এটি একটি ব্যাপক অবকাঠামোগত প্রকল্প যাতে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে চীন বিপুল ঋণ দিয়ে সেই দেশগুলিতে চীন নিজের প্রভাব বিস্তৃত করে।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক একটি চিন্তক গোষ্ঠী বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যাতে চীনের বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের শত শত প্রকাশ্য নথিপত্রে আফ্রিকা,ল্যাটিন আমেরিকা এবং তার বাইরেও বিআরআই অংশীদারদের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ও শি’র চিন্তাধারাকে উত্সাহিত করার প্রচেষ্টার কথা বিস্তারিত বলা হয়েছে।
অ্যাটলান্টিক কাউন্সিলের প্রতিবেদক অনাবাসিক ফেলো নিভা ইয়াউ লিখেছেন, এই সব নথিপত্র “(চীনের) কর্তৃত্ববাদী মডেল যে সফল উন্নয়নের নীল নকশা হতে পারে এবং অন্যরাও তা অনুসরণ করতে পারে বলে পরিস্কার ভাবে তুলে ধরেছে”।
এই সব উদ্যোগের তালিকার মধ্যে রয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলির মন্ত্রী পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাদের জন্য আয়োজিত একটি সেমিনার যার লক্ষ্য ছিল “ চীনের শাসন পদ্ধতির আন্তর্জাতিক প্রভাবকে” সম্প্রসারিত করা।
ঐ প্রতিবেদনে তুলে ধরা মন্ত্রনালয়ের নথি অনুযায়ী ২০২১ সালের জুনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে , “জাতীয় শাসন ব্যবস্থায় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং’এর চিন্তাধারা, চীনের বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা,রাজনৈতিক জীবন এবং মূল নীতিগুলির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া তুলে ধরা হয়”।
কভিড -১৯ মহামারির সময় যখন কোটি কোটি মানুষ কঠোর ও দীর্ঘ লকডাউনে ছিলেন তখনও তিনি “সামজিক চলাচল ও ব্যবস্থাপনায়” চীনের প্রচেষ্টাকে তুলে ধরেন।
নগর পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত আফ্রিকার কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে দেয়া একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচী চীনের পরিব্যাপ্ত নজরদারি ব্যবস্থার প্রতি আলোকপাত করে।
ঐ প্রতিবেদনে তুলে ধরা নথিপত্র অনুযায়ী এই কর্মসূচীটি শহরগুলিতে,“তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে জনগণের সুরক্ষা” ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে নেয়া হয়।
পৃথিবীতে যে সব দেশে নজরদারি করা হয় , চীন হচ্ছে তাদের মধ্যে অন্যতম সবচেয়ে বেশি নজদারির আওতাভুক্ত সমাজ। সমালোচকরা বলেন মুখ চেনার প্রযুক্তি সেখানে প্রতিদিনের আইন প্রয়োগ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দমন-পীড়নসহ প্রায় সবক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়।
এই প্রতিবেদন সম্পর্কে এ এফপি’র এক প্রশ্নের জবাবে বেইজিং ‘এর পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় শুক্রবার বলে যে “ চীন স্বাধীন ভাবে নিজেদের উন্নয়নের পথ ও সামাজিক নিয়ম বেছে নিতে সকল দেশের জনগণকে সম্মান দেখিয়েছে”। বিবৃতিতে আরও বলা হয় “আমরা আমাদের নিজেদের পথ অন্য দেশগুলোর উপর কখনও চাপিয়ে দেইনি এবং দিবো না”
আটলান্টিক কাউন্সিলের প্রতিবেদনে বিআরআইভুক্ত দেশগুলির কর্মকর্তাদের জন্য একটি কোর্সের বিস্তারিত তুলে ধরা হয় যাতে চীনের সংবাদ মাধ্যম ও অপপ্রচার তত্পরতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
ঐ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা নথিতে বলা হয়েছে, “নতুন সংবাদ মাধ্যম চলে আসায় কভিড -১৯ ‘এর প্রেক্ষাপটে চীনের অভিজ্ঞতার বহুমাত্রিক ও সার্বিক উপস্থাপনার মাধ্যমে সেমিনারটিতে চীনের সংবাদ মাধ্যমের সংযুক্তি ও নতুন তত্ব তুলে ধরা হয়”।
ঐ কোর্সে “সংবাদ লেখার, অনুষ্ঠান তৈরি করা এবং নতুন মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রযোজ্য বিষয় বস্তু সংগ্রহের” বিষয়টিও দেখা হয়।
ঐ নথি অনুযায়ী সকল কর্মসূচিই তুলে ধরেন শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত শীর্ষ চীনা প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তারা ।
প্রতিবেদনের লেখক বলেন চীন,“উন্নয়নশীল দেশগুলিতে কর্তৃত্ববাদী সরকারকে তুলে ধরতে কঠোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে”।